তেঁতুলতলা মাঠ ফিরে পেয়ে উচ্ছ¡াস এলাকাবাসীর

আগের সংবাদ

বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির রেকর্ড, প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও

পরের সংবাদ

ঈদযাত্রায় পথে পথে দুর্ভোগ

প্রকাশিত: মে ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : সব পথে ঘরমুখো মানুষের ঢল। সব পথেই দুর্ভোগ। সবাই পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য বাড়ি ফেরায় রাজধানী ঢাকা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। মহাসড়কে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বড় ধরনের যানজটের সৃষ্টি না হলেও যানবাহনগুলো ধীর গতিতে চলছে। টাঙ্গাইলের হাতিদিয়া থেকে এলেঙ্গাতে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এদিকে শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সদরঘাট টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের উপছে পড়া ভিড়। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই লঞ্চগুলো ঘাট ছেড়েছে। রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতেও গত শনিবার যাত্রীর চাপ দেখা গেছে।
এদিকে ঈদযাত্রার পরিস্থিতি দেখতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শনিবার মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে।
ফেরিঘাট : মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই। তারপরও মানুষ ও যানবাহন একের পর এক ঘাটে আসছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। ব্যক্তিগত যানবাহনের মধ্যে রাজত্ব করছে মোটরসাইকেল। শুধু মোটরসাইকেল পারাপারের জন্যই এই ঘাটে একটি ফেরি রাখা হয়েছে। ফেরির পাশাপাশি লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটেও যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।
ঘাটসূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় শিমুলিয়া ঘাট থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ মোটরসাইকেল পদ্মা পার হয়েছে। কুঞ্জলতা ফেরিতে শুধু মোটরসাইকেল পার করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের চাপের কারণে ওই ফেরিতে অন্য যানবাহন পার হতে পারেনি। মোটরসাইকেল ও যাত্রী পার করতে ঘাট কর্তৃপক্ষকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। সকাল থেকেই ১ নম্বর ফেরিঘাটে মোটরসাইকেলের দীর্ঘলাইন।
যাত্রী সাইদুল ইসলাম জানান, সকাল ৬টায় ঘাটে এসে অপেক্ষার

পর ১০ পর্যন্ত তিনি ফেরিতে ওঠার সুযোগ পাননি। বেলা ১টার দিকে তিনি একটি ফেরিতে ওঠার সুযোগ পান। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে পথের দূরত্ব কম হওয়ায় ভোর রাত থেকেই শত শত মোটরসাইকেল শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি নৌরুট ব্যবহার করে ঘরে ফেরার জন্য এসেছে। শনিবার ভোর রাত থেকেই যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। সব ধরনের যানবাহনের চাপ বেড়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জামাল হোসেন জানান, এই নৌরুটে মোট ১০টি ফেরি ২৪ ঘণ্টা সচল রয়েছে। দুপুরের দিকে প্রায় ২ হাজার মোটরসাইকেল পারাপারের অপেক্ষায় ছিল।
এদিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটেও মানুষের ঢল নেমেছে। একই সঙ্গে নেমেছে যানবাহনেরও ঢল। তিন চার ঘণ্টা অপেক্ষার পরও ফেরি পাওয়া যাচ্ছে না। এই ঘাটেও মোটরসাইকেলের দীর্ঘলাইন পড়েছে। গতকাল সকালের দিকে যাত্রী ও দূরপাল্লার বাসের কারণে ব্যাপক চাপের সৃষ্টি হয়। পারাপারের জন্য এই ফেরিঘাটে ২৩টি ফেরি ২৪ ঘণ্টা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দুপুর পর্যন্ত এখানে ৩ শতাধিক বিভিন্ন ধরনের যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
লঞ্চে ভোগান্তি : লঞ্চ যাত্রীদের দুর্ভোগের সীমা নেই। মানুষের চাপে ল²ীবাজার মোড় থেকে সদরঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যেতেও আধ ঘণ্টা লেগে যায়। রিকশায় যেতে হলে আরো বেশি সময় লাগে। লঞ্চ মালিকদের অতি লোভের কারণে সব লঞ্চই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে যাচ্ছে। জরিমানা করার পরও অতিরিক্ত যাত্রী নামানো হচ্ছে না। ঢাকা-আমতলী-ঢাকা রুটের শতাব্দী বাঁধন ও ইয়াদ-১ লঞ্চের যাত্রীরা লঞ্চে বিক্ষোভ করেছে। শুক্রবার রাতে লঞ্চে উঠে যাত্রীরা; কিন্তু শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত লঞ্চটি সদরঘাট ছাড়েনি। চরম দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা লঞ্চে বিক্ষোভ করেছে। ইয়াদ লঞ্চের যাত্রী সামসুল জানান, শুক্রবার রাত ১০টায় তিনি লঞ্চে ওঠেন। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই হওয়ার পরও লঞ্চটি ঘাট ছাড়েনি। রাত পেরিয়ে শনিবার হলেও লঞ্চটি ঘাট না ছাড়ায় একপর্যায়ে যাত্রীরা লঞ্চে বিক্ষোভ করেন। লঞ্চ কখন ছাড়বে সংশ্লিষ্টরা কেউ কিছুই বলছেন না। বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারাও কিছু বলছেন না।
সদরঘাটের বিআইডাব্লিউটিএর পোর্ট অফিসার আলমগীর জানান, শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৭০টি লঞ্চ ঘাটে ভিড়েছে এবং ৫৫টি লঞ্চ সদরঘাট ছেড়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮০টির বেশি লঞ্চ ছাড়ার কথা রয়েছে। লঞ্চ মালিকদের বাড়তি যাত্রী ও ভাড়া না নেয়ার জন্য এবং সময়মতো ছেড়ে যাওয়ার জন্য সতর্ক করার পরও কথা শুনছে না।
ট্রেনে উপছে পড়া ভিড় : ট্রেনের ভেতরে ঠাঁই না পাওয়ায় ছাদের উপরেও হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে ট্রেনগুলো বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে। একটি ট্রেন স্টেশনে আসার সঙ্গে সঙ্গে হাজারো যাত্রী ট্রেনে উঠতে এক সঙ্গে কোচের গেটগুলোতে ছুটে যাচ্ছে। কে কার আগে উঠবে তা নিয়ে প্রতিযোগিতার মধ্যেই মোবাইল ফোন, মানিব্যাগও হাপিস হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। আবার টিকেট আছে এমন যাত্রীরা ভিড়ের চাপে ট্রেনে উঠতেই পারছেন না। উঠতে পারলেও নিজের সিটে বসতে পারছেন না। তবে রেল কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ট্রেনে নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন ঈদযাত্রা চলছে।
ট্রেনের জানালা দিয়ে ভেতরে প্রবেশের আপ্রাণ চেষ্টা চলে। অনেকে মহিলা ট্রেনে ওঠার জন্য পুলিশের সহায়তা চাইছেন- এমন দৃশ্য নজরে এসেছে। ছাদে উঠতে রেল পুলিশের সমস্ত বাঁধা উপেক্ষা করে শত শত যাত্রী ট্রেনের ছাদে উঠে বাড়ি ফিরছেন। জায়গা না পেয়ে প্রতিটি ট্রেনের দ্বিতীয় শ্রেণির বাথরুমেও যাত্রীরা ঠাঁই নিয়েছে। নীলসাগর এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, ধূমকেতু এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেসে এমন দৃশ্য নজরে পড়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, কমলাপুরে আসার পথেই বিমানবন্দর থেকে বিনা টিকেটের যাত্রীরা ট্রেনে ওঠে এবং সিট দখল করে নেয়। এ কারণে কমলাপুরের অপেক্ষামাণ যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে পারে না। উঠলেও সিট পায় না। গতকাল শনিবার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে কয়েকটি ট্রেন ১ ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। অধিকাংশ ট্রেনই ২৫ থেকে ৩০ মিনিট দেরিতে কমলাপুর স্টেশন ছেড়েছে বলে জানিয়েছেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার। নিজ কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, এ বছর ট্রেনে সবচেয়ে নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন ঈদযাত্রা হচ্ছে। প্রতিটি ট্রেনই সময় মতো স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে। তবে কয়েকটি ট্রেন ২০ থেকে ৪০ মিনিট দেরিতে ছেড়ে গেছে। এটাকে শিডিউল বিপর্যয় বলা যাবে না। যাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছে। যাত্রীরা যেন নিরাপদে, নির্বিঘেœ, দুর্ঘটনামুক্ত এবং ভোগান্তি ছাড়াই নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে পারেন সেটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। তার দাবি, এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি।
তিনি বলেন, শনিবার দুটি ঈদ স্পেশাল ট্রেন, ৩৯ জোড়া আন্তঃনগরসহ ১২২টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। একটি ট্রেনের মোট আসনের ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকেট বা দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত আছে। সে হিসাবে আমাদের কাউন্টার থেকে স্ট্যান্ডিং টিকেট বিক্রি চলছে। ঈদযাত্রা শেষে ট্রেনের ফিরতি টিকেট বিক্রি শুরু হবে ১ মে থেকে।
মহাসড়কে মানুষের ঢল : ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। শনিবার ভোর থেকেই যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, টঙ্গী স্টেশন রোড, বোর্ড বাজার, কোনাবাড়ী, শ্রীপুর, মাওনা, কালিয়াকৈরের মৌচাক, সফিপুর ও চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। রাতের বেলায় ট্রাক, পিকআপ ও পণ্যবাহী গাড়িতেও মানুষ বাড়ি ফিরছে। বাসচালক ইদ্রিস আলি জানান, তিনি একটি ট্রিপ নিয়ে ময়মনসিংহ যাচ্ছেন। দ্রুত ফিরে এসে আরেকটি ট্রিপ ধরতে হবে। যাওয়ার সময় যাত্রী পাওয়া গেলেও আসার সময় খালি আসতে হয়, তখন লোকসান গুনতে হয়। তাই ভাড়া একটু বেশি নিতে হচ্ছে।
বাস টার্মিনালে চাপ কম : রাজধানীর গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের চাপ নেই। শনিবার সকাল ৮টার মধ্যে দূরপাল্লার বাসগুলো ছাড়তে শুরু করে। তাই দুপুর ২টা পর্যন্ত তেমন চাপ ছিল না কোনো কাউন্টারে। বিভিন্ন জেলা থেকে আবার বাসগুলো ফিরে এলে সন্ধ্যা থেকে চাপ বাড়বে বলে জানিয়েছেন কাউন্টারের লোকজন। এখন মৌসুমি বাসের ভিড় রয়েছে। তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের তুলে রওয়ানা হচ্ছে। শনিবার সকালের দিকে টার্মিনালগুলোতে মানুষের ভিড় ছিল। ঈদের আগেই বেশ কদিনের ছুটি মেলায় ঘরেফেরা দূরপাল্লার যাত্রীর চাপ কম থাকলেও এখন ঢাকার নিকটবর্তী জেলার মানুষের ঘরমুখো হওয়ার কারনে মহাখালী ও গাবতলীতে কিছুটা চাপ বাড়বে।
মহাখালী বাস টার্মিনালে ওবায়দুল কাদের : সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সড়কের অবস্থা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। এবার বড় ধরনের কোনো ভোগান্তি হবে না। তবে গণপরিবহনে যে বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে না সেটা আমি অস্বীকার করব না। গতকাল শনিবার মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে সার্বিক ঈদযাত্রা পরিস্থিতি নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় এবার ঈদ সবার ভালোভাবে কাটবে। এবার সড়কের অবস্থা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক ভালো। ফোরলেনের কাজ চলার কারণে কোথাও কোথাও সামান্য অসুবিধা হলেও বড় ধরনের কোনো যানজট হচ্ছে না। এবার সড়কের কোথাও বড় ধরনের কোনো ভোগান্তি হবে না বলেই আমি মনে করি। আমরা সড়কের অবস্থা মনিটরিং করছি। থানা পুলিশ এবং হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে। এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে। গাজীপুরের যে জায়গাটায় আগে যানজট ছিল, সেখানেও এখন স্বাচ্ছন্দ্যে গাড়ি চলছে। স্বস্তিতেই মানুষ ঘরে ফিরবে এবং নিঃশেষে কর্মস্থলে ফিরে আসবে।
যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ মিথ্যা নয়। এই অভিযোগ আমি অস্বীকার করছি না। আমরা কিছু পরিবহনকে জরিমানা করেছি। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের বলব, এ বিষয়টির দিকে আরো বেশি করে নজর দিতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়