সোহেল চৌধুরী হত্যা : শেষ দিনেও দাখিল হয়নি কেস ডকেট

আগের সংবাদ

ভয়াবহ বন্যায় দিশাহারা মানুষ

পরের সংবাদ

পাকিস্তান মহাসংকটে : জ্বালানিমূল্যে ফের ঊর্ধ্বগতি রুপির ঐতিহাসিক দরপতন

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : নজিরবিহীন সংকটে রয়েছে বিদেশি ঋণের দায়ে জর্জরিত পাকিস্তান। অর্থনীতির প্রাণটুকু জিইয়ে রাখার চেষ্টায় দেশটির শাহবাজ সরকার আরেক দফা পেট্রল, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে। প্রতি লিটার পেট্র্রল ২৩৪, ডিজেল ২৬৩ আর কেরোসিন ২১২ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে এর পাশাপাশি আরো এক দফা দরপতন ঘটেছে পাকিস্তানি রুপির। গতকাল বৃহস্পতিবার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এক মার্কিন ডলার পেতে জমা দিতে হয় ২০৭ পাকিস্তানি রুপি। দেশটির ইতিহাসে এমন পতন এর আগে কখনই ঘটেনি। এ পরিস্থিতিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, শ্রীলঙ্কায় পর্যবসিত হওয়ার পথে রয়েছে পাকিস্তান। সূত্র দ্য নেশন পাকিস্তান, ডন, হিন্দুস্থান টাইমস।
গত বুধবার রাওয়ালপিন্ডিতে পিটিআইয়ের এক অনুষ্ঠানে দেশটির ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে এই সতর্কবার্তা দেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, পাকিস্তানের রপ্তানি ১০ শতাংশ কমে গেছে। স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বেরিয়ে গেছে ৭০০ বিলিয়ন রুপি। পাকিস্তানের বর্তমান সরকারের তীব্র ভর্ৎসনা করে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতাসীনরা পাঞ্জাবের ২০টি আসনে আসন্ন উপনির্বাচনে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) সহায়তা চায়। দেশের বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন হতে পারে না। পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি যখনই লং মার্চের ডাক দেব, তখনই আপনাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আল্লাহ কাউকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকার অনুমতি দেননি। যারা সঠিক পথে আছেন আপনাকে তাদের পাশে অথবা অন্য পক্ষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
পিটিআইয়ের এই চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের দুর্ভোগের মুখোমুখি হয়েছে। কৃষকের ফসল হুমকিতে রয়েছে। কিন্তু মাফিয়ারা সর্বত্রই সরকারের রিটকে চ্যালেঞ্জ করছে এবং ক্ষমতাসীনরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। জনগণের ওপর আরেক দফা বোঝা চাপিয়ে এক লাফে পেট্রলের দাম বাড়ানো হয়েছে ২৪ রুপি। ডিজেলের দামও ফের বেড়েছে ৫৯ রুপি। পাশাপাশি পাকিস্তানে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কেরোসিনের দামও। তবে

সংকটের জন্য ইমরান খান সরকারের নেয়া নীতিকেই দায়ী করছে দেশটির বর্তমান সরকার। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল বলেছেন, ইমরান সরকারের নীতির কারণেই অর্থনীতির এই বেহাল দশা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভর্তুকি দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে পেট্রলের দাম কমিয়েছিলেন। বর্তমান সরকারকে তার খেসারত দিতে হচ্ছে। পাকিস্তান প্রতি লিটার পেট্রলে ২৪ দশমিক ০৩ রুপি, ডিজেলে ৫৯ দশমিক ১৬ রুপি, কেরোসিনে ৩৯ দশমিক ৪৯ রুপি এবং লাইট ডিজেলে ৩৯ দশমিক ১৬ রুপি ভর্তুকি দিচ্ছে। গত মে মাসে জ্বালানি তেল বিক্রিতে যে ক্ষতি হয়েছে, তার পরিমাণ ১২০ বিলিয়ন রুপি ছাড়িয়ে গেছে- যা বর্তমান সরকারের ব্যয়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি।
এদিকে আগের সব রেকর্ড ভেঙে বৃহস্পতিবার আরেক দফা নেমেছে পাকিস্তানি রুপির মান। বর্তমানে পাকিস্তানের মুদ্রাবাজারে ২০৭ রুপির বিনিময়ে মিলছে ১ ডলার। খোলা বাজারে নিচ্ছে ২০৮ দশমিক ৫ রুপি। ডন বলছে, আইএমএফ ২০১৯ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি ঋণচুক্তি করে। সে অনুযায়ী, পাকিস্তানকে ৩৯ মাসের কিস্তিতে ৬০০ কোটি ডলার ঋণ দানের অঙ্গীকার করে আইএমএফ। তবে প্রধান শর্ত, জ্বালানি খাতে কোনো ভর্তুকি দেয়া যাবে না। কিন্তু পিটিআই সরকার ২০২১ সালের শুরুর দিকে জ্বালানিতে ভর্তুকিবিষয়ক শর্ত ভঙ্গ করায় ৩০০ কোটি ডলার ঋণ ছাড়ের পরই সেই প্রকল্প থামিয়ে দেয় আইএমএফ। গত এপ্রিলে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারান ইমরান খান, নতুন প্রধানমন্ত্রী হন দেশটির সাবেক বিরোধী নেতা শেহবাজ শরিফ। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় এসেও পূর্ববর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখায় আইএমফ ঋণ প্রকল্পের অচলাবস্থা কাটেনি। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্ববাজারে বাড়ছে জ্বালানির দাম। স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান পরিস্থিতিতে জ্বালানির ওপর ভর্তুকি প্রত্যাহার করা কঠিন সরকারের জন্য।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়