ঐক্য পরিষদের বিবৃতি : ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বাজেট বরাদ্দে ধর্মীয় বৈষম্য অবসান দাবি

আগের সংবাদ

নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা : সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি

পরের সংবাদ

কন্টেইনার ডিপোর জন্য কোনো গাইডলাইন নেই : ড. মো. ইয়াছির আরাফাত খান, সহযোগী অধ্যাপক, কেমিকৌশল বিভাগ, বুয়েট

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ‘ঝুঁকিপূর্ণ বিস্ফোরক জাতীয় মালামাল মজুত, পরিবহন ও ডিপোতে রাখার বিষয়টি মনিটরিংয়ের দায়িত্ব বিস্ফোরক অধিদপ্তরের। সরকারি ও বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোর জন্য কোনো গাইডলাইন আছে বলে আমার জানা নেই। গাইডলাইন না থাকলেও সবাই ইন্টারন্যাশনাল গাইডলাইন অনুসরণ করে।’ গতকাল সোমবার ভোরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইয়াছির আরাফাত খান এসব কথা বলেছেন।
ড. আরাফাত খান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ মালামাল রাখার ব্যাপারে টার্মিনালগুলোর জন্য গাইডলাইন আছে, আইএনডিজি কোড আছে। কোড অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যালস কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, কীভাবে প্যাকিং করতে হবে, একাধিক কন্টেইনার রাখা হলে দুটি কন্টেইনারের মাঝে কতটুকু দূরত্ব থাকবে- এসব ব্যাপারে আলাদা নির্দেশনা রয়েছে। রাসায়নিকের ধরন অনুযায়ী সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিতে হবে। এগুলো সবই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গাইডলাইন। আমাদের দেশে নিজস্ব কোনো গাইডলাইন না থাকায় আন্তর্জাতিক গাইডলাইনগুলোই অনুসরণ করা হয় পোর্টগুলোতে। একই ধরনের নিয়মনীতি বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনালগুলোর জন্য প্রযোজ্য। আমার জানামতে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোর জন্য কোনো গাইডলাইন নেই। সরকারিগুলোর জন্যই তো কোনো গাইডলাইন নেই। এখানে আসলে সবাই ইন্টারন্যাশনাল গাইডলাইন অনুসরণ করে বলেই আমি জানি।
ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক জাহাজে এবং রোডে কীভাবে পরিবহন করা যাবে এজন্যও গাইডলাইন আছে। কী ধরনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন গাড়িচালক এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ মালামাল পরিবহন করবে গাইডলাইনে তাও আছে। ওই চালককে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের গাইডলাইন এখনো আসেনি, কেউ মানেও না।
ঝুঁকিপূর্ণ বিস্ফোরক জাতীয় মালামাল মজুত, পরিবহন ও ডিপোতে রাখার বিষয়টিকে মনিটরিং করবে, দুর্ঘটনার দায় কার- এমন প্রশ্নের উত্তরে বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, যদি বিস্ফোরক জাতীয় মালামাল আসে তাহলে বিস্ফোরক অধিদপ্তর বিষয়টি দেখবে, তাদেরই প্রধান দায়িত্ব।
সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ভবিষ্যতে প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন- জানতে চাইলে অধ্যাপক ইয়াছির আরাফাত খান বলেন, ডিপো ব্যবস্থাপনাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কন্টেইনার আসা এবং ডেলিভারি হওয়া পর্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঘটনাস্থলে কী মালামাল আছে- তা জেনেই ফায়ার সার্ভিসকে কাজ শুরু করতে হবে। আগুন কীভাবে লেগেছে সেটা বলা মুসকিল, কিন্তু এখানে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। আগুনের সূত্রপাত কেমিক্যাল থেকেও হতে পারে। পাশাপাশি দুই ধরনের কেমিক্যাল থাকার কারণে আগুন ধরে যেতে পারে। এরপর আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ডিপোর নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা থাকা দরকার- তাদের ছিল বলেও আমি মনে করি। তারাই প্রথমে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে। তারা আগুন নেভাতে না পারায় ফায়ার সার্ভিসকে ডেকেছে। ফায়ার সার্ভিস এসে প্রথমে একটি সাধারণ দুর্ঘটনা হিসেবে নিয়েই আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু করে। তারা ঝুঁকির বিষয়টি জানত না। সেখানে কী জাতীয় মালামাল রাখা আছে তাও জানত না। তাই সাধারণভাবে আগুন নেভানোর সময় বিস্ফোরণ ঘটে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে, ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। ডিপো অথোরিটির একেবারেই নিজস্ব সেফটি ডিপার্টমেন্টে থাকা উচিত। সেফটি ডিপার্টমেন্ট থাকলে তারা ফায়ার সার্ভিসকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা কন্টেইনারগুলোর এত কাছে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করত না। নিজেদের সুরক্ষা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েই আগুন নেভাতে চেষ্টা করত। অন্যদিকে তারা ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারলে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে লোকজনকে সরিয়ে পুরো জায়গাটিকে খালি করতে পারত। এখানে সেটাও করা হয়নি, তাই ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে।
অধ্যাপক আরাফাত আরো বলেন, আমরা কেমিক্যাল উৎপাদন করি না। বেশির ভাগ কেমিক্যাল বিদেশ থেকে আমদানি করি। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ কেমিক্যাল সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে আমদানি হয়। মাত্র ১০ ভাগ কেমিক্যাল স্থলপথে আসে- বিশেষ করে ভারত থেকে। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিগুলো কেমিক্যালের বড় গ্রাহক। কন্টেইনারগুলো দেশে আসার পর কিছু কন্টেইনার সরাসরি জাহাজ থেকে খালাসের পর সংশ্লিষ্ট কারখানায় চলে যায়। কিছু কন্টেনার আসে যেগুলো হয়তো একাধিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি শেয়ার করে মালামাল আনেন, এসব কন্টেইনারগুলো ডিপোতে রেখে তারপর মালামাল ভাগ করে নিয়ে যায়। এ ধরনের কন্টেইনারগুলো দীর্ঘ সময় ধরে ডিপোতে রাখার জন্য না। মালামাল আসবে এবং চলে যাবে। কিন্তু এগুলো দীর্ঘ সময় ধরে থাকছে।
তিনি বলেন, কিন্তু সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনার পর টার্মিনালের দিকে তাকালে আমরা দেখছি যে, আগুন লাগার পর নেভানো যায়নি। কন্টেইনারগুলোর মধ্যের দূরত্ব না থাকায় আগুন আটকানোর ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। আবার এখানে এমন কেমিক্যাল ছিল- যা বিস্ফোরক হিসেবে কাজ করেছে। বিশ্বের যেসব জায়গায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে তাতে দেখা গেছে প্রথমে আগুন লেগেছে, তারপরেই বিস্ফোর ঘটেছে, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভানোর সময় বিস্ফোরণটি ঘটেছে। শুধু আগুন লাগলে এত বড় আকারে ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
কতদিন এ ধরনের কন্টেইনার ডিপোতে রাখা যায় এমন প্রশ্নের উত্তরে বুয়েটের এই কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞ বলেন, আমার জানামতে প্রাইভেট ডিপোগুলোতে খুব বেশি দিন এ ধরনের কন্টেইনার থাকে না। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সজনিত কারণে হয়তো দেরি হতে পারে। যত দ্রুত ছাড়িয়ে নেয়া যায় ব্যবসায়ীদের জন্য ততই সুবিধা। তবে আমরা সিপোর্ট ও ল্যান্ড পোর্টে দেখেছি যে, ৮ থেকে ১০ বছর ধরেও পড়ে আছে। যারা আমদানি করেছিল তারা ছাড়িয়ে নেয়নি, তাই বন্দরেই পড়ে আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়