ঐক্য পরিষদের বিবৃতি : ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বাজেট বরাদ্দে ধর্মীয় বৈষম্য অবসান দাবি

আগের সংবাদ

নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা : সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি

পরের সংবাদ

সীতাকুণ্ডে ৯ ‘অগ্নিযোদ্ধা’র মৃত্যু : তথ্য ঘাটতিই কারণ

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকার প্রাইভেট আইসিডি বিএম কন্টেইনার ডিপোর ভয়াবহ আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ ‘অগ্নিযোদ্ধা’। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৩ জন। এ ঘটনায় আহত ১৫ অগ্নিযোদ্ধার মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৪ জন। দেশের ইতিহাসে দুর্যোগ মোকাবিলায় সবার আগে পাশে দাঁড়ানো ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের এত বড় খেসারত আর দিতে হয়নি কখনো। একসঙ্গে এত অগ্নিযোদ্ধার হতাহতের ঘটনা যেমন কাঁদিয়েছে গোটা দেশকে, তেমনি এই খেসারতের কারণ বিশ্লেষণে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা, প্রশিক্ষণ ও সুরক্ষা ব্যবস্থায় ঘাটতি দেখছেন কেউ কেউ। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, না বুঝেই কন্টেইনারের কাছে গিয়ে বিপজ্জনক কেমিক্যালের আগুন পানি দিয়ে নেভানোর চেষ্টা নিয়ে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কন্টেইনারে কী ছিল, সেটি জানানোর দায়িত্ব ছিল ডিপো কর্তৃপক্ষের। ফায়ার সার্ভিসের কাজই আগুন লাগার খবর পেলে নির্বাপণে ঝাঁপিয়ে পড়া।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, সীতাকুণ্ডের ঘটনায় বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হচ্ছে তথ্য না দেয়া। যারা অগ্নিনির্বাপণ অভিযান শুরু করেছেন, তারা জানতেনই না কন্টেইনারের মধ্যে কী আছে। নিয়ম অনুযায়ী, ওই ডিপোর কেয়ারটেকার বা সংশ্লিষ্ট কেউ বলবে সেটির মধ্যে কী আছে? কিন্তু কেউ বলেনি যে কন্টেইনারগুলো কেমিক্যালে পূর্ণ। যদি আমরা জানতে পারতাম কন্টেইনারে কী আছে, তাহলে এত বড় বিপর্যয় ঘটত না। আমাদের ৯ জন ফায়ার ফাইটারকে প্রাণ দিতে হতো না।
আগুনের উৎস বা ধরন না জেনে নির্বাপণ কাজ শুরু করা কতটা যৌক্তিক? এমন প্রশ্নের জবাবে ফায়ার ডিজি বলেন, আগুন লাগলেই যত দ্রুত সম্ভব আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি। এর মাঝখানে সময় পাই কয়েক মিনিট। যেখানে আগুন লেগেছে, সেখানকার লোকজনেরই ভেতরে কী আছে তা আমাদের জানিয়ে দেয়া উচিত। আর যদি আমাদের নিশ্চিত হতে হয়, তাহলে অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে। তখন সাধারণ জনতাসহ মিডিয়াও আমাদের বিপক্ষেই লিখবে। তবে এই ঘটনায় সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, নিজেদের সচেতন হওয়া। ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্ট ঠিকঠাক রাখা।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতার কোনো অভাব নেই। সুরক্ষা ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত রয়েছে। প্রশিক্ষণেও কোনো ঘাটতি নেই। প্রশিক্ষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিদেশে পাঠিয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হচ্ছে। সীতাকুণ্ডেও বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা ফায়ার ফাইটাররা কাজ করেছে। অনেকে বলছে, পানি ব্যবহারের কথা। সেখানে কিন্তু পানির সঙ্গে ফোমও ব্যবহার করা হয়েছে। একপর্যায়ে ফোম ফুরিয়ে যায়। পরিশেষে আগের কথাই বলতে চাই, তথ্যের ভুলে খেসারত গুনতে হয়েছে। বাকিটা তদন্ত রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত হতে পারব।
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহম্মেদ খান বলেন, সীতাকুণ্ডের ডিপোতে বিপজ্জনক হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের কারণেই এত ভয়াবহতা ঘটেছে। এটি এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে তাপ পেলে বিস্ফোরিত হতে পারে। আবার গরম হওয়ার পর পানি ছিটানো ও নাড়াচাড়া করাও বিপজ্জনক। উভয় সংকট। ফলে এই রাসায়নিক কতটা বিপজ্জনক, তা সংশ্লিষ্ট কেউ তাৎক্ষণিক বুঝতেই পারেনি। এ কারণেই ঘটনাটি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এত প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিবেদিতপ্রাণ। অগ্নিকাণ্ড ঘটলেই দ্রুত তা নির্বাপণের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু এবার তাদের জানা ছিল না যে এখানে কী ধরনের দাহ্য পদার্থ আছে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডে পানি বা নাড়া পড়লে বোমার মতো অগ্নিবিস্ফোরণ ঘটায়। অন্য সাধারণ ঘটনার মতোই ফায়ার ফাইটাররা ক্লোজ ফাইটিং (কাছাকাছি গিয়ে আগুন নেভানো) করেছেন। এখন বোঝা যাচ্ছে, নিরাপত্তা গার্ড নিয়ে দূরে থেকে ডিফেন্সিভ ফায়ার ফাইটিং করতে হতো। কিন্তু ততক্ষণে চরম মূল্য দিতে হলো আমাদের। আমি বলব, সবার জানা-বোঝার ঘাটতির কারণে বড় খেসারত দিয়েছি আমরা।
এ ঘটনার দায় কার? জানতে চাইলে আলী আহম্মেদ খান বলেন, আমি এককভাবে কাউকে দায়ী করব না। মালিকপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণভাবে রেখেছে। দুর্ঘটনার পরও তারা পণ্যের ব্যাপারে সঠিক তথ্য দেয়নি। এটা বড় ধরনের গাফিলতি। তাছাড়া এ ধরনের পণ্য ডিপোতে সংরক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষই বিষয়টি দেখভাল করেনি। এ ব্যাপারে সবাই উদাসীন ছিল, যার কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে গিয়ে জীবন দিলেন।
তিনি আরো বলেন, আমার জানামতে, ডিপোতে রাসায়নিক সংরক্ষণের বিষয়ে কোনো নীতিমালা নেই। আমি এটি আলোচনায় তুলছিলাম। ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এগুলো রাখা বা সংরক্ষণের জন্য সার্বিক নীতিমালা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর এখন এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
উল্লেখ্য, সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডে নিহত অগ্নিযোদ্ধারা হলেন- মো. রানা মিয়া, মনিরুজ্জামান, আলাউদ্দিন, মো. শাকিল তরফদার, মিঠু দেওয়ান, নিপন চাকমা, রমজানুল ইসলাম, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মো. ইমরান হোসেন মজুমদার। নিখোঁজ রয়েছেন- শফিউল ইসলাম, ফরিদুজ্জামান ও মো. রবিউল ইসলাম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়