আবহাওয়ার পূর্বাভাস : অপরিবর্তিত থাকতে পারে দিন-রাতের তাপমাত্রা

আগের সংবাদ

কুমিল্লায় ভালো ভোটের পর ফলাফল নিয়ে উত্তেজনা : রিফাতকে জয়ী ঘোষণা > অজ্ঞাত ফোনের পর হামলা > মনগড়া ফল : অভিযোগ সাক্কুর

পরের সংবাদ

ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষের পর ২১ জুন পর্যন্ত বন্ধ চুয়েট

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : ছাত্রলীগের দুগ্রুপের অভ্যন্তরীণ বিরোধে উত্তেজনার জেরে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ¯œাতক পর্যায়ের ক্লাস-পরীক্ষা ২১ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ¯œাতক ছাত্রদের গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৫টার মধ্যে এবং ছাত্রীদের আজ সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিকালে সিন্ডিকেটের জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এর আগে দুপুরে চুয়েট প্রশাসন আগামী ৬ জুলাই পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। বিকালে সিন্ডিকেটের সভায় বন্ধের মেয়াদ কমিয়ে আনা হয়েছে। ক্যাম্পাসে অবস্থানরত আবাসিক হলের ছাত্ররা এরই মধ্যে হল ছেড়ে দিয়েছেন।
তবে শিক্ষার্থীদের অনেকের দাবি- চুয়েট ক্যাম্পাসে এমন কোনো বড় ঘটনা ঘটেনি যে, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ এবং আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিক ও কঠোরভাবে চাইলেই বিবদমান দুগ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পারতেন বলে মনে হয়। তবে চুয়েট কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ঝুঁকি না নিয়েই ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের ঘোষণা দেয় গতকাল। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে চুয়েট উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের

আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
চুয়েটের শিক্ষার্থী, পুলিশ ও চুয়েট প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চলছিল। একটি গ্রুপ বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী, অপর গ্রুপটি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। অথচ চুয়েট চট্টগ্রাম নগরীতেও অবস্থিত নয়। ভৌগোলিকভাবে এটি রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সীমান্তবর্তী উপজেলা রাউজানের মধ্যে অবস্থিত। আওয়ামী লীগের যে সাংগঠনিক জেলা রয়েছে সে হিসেবে চুয়েটের অবস্থান হচ্ছে উত্তর চট্টগ্রামের মধ্যে। কিন্তু চুয়েটে উত্তর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের যারা নেতৃত্ব দেন তাদের তেমন কোনো গ্রুপ নেই। অথচ সেখানে চট্টগ্রাম নগরভিত্তিক দুই আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারীদের মধ্যে বিভেদ ও আধিপত্যকে ঘিরে নানা ধরনের সংঘাত লেগে যায় ক্ষণে ক্ষণে। আর সেজন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চুয়েট শেষ বর্ষের এক শিক্ষার্থী ভোরের কাগজের কাছে গতকাল মঙ্গলবার আক্ষেপ করে বলেছেন, আজকেই (মঙ্গলবার) আমাদের শেষ পরীক্ষা ছিল, পরীক্ষা দিতে পরীক্ষার হলেও গেলাম আমরা। কিন্তু গিয়ে শুনি পরীক্ষা হবে না। ওই শিক্ষার্থী বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তো প্রায়ই এর চেয়েও বড় বড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, কই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তো কথায় কথায় বন্ধ ঘোষণা করা হয় না। আমাদের চুয়েট প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি যদি একটু কৌশলে বিষয়টি সামাল দেয়ার চেষ্টা করতেন তাহলে তা করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে বন্ধ করে দিলেন। চুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থী গত রবিবার থেকে গত সোমবার দিনে ও রাতে সংঘটিত ঘটনাবলিকে সংঘর্ষ না বলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, এসব বিষয় সমাধানের জন্য উভয়পক্ষকে ডেকে বসিয়ে সমাধানযোগ্য ছিল।
তবে চুয়েটে ছাত্রলীগের দুগ্রুপে বিরোধের জেরে গতকাল মঙ্গলবার একপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সকালে চুয়েট উপাচার্যের সভাপতিত্বে এক জরুরি সভায় ¯œাতক পর্যায়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
চুয়েটের উপপরিচালক (জনসংযোগ) ফজলুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোরের কাগজকে জানিয়েছেন, এরপর মঙ্গলবার বিকালে চুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আগামী ২১ জুন পর্যন্ত আবাসিক হল, ক্লাস-পরীক্ষা সব বন্ধ থাকবে। এরপর ২২ জুন আবার যথারীতি সব কিছুই খুলে দেয়া হবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে।
গত রবিবার চুয়েটে ছাত্রলীগের দুগ্রুপে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে, যারা নওফেল ও নাছিরের অনুসারী। এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে তিনজন নিরীহ ছাত্র আহত হয়েছেন। এরপর থেকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে গত সোমবার রাতে ক্যাম্পাসে বেশ কিছু পটকা ফুটিয়ে নিজেদের আধিপত্য জাহির করতে চেয়েছে। গত সোমবার রামদা, হকিস্টিক নিয়ে মাথায় হেলমেট পরে কিছু তরুণ ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়। আবার রাতে ক্যাম্পাসে ককটেল ফুটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এতে করে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
চুয়েট পরিস্থিতি জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম এবং ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিমের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চুয়েটের উপপরিচালক (জনসংযোগ) ফজলুর রহমান বলেন, চুয়েট প্রশাসন বারবার চেষ্টা করেছেন বিবদমান গ্রুপগুলোকে একটি সমঝোতায় আনার জন্য। কিন্তু তারা তা না করাতে প্রশাসন বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাস বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চুয়েটের কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা বলেছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে সে তুলনায় এখন পর্যন্ত চুয়েটে তেমন কিছু হয়নি। চুয়েটের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি অর্থাৎ উপাচার্যসহ প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা যদি আন্তরিক ও কঠোর হন তাহলে এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এজন্য কথায় কথায় ক্যাম্পাস বন্ধ, পরীক্ষা বন্ধ এবং আবাসিক হল ত্যাগ করার আদেশ দিতে হয় না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়