জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : ১০ বছরেও ক্লাসরুম আইন অনুষদ

আগের সংবাদ

প্রতিযোগিতার বাজারে ডলার : দাম নিয়ন্ত্রণ থেকে পিছু হটল কেন্দ্রীয় ব্যাংক > টাকার মান কমল ৯০ পয়সা

পরের সংবাদ

নোয়াখালীর কালাদরাপ ইউনিয়ন ভূমি অফিস : ঘুষের টাকা ফেরত দিতে তহশিলদারকে গণপিটুনি

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী থেকে : নোয়াখালী সদর উপজেলার ৯ নম্বর কালাদরাপ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো. মাসুদ আহম্মদকে ঘুষের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য গণপিটুনি দিয়ে ১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয় ভুক্তভোগী জনসাধারণ।
পরে ঘুষ গ্রহণের টাকা ফেরত দেয়ার মুচলেকা দিয়ে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় সুধারাম থানা পুলিশের সহযোগিতায় মুক্তি পান ওই তহশিলদার। এর আগে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে নিজ কার্যালয়ে ভুক্তভোগীরা তাদের কাছ থেকে নেয়া ঘুষের টাকা ফেরত চাইতে গেলে টাকা ফেরত না পেয়ে তহশিলদারকে গণপিটুনি দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
ভুক্তভোগী মো. মমিন উল্যাহ, সেলিম মিয়াজি, জামাল উদ্দিন, শাহাজাহান, নুর নাহারসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত সহস্রাধিক জনসাধারণ বলেন, কালাদরাপ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো. মাসুদ আহম্মদ এখানে যোগদানের পর থেকে সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত, জমা খারিজ, খাজনা দাখিলাসহ ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার হাত থেকে রক্ষা পাননি কালাদরাপ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইব্রাহিম পাটোয়ারীও। সম্প্রতি তিনি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জমির খাজনা দাখিলা কাটতে গেলে তার কাছে ৪০ হাজার টাকা চান তহশিলদার মাসুদ আহম্মদ। পরে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তার খাজনা দাখিলা কাটা হয়। কিন্তু ৩০ হাজার টাকার খাজনা দাখিলার রশিদ দেয়া হয় মাত্র ৯৭ টাকার।
মঙ্গলবার দুপুরে তহশিলদার মাসুদ আহম্মদের সেনবাগে বদলির সংবাদ পেয়ে আমাদের কাছ থেকে নেয়া ঘুষের টাকা ফেরত চাইতে এলে তিনি টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, পরবর্তী যে তহশিলদার আসবেন, আমি তার সঙ্গে কথা বলব। তিনি আপনাদের কাজ করে দেবেন। পরে তাকে গণপিটুনি দিয়ে তার রুমে আটক করে রাখা হয়।
কালাদরাপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাত উল্যাহ সেলিম বলেন, তহশিলদারের বদলির খবর পেয়ে স্থানীয় ভুক্তভোগীসহ সহস্রাধিক মানুষ তার কার্যালয় অবরুদ্ধ করে ঘুষের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য তাকে গণপিটুনি দেয়ার চেষ্টা করছেন এমন সংবাদ পেয়ে সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারকে বিষয়টি জানান। তারা জনগণ কীভাবে তাদের পাওনা টাকা পেতে পারেন সেই ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন।
পরে সুধারাম মডেল থানার এসআই মনির হোসেনের সহযোগিতায় উপস্থিত ৬৫ জন পাওনাদারের প্রায় ৮ লাখ টাকার তালিকা করে তহশিলদারের কাছ থেকে ঘুষের টাকা ফেরত দিবে মর্মে মুচলেকা নিয়ে তাকে পুলিশ পাহারায় রাত সাড়ে ১২টায় নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম আরো বলেন, রাতে ৮ লাখ টাকার তালিকা করা হলেও খবর পেয়ে বুধবার সকাল থেকে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে শত শত ভুক্তভোগী জমায়েত হয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে আরো প্রায় ৬ লাখ টাকার তালিকা করা হয়েছে। এই ঘুষখোর তহশিলদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমি লিখিত অভিযোগ করব।
কালাদরাপ ইউপি চেয়ারম্যান এবং সুধারাম থানার এসআই মনির হোসেনের কাছে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে নেয়া ঘুষের টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করে দেয়া মুচলেকায় তহশিলদার মাসুদ আহম্মদ লিখেন, আমি জনসাধারণের কাজ করব বলে নেয়া টাকা কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় ফেরত দিতে বাধ্য থাকিব ও সত্য বলে স্বীকার করলাম।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাফিজুল হক জানান, ঘটনার বিষয়ে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
অভিযুক্ত ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে লিখিত অভিযোগ দিতে, তিনি অভিযোগ দিলে তাকে স্থায়ীয়ভাবে বহিষ্কার করা হবে।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, ঘটনাটি আমি শুনেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সঙ্গে কথা বলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়