ভারতের গমে রুবেলা ভাইরাস : অর্ধলাখ টন ফেরত দিল তুরস্ক

আগের সংবাদ

কিশোরগঞ্জে মানববন্ধন : ভোরের কাগজের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার দাবি

পরের সংবাদ

ফেনীর ৪০ পয়েন্ট দিয়ে শত কোটি ডলার পাচার : ভারত থেকে আসছে মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দ মনির আহমদ, ফেনী থেকে : ফেনীর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের প্রায় ১৩১ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। দুপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যেও নিবিড় যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও আছে সখ্যতা। তবে এই সীমান্তের প্রায় ৪০টি পয়েন্ট দিয়ে ভারত থেকে আসছে মাদক, পোশাকসামগ্রী, প্রসাধনীপণ্য, গরু, ওষুধ ও ইলেক্ট্রনিক্সসামগ্রী। এতে প্রতি বছর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার হচ্ছে শত কোটি ডলার। ইতোমধ্যে চোরাচালান ও মুদ্রা পাচার বন্ধে দ্রুত সীমান্ত সুরক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরজমিনে সীমান্ত এলাকা ঘুরে জানা যায়, ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের জের কাছাড়, ধর্মপুর ইউনিয়নের জোয়ার কাছাড়, টিভি হাসপাতাল মোড়, আমতলী, ফুলগাজী সদরের পূর্ব দেবপুর, গাবতলা, মনতলা, মুন্সিরহাট ইউনিয়নের পৈথারা, শ্রীপুর, কামাল্লা, জামমুড়া, আমজাদহাট ইউনিয়নের ফেনা পুষ্করিণী, রিশ্বমুখ, পরশুরাম পৌর এলাকার বিলোনিয়া, রাশপদুয়া, মজুমদারহাট, মির্জানগর ইউনিয়নের আশ্রাফনগর, বীরচন্দ্রনগর, পশ্চিম সাহেবনগর, মেলাঘর, মহিষ পুষ্করিণী, মধুগ্রাম, রাঙামাটিয়া, বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের উত্তর কেতরাঙা, উত্তর গুথুমা, বটতলা, ছাগলনাইয়া পৌর এলাকার পূর্ব ছাগলনাইয়া, বাঁশপাড়া, শুভপুর ইউনিয়নের চম্পকনগর, ছয়ঘরিয়া, জগন্নাথ সোনাপুর, দারোগারহাট, মহামায়া ইউনিয়নের জয়ন্তিনগর, সত্যনগর, রাধানগর ইউনিয়নের বর্ডার বাজার মোকামিয়া, ঘোপাল ইউনিয়নের পশ্চিম জয়পুর, দক্ষিণ মন্দিয়া ও দক্ষিণ কহুমাসহ ৪০টি সীমান্ত এলাকা দিয়ে নিয়মিত চোরাচালান পণ্য আসছে।
জানা গেছে, এসব অঞ্চলের স্থানীয় প্রভাবশালী, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের একিমপুর সোনামুড়া, গোবিন্দপুর, হরিপুর, শ্রীপুর, দুর্গাপুর, বিলোনিয়া এবং মতাই এলাকার চোরাকারবারিদের সখ্য গড়ে উঠেছে অনেক আগে থেকেই।
এ ব্যাপারে পরশুরামের ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন জানান, জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় চোরাকারবারিরা স্থানীয় নি¤œবিত্ত পরিবারের লোকদের সাহায্যে খুব সহজেই পাচার করে মাদক, পোশাকসামগ্রী, প্রসাধনীপণ্য, গরু, ওষুধ ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী। বিজিবিসহ স্থানীয় প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে খুব সহজেই মালামাল পাচার করছে। বিনিময়ে চোরাকারবারিরা ভারতে নগদ ডলার, রুপি ও টাকা পাচার করছে। ফেনী সীমান্ত দিয়ে আসা মাদকসহ অন্যান্য মালামাল নোয়াখালী, ল²ীপুর ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা রয়েছে- যে কারণে এখানে চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না।
ফুলগাজীর স্থানীয় সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম জানান, চোরাচালানের কারণে দুইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দেশ। মাদকের কারণে যুবসমাজ ধ্বংস হচ্ছে ও অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। অপরদিকে প্রতি বছর গড়ে শত কোটি ডলারের মুদ্রা পাচার হচ্ছে। অতি দ্রুত পুরো সীমান্ত সুরক্ষিত

করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো তৎপর ও দায়িত্বশীল হতে হবে।
সীমান্তবর্তী পরশুরাম থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, পরশুরামের তিন দিকেই ভারতের সীমান্ত। চোরাচালান এখানকার স্থানীয়দের সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। গত এক বছরে প্রায় তিন কোটি টাকার মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান পণ্য জব্দ করা হয়েছে।
ছাগলনাইয়া থানার ওসি শহীদুল ইসলাম জানান, সীমান্তের সঙ্গে ছাগলনাইয়ার প্রায় ২০টি গ্রাম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে সীমান্তে চোরাচালান ঠেকানো। গত ছয় মাসে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের চোরাচালান পণ্য জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- মাদক, পোশাক ও প্রসাধনীসামগ্রী। এসব উদ্ধারের ঘটনায় ৮৯টি মামলা হয়েছে এবং ১৩২ জন চোরাকারবারি আটক হয়েছে। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা সচেতন হলে সহজেই চোরাচালান ঠেকানো সম্ভব।
জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ফেনীর উপপরিচালক মিজানুর রহমান শরীফ ভোরের কাগজকে বলেন, দপ্তরের নিজস্ব জনবল দিয়েই নিয়মিত অভিযান ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছি। যদিও সীমিত সক্ষমতার মধ্যেই কাজ করতে হয়। আমাদের সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে, লজিস্টিক সাপোর্ট যেমন- অস্ত্র, যানবাহন, প্রযুক্তিগত সরঞ্জামাদি দিতে হবে এবং জনবল বাড়াতে হবে।
বিজিবি ৪ ব্যাটালিয়ন ফেনীর সিও এ কে এম আরিফুল ইসলাম বলেন, ভারতের সঙ্গে ফেনীর প্রায় ১৩১ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। পুরো সীমান্তে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০৩ কিলোমিটার বিজিবি ৪ ব্যাটালিয়ন ফেনী ও ২৮ কিলোমিটার বিজিবি ১০ ব্যাটালিয়ন কুমিল্লার দায়িত্বে রয়েছে। বিজিবির ৪ ব্যাটালিয়ন ১৭টি ও ১০ ব্যাটালিয়ন ৬টি ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জনবল দিয়েই সীমান্ত সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করছে। মুদ্রা ও চোরাচালান বন্ধে বিজিবি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে।
গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বিজিবি ৪ ব্যাটালিয়ন প্রায় ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকার চোরাচালান মালামাল জব্দ করেছে। এসব ঘটনায় ২৫৬টি মামলা হয়েছে। ৩৭ জন চোরাকারবারি গ্রেপ্তার হয়েছে এবং ১৬ জন আসামি পলাতক রয়েছে। তিনি আরো বলেন, সীমান্তে অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করছে বিজিবি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়