ঐক্য পরিষদের বিবৃতি : ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বাজেট বরাদ্দে ধর্মীয় বৈষম্য অবসান দাবি

আগের সংবাদ

নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা : সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি

পরের সংবাদ

বিএনপির বাজেট ভাবনা : মানুষের মাসিক বাজেট ফেল না করে- এমন বাজেট হোক

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন বাজেট দিয়ে জনগণের কোনো কল্যাণ হবে বলে মনে করে বিএনপি। তবুও ‘মানুষের জীবন বাঁচানো’ বাজেট হোক- এমন প্রত্যাশা দলটির দায়িত্বশীল নেতাদের। তারা বলছেন, বাজেট হোক সাধারণ মানুষের জন্য, যারা সত্যিকার অর্থে বাজেট কী সেটা বোঝে না, যারা চায় দুবেলা দুমুঠো ভাতের নিশ্চয়তা। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরার বাজেট হোক, যাতে মধ্যবিত্ত শহুরে মানুষের মাসিক বাজেট ফেল না করে।
নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে রাজপথে থাকা বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে এবার আনুষ্ঠানিক ‘বিকল্প বাজেট’ প্রস্তাব তুলে ধরার সম্ভাবনা নেই। তবে দলটির সিনিয়র নেতারা বাজেট নিয়ে তাদের নিজস্ব ভাবনা তুলে ধরে কর্মহীন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য জিডিপির ৭-৮ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, সরকারের উচিত মাথাপিছু আয় না দেখে, আয়বৈষম্যের ওপর গুরুত্ব দেয়া; যাতে দেশের নিম্নআয়ের লোকজন সুন্দর জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। বাজেটে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির দিকে নজর দিতে হবে; তবেই মানুষের জীবন ও জীবিকার সমন্বয় থাকবে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, যেখানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে- সেখানে বাজেট দিয়ে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার সক্ষমতা সরকারের নেই। তবুও আগামীতে বাংলাদেশকে একটি কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক শক্তি ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমন্বিত, অংশীদারিত্বমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি এবং ‘সুশাসন ও রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে জবাবদিহিতা’ নিশ্চিতকরণের নীতি বাজেটের লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে। প্রবৃদ্ধির দিকে নজর না দিয়ে সমতাভিত্তিক উন্নয়ন ও করোনার অভিঘাত পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানুষের আয়বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে বাজেটের সিংহভাগ অর্থ ব্যয় করতে হবে। উন্নয়ন বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করে স্থানীয় জনপদ তথা তৃণমূল ও মধ্যম শ্রেণির উন্নয়নে মনোনিবেশ করতে হবে। উন্নয়নের মূলমন্ত্র হবে জনগণের দ্বারা উন্নয়ন এবং জনগণের জন্য উন্নয়ন। বাজেটের লক্ষ্য হবে

টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন। নেতারা বলেন, বাজেট শুধু সরকারের অর্থ সংগ্রহ ও ব্যয়ের বিষয় নয়। বাজেটে কত আয় ও কত ব্যয় করা হলো তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক নীতি। মূলত আর্থিক নীতিনির্ভর করে একটি সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, সবার আগে দরকার একটি গণমুখী বাজেট। কিন্তু বর্তমানে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা আর লুটেরা ব্যবস্থাপনায় দেশ চলছে। প্রতিবছরই বাজেট নিয়ে আমরা কথা বলি, মতামত দেই; কিন্তু কোনো লাভ হয় না। সরকার কোনো বছরই গণমুখী বাজেট করে না। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার আগে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। করোনা পরবর্তী এই সময়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে কর্মসংস্থানের ওপর। সামষ্ঠিক অর্থনীতিকে আরো স্পষ্ট করে তুলে ধরতে হবে সাধারণ মানুষের সামনে। মেগা প্রকল্পগুলো ধীরে হলেও মানুষের জীবন ও জীবিকার উন্নয়ন করবে। একই সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি পথকে সুগম করতে হবে। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। বিশেষ করে ব্যাংকের ঋণখেলাপির বিষয়টি নজরে এনে খেলাপিদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, বাজেটে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উৎস থেকে বিদেশি অনুদান বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ব্যাংক খাত থেকে আর ঋণ নেয়া যাবে না। কারণ এতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যে ঋণ প্রাপ্যতা হ্রাস পাবে। এছাড়াও বাজেট ঘাটতি ও জিডিপির তুলনায় ঋণের অনুপাত সহনীয় কোটায় সীমিত রাখতে হবে। মন্দায় ভোক্তার ব্যয় ও উৎপাদনের দুরবস্থায় মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা কম থাকলেও মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি কঠোর মনিটরিং করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে হবে। সহজে কর আদায়ের খাতগুলো বাড়াতে হবে।
বিএনপির দাবি, গত কয়েক বছর ধরেই যে বাজেট দেয়া হয়, তার কোনোটাই জনবান্ধব ছিল না। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ‘স্বজনতোষণের বাজেট’। যারা হতদরিদ্র তাদের কাছে প্রণোদনা বা আর্থিক সহায়তা পৌঁছেনি। বাজেটে সরকার মোটা অঙ্কের মেগা প্রকল্প বানাচ্ছে। এই মুহূর্তে এসব মেগা প্রকল্পের চেয়ে গরিবের ক্ষুধা মেটানো বেশি জরুরি। দলটির নেতারা বলছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে তাদের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করে তাদের সঙ্গে নিয়ে অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাইরে রেখে ওই এক শতাংশ মানুষের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করার জন্য কোনো অর্থনীতি হতে পারে না।
আসছে বাজেট কেমন হলে সেটা জনবান্ধব হবে- জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য ড. মঈন খান বলেন, কেমন বাজেট চাই- এই প্রশ্নের উত্তরের আগে ভাবতে হবে কার জন্য বাজেট। বাজেটের আগে বিশেষ করে যারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তারা উন্মুখ হয়ে জানতে চায় কী হচ্ছে বাজেটে। তারা চাল, পেঁয়াজ আলুর দাম বাড়বে কিনা তা জানতে চায়। এসব মেজরিটি অব দ্য পিপল, দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এবং মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য কল্যাণমুখী একটা বাজেট চাই। তাদের জন্য বাজেট যেন জুলুম না হয়ে যায়। বাজেট মানেই হলো একটি ব্যালেন্সিং অ্যাক্ট। এই ব্যালেন্স অর্থমন্ত্রী যতভালো করতে পারবেন জনগণ ততই উপকৃত হবে।
তিনি বলেন, আমরা যতটুকু শুনেছি- আসছে বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বলেছে ৭ দশমিক ১ শতাংশের বেশি হবে না। বিশ্বব্যাংক ১ শতাংশ কমিয়ে বলেছে, ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এখানে প্রবৃদ্ধি এক শতাংশ কমে গেলেও পরিমাণ একেবারে কম নয়। কাজেই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর যে প্রতিবেদন তার সঙ্গে অন্যন্য দেশের যে তারতম্য তা অবশ্যই বিবেচ্য বিষয়। সরকার এর মধ্যেই স্বীকার করেছে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মতো। অথচ যারা এসব হিসেবে যথাযথভাবে তদারকি করছেন; তারা বলছেন, মূল্যস্ফিতির পরিমাণ ১২ শতাংশ হয়ে গেছে। এই যে ‘ডিসক্রেপেন্সি’গুলো; এর মাধ্যমে আমাদের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির যে ব্যাবধান সেটা মানুষ বুঝতে পারছে।
তিনি বলেন, ঋণপ্রবাহ হওয়ার কথা ছিল ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ, সেটা হয়ে গেছে ৯৫ শতাংশ। সরকারি ঝণ যেটা হওয়ার কথা ছিল ৩২ কোটি, সেটা ১৫৬ কোটি। বাণিজ্যে ঘাটতি ২ হাজার ৪শ ৯১ কোটি। কিছু দিন আগেও ছিল ২ হাজার কোটি। যে মেগা প্রকল্পের খরচ ১০ হাজার কোটি টাকা হওয়ার কথা ছিল; তা বেড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা হয়ে গেল। ট্যাক্স সিস্টেমকে ‘টোট্যাল ওভার হোল’ করতে হবে। অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে কিন্তু কোথায় যাচ্ছে সেই অর্থ? এর কোনো আউটকাম আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এই সমস্যাগুলো সমাধান না হলে দেশে অস্থিরতা বাড়বে। বড় কথা অনেক বলা যায় কিন্তু বাস্তবতার চিত্র ভিন্ন।
আসন্ন বাজেট কেমন চায় বিএনপি? জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। ফলে তাদের বাজেটে জনগণের প্রত্যাশিত খাতগুলো রবাবরই উপেক্ষা করা হয়েছে। তাদের দলীয় এবং ব্যক্তি বিশেষের পকেট ভারি করতেই আরেকটি নতুন বাজেটের আয়োজন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে জীবনযাত্রার মান দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। মানুষ দুবেলা দুমুঠো খাবার পাচ্ছে না। এই অবস্থায় তাদের খাবারের ব্যবস্থা করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সামাজিক বিশৃঙ্খলা এখন চরমে, আইনের শাসন নেই, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা একেবারেই নেই। এক শতাংশ লোকের কাছে ৬০-৭০ শতাংশ সম্পদ চলে গেছে। অর্থাৎ বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষ তারা ক্রমান্বয়ে গরিব থেকে গরিবতর হচ্ছে। ইতোমধ্যে আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে, যারা আগের দরিদ্র তাদের বাদ দিয়ে। তাদের যদি যোগ করা হয় তাহলে মোট ৫-৬ কোটি লোক আজকে দারিদ্র্যসীমায় পৌঁছে গেছে। এদের বরাদ্দ না দিয়ে তারা (সরকার) মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন কায়দায় মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে। ১শ টাকার প্রজেক্ট নিয়ে ৩শ টাকা করে সেই টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় নতুন বাজেট দিয়ে কি লাভ? এখন একটাই সমাধান বর্তমান সরকারের সরে যাওয়া এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে যে নতুন সরকার আসবে তারাই পারবে একটি জনবান্ধব বাজেট দিতে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়