সোহেল চৌধুরী হত্যা : শেষ দিনেও দাখিল হয়নি কেস ডকেট

আগের সংবাদ

ভয়াবহ বন্যায় দিশাহারা মানুষ

পরের সংবাদ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন : নিজ শর্তেই বিশ্বের সঙ্গে কাজ করে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে তার ‘নিজ শর্ত’ মতেই কাজ-কারবার করে থাকে এবং ঢাকা দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক অর্থনৈতিক স্বার্থের অংশীদারত্বে বিশ্বাসী। তিনি বলেন, আমরা এখন আর কারো দয়ার পাত্র নই, বিশ্বের সঙ্গে আমাদের নিজ শর্তেই কাজ করি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠানটির আয়োজনে ‘পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতি : বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষা’ শীর্ষক এক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নে বিশ্বাস করে এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ঘটনা ও সেই ঘটনার নায়কদের কর্মকাণ্ডকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি বলেন, যখন আমরা পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষা নিয়ে আলোচনা করছি, তখন আমাদের সামনে ভেসে ওঠে প্রায় অপরিসীম পরিসরের এক দৃশ্যপট, যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে অসংখ্য অনুঘটক অনবরতই পরিবর্তিত হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যাদের ক্ষতি করার ইচ্ছে নেই এবং যারা নিজ স্বার্থে ক্ষতিকর এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের সম্পদ ব্যবহার করার ইচ্ছে রাখে না- ঢাকা তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই সম্পৃক্ত হতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এভাবেই বাংলাদেশ তার স্বার্বভৌম জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করে।’
ড. মোমেন বলেন, কৌশলগত অবস্থান, সমৃদ্ধ আনুপাতিক জনসম্পদ ও শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ বাজার- বাংলাদেশকে দাবার বোর্ডের এক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের আসনে বসিয়ে দিয়েছে। আমাদের পছন্দই আমাদের চালিকাশক্তি। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে আমাদের বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুশাসন বাক্য রয়েছে- ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়।’ ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে আমাদের দেশ সেই লক্ষ্যের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু কীভাবে ও কখন এই লক্ষ্য অর্জিত হবে, তা অপ্রকাশিত রয়েছে। বিশেষত : ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উত্তরণের যে সরল লক্ষ্য ব্যাহত করার মতো জটিলতাও তো রয়েছে। তিনি বলেন, বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই), এপেক, কোয়াড, আউকুস ও সাম্প্রতিক ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক কাঠামো’ (আইপিইএফ) এর মতো অনেক নতুন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব বিকশিত হচ্ছে।
ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশে এখন বিশ্বে ৪০তম ও দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ। আমাদের থেকে একমাত্র ভারত এগিয়ে আছে। তিনি বলেন, আমাদের শাসন ব্যবস্থা, অর্থনীতি ও পরিবেশগত লক্ষ্যের সঙ্গে যেসব বৈশ্বিক সংগঠনগুলোর মিল রয়েছে, তাদের সঙ্গেই কাজ করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, আমরা বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের মেধা ও দক্ষ হাতের সংযোগ ঘটাতে চাই। বাংলাদেশ তার সর্বোত্তম উপায়ে শিল্প ও ভোক্তা উভয় ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে সেবা দিতে আগ্রহী।
সেমিনারের উদ্বোধন পর্বে সভাপতিত্ব করেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান।
সেমিনারে ওয়ার্কিং সেশনে পরিবর্তিত পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার দৃষ্টিকোন বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রাশেদুজ্জামান, বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহমেদ এবং বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ নিয়ে বিআইআইএসএসের গবেষক রাজিয়া সুলতানা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির ওপর বিআইআইএসএসের গবেষক এ এস এম তারেক হাসান শিমুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী সেমিনার সঞ্চালনা করেন।

কাজী ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, বৈশ্বিক পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও দেশের উন্নয়নসহ মৌলিক জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে লক্ষ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। বৈশ্বিক এ পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য রেখে রপ্তানি-নির্ভর বাজার ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন প্রবহমান রাখার বিষয়গুলোর ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি। এজন্য বাংলাদেশকে খাদ্য ও পরিবেশগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভ্যন্তরীণ খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধি এবং যথাযথভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান তার বক্তব্যে বিশ্ব ব্যবস্থার পরিবর্তনশীলতার ধরন সম্পর্কে তুলে ধরেন এবং শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিরাজমান রেষারেষি কমিয়ে আনতে উদীয়মান বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, পরিবর্তনশীল বিশ্বব্যবস্থার এসব অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার ‘সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারো প্রতি শত্রæতা নয়’ এই কূটনীতির মূলনীতি অবলম্বন করে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও অন্যের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতি বজায় রেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক লালন করছে। যদিও বাংলাদেশ একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি বজায় রাখছে, তথাপি বৈশ্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির কৌশলগত সামঞ্জস্য বিধান করা প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়