মির্জা ফখরুল : খালেদার কিছু হলে দায় নিতে হবে সরকারকেই

আগের সংবাদ

কুমিল্লায় ইসির ‘এসিড টেস্ট’

পরের সংবাদ

সিদ্ধিরগঞ্জ রণক্ষেত্র : পুলিশ-‘বিহারি’ সংঘর্ষে আহত অর্ধশত

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও শর্টগানের গুলি করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। এতে পুলিশসহ অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে আদমজী এলাকার চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয়, নতুন বাজার ও বিহারি ক্যাম্পের পকেট গেট এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েকশ নারী-পুরুষ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন। গত শুক্রবার আদমজী জামে মসজিদের ভেতর পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনায় রবিবার রাত ১টা থেকে গতকাল সোমবার ভোর ৪টা পর্যন্ত বিহারি ক্যাম্পের ভেতর অভিযান চালায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ। অভিযানে ৩৫ থেকে ৪০ জনকে গ্রেপ্তার, অনেক নারী-পুরুষকে লাঞ্ছিত এবং ঘরের দরজা-জানালা ভাঙচুরের অভিযোগ আনেন বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দারা। এ ঘটনার প্রতিবাদে তারা থানা ঘেরাও করেন। এতে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চিটাগাংরোডে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে আদমজী ইপিজেডে প্রবেশ করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, সোমবার সকাল ৬টা থেকে থানার আশপাশে অবস্থান নেন স্থানীয় জনগণ। তারা আদমজী ইপিজেডের তিনটি প্রবেশপথে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। শ্রমিকদের ভেতরে ঢুকতে দিলেও অন্য গাড়ি ঢুকতে বাধা দিচ্ছিল তারা। সকাল ৮টার দিকে বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ঘেরাও এবং প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা সড়কের উপর কাঠের টেবিল, চৌকি ফেলে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন।
এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, অভিযানে যদি কোনো নিরাপরাধ মানুষ আটক হয়ে থাকে আলোচনার মাধ্যমে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা বলেন সবাইকে এখনই ছেড়ে দিতে হবে। পরে পুলিশের অনুরোধে বিহারি ক্যাম্পের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু তার কথা না শুনে তারা পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়ান। সেøøাগান দেন মেরে ফেলব, কতল করব বলে। তখন পুলিশ বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে। এরপরই পুলিশের ওপর ঢিল ছোড়েন বিক্ষোভকারীরা। সকাল ৯টার দিকে অ্যাকশনে যায় পুলিশ ও র‌্যাব। লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এ সময় পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বিক্ষোভকারীরা। উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় পুলিশ-র‌্যাবকে লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সকাল সোয়া ৯টার দিকে সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু করে। পরে নতুন বাজার ও বিহারি ক্যাম্পের পকেট গেট এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্মুহু শর্টগানের গুলি ও টিয়ারশেলের শব্দে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঘটনাস্থল। বিক্ষোভকারীরা বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশের উপর। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে নতুনবাজার পকেট গেট এলাকায় ব্যারিকেট দিয়ে রাখেন জনতা। ফলে পুলিশ ক্যাম্পের ভেতর ঢুকতে পারেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিহারি জানান, ক্যাম্পের ভোলা মেম্বার হ্যান্ড মাইকিং করে লোকজন জড়ো করেন। ক্যাম্পের লোকজনকে জড়ো করে থানার দিকে পাঠান। তাকে থানায় ডাকা হলেও তিনি যাননি। তারা আরো জানান, পুলিশের মামলায় যারা আসামি হয়েছে তাদের নাম দিয়েছেন পুলিশ সোর্স ক্যাম্পের ভুট্ট, নাসিম মাস্টারের ভাই তাসলিম, ভোলা মেম্বার ও শাহজাদা। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এমন মানুষের নামও তারা পুলিশকে দিয়েছে।
বিহারি ক্যাম্পের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন জানান, শুক্রবার মসজিদের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। রবিবার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক পুলিশ ক্যাম্পের ভেতর অভিযান চালায়। পুলিশ অনেক নারী-পুরুষকে মারধর করেছে। ঘটনার সময় মসজিদে যাননি এবং হামলায় ছিল না এমন লেকদেরও গ্রেপ্তার করেছে তারা। এ ঘটনায় ক্যাম্পের অধিবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা আমার বাসায় এসে দরজা-জানালায় আঘাত করেন। পরে আমি সকাল ৬টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসিকে ফোন করি। কিন্তু ফোন রিসিভ না হওয়ায় আমি থানায় গিয়ে বিষয়টি ডিউটি অফিসারকে জানিয়ে চলে আসি।
এর মধ্যে সকাল সোয়া ৬টার দিকে আদমজী ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার আমাকে ফোন দিয়ে জানান, তাদের গাড়ি ভেতরে যেতে পারছে না। তখন আমি ঘটনাটি তাকে অবহিত করি। তিনি হয়তো সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসিকে ঘটনা জানিয়েছেন। পরে ওসি আমাকে ফোন দিয়ে থানায় আসতে বলেন। সকাল ৭টার একটু আগে আমি থানায় যাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি আমার ক্যাম্পের অনেক মানুষ থানার সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। থানার ওসি তখন বলেন, রাতের অভিযানে কোনো নিরাপরাধ লোক আটক হয়ে থাকলে আলোচনার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু ক্যাম্পের লোকজনের দাবি, সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে। এ সময় আমি ক্যাম্পের লোকজনকে অনুরোধ করে বলি, আইনের বিষয় আছে, যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের তো ছাড়বে না। যারা নিরাপরাধ তাদের ছেড়ে দেবে বলছে। কিন্তু তারা আমার কথা শুনে নাই।
তবে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শওকত জামিল জানান, রাতে ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। পুলিশ মোতায়েন রয়েছে কয়েকটি পয়েন্টে।
পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, পুলিশের বিশেষ অভিযানে কিছু আসামি ধরা হয়েছিল। এ ঘটনায় তাদের লোকজন থানার সামনে এসে জড়ো হন। এ নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হননি। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআইকে মারধরের ঘটনায় গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়েছিল কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু এসআইকে মারধরের ঘটনা নয়, ওই এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের আস্তানা রয়েছে। সব মিলিয়ে অভিযান চালিয়ে ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় আদমজী শাহী মসজিদে ভারতে মহানবীকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে ইমামের বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। ইমামের বক্তব্য চলাকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ আজিজুল হক তাকে থামিয়ে বলেন, ভারতের ঘটনা ভারতে থাকুক, এখানে আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা যেন না করি। এ সময় তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে মসজিদের ভেতরে একবার মারধর করেন।
পরে স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীনের বাসায় আশ্রয় দিলে সেখানেও তাকে মারধর ও বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে স্থানীয় কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান সেখানে গিয়ে জনতাকে নিবৃত্ত করে তাকে উদ্ধার করেন। পরে সদর জেনারেল হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় শনিবার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মির্জা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৫০ জনের নাম উল্লেখসহ ১২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলার আসামি ধরতেই রবিবার রাতে অভিযানে নামে পুলিশ। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়