আবহাওয়ার পূর্বাভাস : অপরিবর্তিত থাকতে পারে দিন-রাতের তাপমাত্রা

আগের সংবাদ

কুমিল্লায় ভালো ভোটের পর ফলাফল নিয়ে উত্তেজনা : রিফাতকে জয়ী ঘোষণা > অজ্ঞাত ফোনের পর হামলা > মনগড়া ফল : অভিযোগ সাক্কুর

পরের সংবাদ

প্রথম টেস্টেই ধাক্কা খেল ইসি

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : প্রথম টেস্টেই ধাক্কা খেল ইসি। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের ‘অসহায়ত্ব’ প্রকাশে প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে। ইসির দুর্বলতা নিয়ে চলছে নানান সমালোচনা। ইসির ‘এসিড টেস্ট’ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনাকে ইসির ব্যর্থতা হিসেবেই দেখছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, সিইসির অসহায়ত্ব প্রকাশ ভালো লক্ষণ নয়। বরং আরপিও অনুযায়ী, সংসদ সদস্যকে সাজা দেয়ার মতো সক্ষমতা প্রকাশের দৃষ্টান্ত স্থাপনের সুযোগ ছিল তাদের। এদিকে ইসির ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুও। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে এলাকা ত্যাগ করতে বলা তার মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
‘কৌশলে’ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়ায় কুমিল্লা-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে এলাকা থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছিল ইসি। ৮ জুন এলাকা ছাড়ার ইসির চিঠি পাওয়ার পরও তিনি এলাকা ছাড়েননি। উল্টো আদালতে রিট আবেদন দায়ের করে দিব্যি নগরীর মুন্সেফপাড়ার বাসায় দিনযাপন করেছেন; দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা সভা করছেন। দলীয় কার্যালয়েও যাচ্ছেন। ইসিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কুসিক নির্বাচনী এলাকায় এমপি বাহার কীভাবে এ কয়েকদিন থাকলেন, এ ইস্যু গড়িয়েছে ভোটের মাঠ থেকে নির্বাচন কমিশন ও সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত। ইসির চিঠিতে এমপি বাহারকে কুসিক এলাকা ছাড়তে নির্দেশ দেয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এমপি বাহার এখনো এলাকায় আছেন এবং ভোটের দিনও এলাকায় থাকবেন বলে তার সমর্থকরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন। বাহার ইস্যু নিয়ে দুই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার ভোটের মাঠ গরম করেছেন। তাদের দাবি ছিল, কুসিকের ভোটের মাঠ ছাড়তে হবে এমপি বাহারকে। উল্টো সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল গত রবিবার সংসদ সদস্যকে নিয়ে কমিশনের অসহায়ত্বের কথা বলেছেন। এমপি বাহার এলাকা না ছাড়লে তাদের কিছুই করার নেই বলে মন্তব্য করায় এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে সারাদেশে।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন : টিআইবির (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ইসি সাংবিধানিক ক্ষমতার সফল প্রয়োগ করতে প্রথমেই ব্যর্থ হয়েছে। এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিষয়ে ইসির সৎসাহসের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কুমিল্লা থেকে এমপি বাহারকে সরাতে তার বিরুদ্ধে মামলা করে আরপিও অনুযায়ী সাজা দেয়ার মতো সক্ষমতা প্রকাশের দৃষ্টান্ত স্থাপনের সুযোগ ছিল। তবে এটা না করায় দেশবাসীর মনে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তাদের হাতে অগাধ ক্ষমতা দেয়া হলেও প্রচারণা থেকে এমপি বাহারকে তারা সরাতে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে, এটা ভালো লক্ষণ নয়। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ইসি তার সাংবিধানিক ক্ষমতা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে। কমিশন যখন তাদের আইন-কানুন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে না পারে তখন ভোটাররা আশাবাদী হতে পারে না।
এমপি বাহারের বিষয়ে নমনীয়তা ইসির দুর্বলতা প্রকাশ মন্তব্য করে সাবেক ইসি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে তাদের প্রস্তুতি, ব্যবস্থাপনা ভালোই দেখছি। তবে এমপি বাহার ইসির নির্দেশনা না মেনে নেয়ায় বিষয়টা বর্তমান ইসির কিছুটা দুর্বলতার প্রকাশ। কমিশন এ বিষয়ে তার সাংবিধানিক ক্ষমতার কঠোর প্রয়োগ করতে পারত। তাহলে ইসি তাদের সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে প্রথমেই জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারত। তবে এ এমপির ওপর ইসির নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে আমি শুনেছি।
একটা নির্বাচন দিয়ে কোনো কমিশনের আস্থা বা আস্থাহীনতা প্রমাণ করা যায় না মন্তব্য করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, এখন পর্যন্ত নতুন সিইসি আউয়াল কমিশন যেসব কাজ করে যাচ্ছে তা প্রশংসার যোগ্য। যদিও এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে তারা এলাকা ছাড়ার নোটিস দিলেও তাকে তা মানতে বাধ্য না করতে পারা ইসির জন্য কিছুটা দুর্বলতা বলা চলে। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, নির্বাচন কমিশন তো প্রথমেই হোঁচট খেল। তিনি নতুন সিইসি, তিনি তো প্রথমেই ধাক্কা খেল, তিনি পারবেন না।
এমপিকে এলাকা ত্যাগ করতে বলা মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল : এদিকে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উপলক্ষে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন স্বেচ্ছায় রক্তাদাতাদের এক অনুষ্ঠানে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারকে নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রথমত আমার প্রশ্ন হচ্ছে যিনি ওই এলাকার সংসদ সদস্য, এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা এবং ওই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটার, তাকে নির্বাচন কমিশন এলাকা ছাড়ার কথা বলতে পারে কিনা? এটি কি তার মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ নয়? আমি মনে করি, এভাবে তাকে (বাহার) এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে তার মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, এমন হলে তো জাতীয় নির্বাচনের সময় আমাদের সবাইকে ঢাকা শহর ত্যাগ করতে হবে। পৃথিবীর কোথাও এমন নিয়ম নেই। আগে ইসি কি ভুল করেছে সেটি নির্ণয় করা জরুরি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়