সোহেল চৌধুরী হত্যা : শেষ দিনেও দাখিল হয়নি কেস ডকেট

আগের সংবাদ

ভয়াবহ বন্যায় দিশাহারা মানুষ

পরের সংবাদ

কী ঘটেছিল সেই ৪৫ মিনিটে

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, কুমিল্লা থেকে ফিরে : সরজমিন কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে ফলাফল ঘোষণা কেন্দ্রে অবস্থান করে ভোরের কাগজের এই প্রতিবেদক দেখেছেন, দিনভর ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোট গণনা শুরু করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মোট ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০১টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন তিনি। এরপর ফলাফল ঘোষণায় কিছুটা দেরি হচ্ছিল। একপর্যায়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মাইকে ঘোষণা করেন, ৪টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা বাকি আছে। এসব কেন্দ্রের ফলাফল তার হাতে এসে পৌঁছায়নি। তিনি তখন কাউন্সিলর প্রার্থীদের ফলাফল ঘোষণার কথা বলেন। তার এ ঘোষণার পর মিলনায়তনে উপস্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর অনুসারীরা হইচই শুরু করেন, স্লোগান দেন। তারা এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মেয়র প্রার্থীর ফলাফল ঘোষণার দাবি জানান। রিটার্নিং কর্মকর্তা আশ্বাস

দেন, মেয়র প্রার্থীর ফলই আগে ঘোষণা করা হবে।
এরপরই ফলাফল ঘোষণা কেন্দ্রে উপস্থিত হন গত দুবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। দর্শক সারিতে বসা সাক্কুকে ঘিরে তখন ফটোসেশন করতে ভিড় করেন অনেকেই। ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে নৌকার স্লোগান দিয়ে ফলাফল ঘোষণা কেন্দ্রে আসেন একদল তরুণ। এরপর রাত ৮টা ৪৫ মিনিট থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দুই মেয়রের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি স্লোগান, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশকে লাঠিচার্জ পর্যন্ত করতে হয়। এ সময়ে বাকি ৪টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। এ উত্তেজনা আশপাশের রাস্তায়ও ছড়িয়ে পড়ে। ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত মিলনায়তনের সামনে নৌকার হাজারো সমর্থক রাস্তা দখল করে স্লোগান দিতে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে বাকি থাকা ৪টি কেন্দ্রের ফল আলাদা করে ঘোষণা না করে সাড়ে ৯টার দিকে মোট ১০৫টি কেন্দ্রের ফলাফল একসঙ্গে ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতকে ৩৪৩ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
রিটার্নিং অফিসারের রেজাল্ট হেরফের করার সুযোগ নেই : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল পাল্টানোর কোনো সুযোগ ছিল না বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর। কুসিকের ৪টি কেন্দ্রের ফলাফল পরিবর্তনের অভিযোগ প্রসঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ভোট শেষে ৪টি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কারচুপি করার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোট গণনার পর তা ঘোষণা করেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। আর সেই রেজাল্ট শিটে প্রার্থীর এজেন্টদের স্বাক্ষর থাকে।
মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশন তো সরাসরি নির্বাচন পরিচালনা করে না। নির্বাচন পরিচালনা করে রিটার্নিং অফিসার। ভোটগ্রহণ করেন প্রিসাইডিং অফিসার। তারা ফল প্রকাশ করে কেন্দ্রে ঘোষণা দেন। সেখানে বাইরে টানিয়ে দেন। সেখানে প্রার্থীর এজেন্টদের স্বাক্ষর থাকে। তাদের উপস্থিতিতেই কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা করেন প্রিসাইডিং অফিসার। একটা কপি তাদের দেন। একটা মালপত্রসহ পাঠান রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে। আরেকটা কপি রিটার্নিং অফিসারের কাছে থাকে। রিটার্নিং কর্মকর্তা শুধু একীভূত করেন। তার কাজ হলো কেবল পড়ে শোনানো। তাহলে তিনি কীভাবে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন করবেন? সে সুযোগ কি আছে?
তিনি বলেন, রিটার্নিং অফিসার কেবল বেসরকারি ফলাফলে যোগ-বিয়োগ ঠিক আছে কিনা, স্বাক্ষর আছে কিনা, ইভিএমের সঙ্গে মিল আছে কিনা দেখেন। এরপর আমাদের কাছে পাঠান। আমরা গেজেট প্রকাশের আগে দেখি, সেখানে ভুল থাকলে আমরা আবার ফেরত পাঠাই। রিটার্নিং অফিসারের কাছে রেজাল্ট হেরফের করার সুযোগ নেই। কারণ প্রার্থীর এজেন্টদের কাছে কপি আছে। এরপরও কারো সন্দেহ থাকলে ট্রাইব্যুনালে যেতে পারবেন। কোনো সন্দেহ থাকলে পাসওয়ার্ড দিয়ে ইভিএম খুলে দেখা যাবে।
অনেকে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অপপ্রচার চালায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১০৫টি কেন্দ্রের রেজাল্টই ঠিক আছে। এটা আসলে আগে দেখা হয় ঠিক আছে কিনা। ১০১টি কেন্দ্রের রেজাল্ট দেয়ার পর প্রার্থীর সমর্থকরা এসে পরিবেশ নষ্ট করে ফেলে। রেজাল্ট ঘোষণা যে দেবেন, কার কথা সে শুনে। তাই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল, রিটার্নিং অফিসার এসপি, ডিসিকে ফোন করেন, আমাদের জানান। তারপর পরিবেশ সামাল দেন তারা। না হলে তো বলত, কী ঘোষণা দিয়েছে তা আমরা শুনিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়