পদ্মা সেতুর উদ্বোধন : সারাদেশে উৎসব হাতিরঝিলে হবে লেজার শো

আগের সংবাদ

সর্বনাশা ধ্বংসযজ্ঞের দায়ভার কার : নিহত অর্ধশত, দগ্ধ-আহত আড়াইশর বেশি, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মজুতের অনুমতি ছিল না, ২৫ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে

পরের সংবাদ

লঞ্চ টার্মিনাল সরাতে মেয়রের নির্দেশ : হাল ফিরবে ‘বেহাল’ লালকুঠির

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রকি আহমেদ : বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের পাশে একটি লাল ভবন। এটিই লালকুঠি নামে পরিচিত। মোগল ও ইংরেজ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এ ভবনটি বর্তমানে ঢাকাবাসীদের কাছে তেমন বেশি পরিচিত না হলেও প্রায় ১৫০ বছর আগে থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত মানুষের কাছে নাট্য ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য অন্যতম কেন্দ্র ছিল এটি। এখান থেকেই প্রখ্যাত অভিনেতা প্রবীর মিত্রের অভিনয়ে হাতেখড়ি। ষাটের দশকে নিয়মিত এখানে নাট্যচর্চা করতেন তিনি। এরপর এখান থেকে ডাক পান সিনেমায়। এখানে যেমন জমত নাট্য-বিনোদনের আসর, তেমনই বিদেশিদের আপ্যায়নের জন্যও এ ভবনটি ব্যবহার করা হতো। ১৯২৬ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকায় এলে এখানেই সংবর্ধনা দেয়া হয়। নদীর মনোরম পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য অভিজাতদের আড্ডাখানা হিসেবেও এটির কদর ছিল। মূলত ঢাকায় সাংস্কৃতিক চর্চার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বিউটি বোর্ডিং এলাকায় বর্তমানের এই জীর্ণ ভবনটি।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৮৭২ সালে ঐতিহাসিক এ ভবনটি নির্মাণ করা হয়। প্রথমে এটির নাম ছিল নর্থব্রুক হল। তৎকালীন ভারতের গভর্নর জেনারেল টমাস জর্জ ব্যারিং নর্থব্রুক ঢাকা সফরে এলে এ সফরকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই ভবনটির নাম ‘নর্থব্রুক হল’ রাখা হয়। পরে ১৮৮২ সালে ভবনটিতে ‘জনসন হল’ নামে একটি পাঠাগারও করা হয়, যা এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে। ওই সময় ঢাকার নবাব আহসান উল্লাহসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা পাঠাগারে অনেক বই উপহারস্বরূপ প্রদান করেন। ১৮৮৭ সালে ইংল্যান্ড থেকেও আনা হয় বই। এভাবে পাঠাগারটিতে বইয়ের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় লালকুঠি হামলার শিকার হয়ে ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। নষ্ট হয়ে যায় পাঠাগারের অধিকাংশ বই। তবে এখনো

মূল্যবান ও দুর্লভ বই পাওয়া যায় পাঠাগারটিতে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় ও বন্ধ থাকায় বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে ঢাকার ঐতিহাসিক এ স্থাপনাটি। সরজমিন এ ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, অযতেœ দেয়ালের লাল রং বিবর্ণ হয়ে গেছে। খসে পড়ছে পলেস্তার। লালকুঠির ভেতরে বড় একটি অডিটোরিয়াম আছে, তবে কাঠের মঞ্চ নড়বড়ে অবস্থা। সাজসজ্জার রুমে সাজ নেই। এছাড়া লালকুঠির সামনেই লঞ্চ টার্মিনাল স্থাপনের কারণে এখান থেকে দেখা যায় না নদী। পাশের রাস্তায় ভাসমান হকার, কুলি ও মালামালবহনকারী পরিবহনের কারণে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। রাস্তার পাশে রয়েছে ময়লার ভাগাড়। এসব কারণে লালকুঠির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তবে এই বেহাল লালকুঠির পূর্বের হাল ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে স্থাপনাটির নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ভবনটির নির্মাণশৈলী অক্ষুণ্ন রেখে সংস্কার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
ঢাকা সিটি নেবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্টের (ডিসিএনইউপি) অধীনে চলছে সংস্কারকাজ। কাজের পরিকল্পনার নকশা থেকে জানা যায়, নর্থব্রুক হল অর্থাৎ লালকুঠি ভবনে একটি টাউন হল, এক্সিবিশন হল, ব্যাঙ্কুয়েট হল, সেমিনার হল, শো এবং ফটোশুটের স্থান থাকবে। জনসন হল অংশে একটি পাবলিক লাইব্রেরি, ডিজিটাল লাইব্রেরি/আর্কাইভ, বুক ক্যাফে, স্যুভেনির সেলস বুথ করা হবে। করিডোর অংশকে ছোট প্রদর্শনী স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হবে। লালকুঠির বহিরাংশে নাগরিক অনুষ্ঠান, উৎসব, মেলা, বিনোদন অনুষ্ঠান, স্কুল ইভেন্ট আয়োজনের ব্যবস্থা থাকবে, বহিরাংশে একটি টি-স্টল থাকবে। এছাড়া একটি কমিউনিটি সেন্টার করা হবে, যেখানে টয়লেট, ইউটিলিটি, বর্ধিত আধা-আউটডোর স্পেস ও কফিশপ থাকবে। মূলত ঢাকার ঐতিহাসিক এই নিদর্শনে আবার প্রাণ ফেরানোর জন্য যাবতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিসিএনইউপি-এর প্রকল্প পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এই প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে শিগগিরই লালকুঠি ভবনটির চারপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে এর সংস্কারকাজ শুরু করা হবে। ভবনটিকে সম্পূর্ণভাবে আগের রূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নাও হতে পারে। তবে এর আশপাশে নাগরিক ও দর্শনার্থীদের জন্য কমিউনিটি সেন্টার এবং লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হবে।
এদিকে গত ২৩ মে লালকুঠিতে ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্টের অধীনে ‘কনজার্ভেশন এন্ড ইম্প্রুভমেন্ট অব লালকুঠি হেরিটেজ’ শীর্ষক প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, পুরান ঢাকার লালকুঠির সামনে থেকে দ্রুত লঞ্চঘাট সরানোর জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদী ঘেঁষে গড়ে উঠেছে আমাদের ঢাকা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা এই ঐতিহাসিক স্থাপনা থেকে এখন আর বুড়িগঙ্গা দেখতে পাই না। আমরা ঢাকার সব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ও স্মৃতিস্তম্ভের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই। তাই এ সময় তিনি লালকুঠি থেকে রূপলাল হাউস পর্যন্ত অংশে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল সরিয়ে ফেলার কথা বলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়