৬১ জেলা পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা : দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা

আগের সংবাদ

সংঘর্ষের সূত্রপাত যেভাবে

পরের সংবাদ

নানা ইস্যুতে চাপে রাখার কৌশল

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য : গণতন্ত্র সম্মেলনে না ডাকা, র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা, ইউক্রেন ইস্যুতে চাপ, কোয়াড-আইপিএসে যোগদান, চীনকে ঠেকাতে ওয়াশিংটনকে সহায়তা না করা এবং মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে ব্যাপক চাপের মধ্যে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের দুরবস্থা দেখতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ধর্মীয়বিষয়ক দূত রাশাদ হোসাইন ঢাকা এসেছেন। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বিষয়ে জানতে ওয়াশিংটনের আগে কোনো দূতকে পাঠায়নি। এটিও বাংলাদেশ সরকারের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টির কৌশল বলে মনে করছেন অনেকে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঠিক কোন ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের ওপর চাপ দিচ্ছে তার পুরোটা এখনো প্রকাশ হয়নি। সম্প্রতি দেশ দুটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে সচিব পর্যায়ে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। সামনে আরো হবে। তবু ঢাকাকে চাপে রেখেছে ওয়াশিংটন। এর নেপথ্যে কী? বিশ্লেষকরা বলেছেন, কেবলমাত্র বাংলাদেশের একারই সংকট নয় এটা; পুরো এশিয়াই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন খবরদারির মোকাবিলা করছে। যুক্তরাষ্ট্র এই মুহূর্তে অনুভব করছে, ‘হয় তুমি আমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে।’ এটাই হয়তো মূল কারণ।
জানতে চাইলে কূটনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ জমির ভোরের কাগজকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশ কোয়াডে যোগ দিক, ওরা চায় বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করুক, ওরা চায় বাংলাদেশ রাশিয়ার বিপক্ষে থাকুক। কিন্তু বাংলাদেশ কোনোটাই করছে না। এজন্য একটু চাপ দিচ্ছে। প্রবীণ এই কূটনীতিকের মতে, এসব করে লাভ নেই; বরং ওরা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক। এটা না করে ‘সংক্রামক ব্যাধির’ মতো এটা-ওটা করছে। তাতে কোনো লাভ হচ্ছে কী?
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হিসেবে দেখা না হলেও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন যে হয়েছে সেটা নিশ্চিত। তাদের মতে, বাংলাদেশ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ হলেও বর্তমানে নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির যে পরিবর্তন ঘটছে তার অন্যতম লক্ষ্য চীনকে ঠেকানো। সর্বশেষে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট না দেয়ার কারণে ওয়াশিংটন ঢাকার প্রতি খুশি নয়।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র- কথাটি স্বীকার করে নিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কমিটির এক বৈঠক শেষে বলা হয়েছে, শ্রম আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্রমাগত চাপ’-এর বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) বাতিল করার পর সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেয়নি। তেমনি র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য গত চার মাস ধরে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বন্ধ ছিল। তবু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
অনেকে আবার যুক্তরাষ্ট্রের এসব বিষয়কে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন। নির্বাচনের বাকি আর দুই বছরেরও কম সময়। আগের কয়েকটি নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ছিল। আগামী নির্বাচন কি একই ধাঁচের হবে? কেউ আবার বলছেন, বিষয়টির সঙ্গে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা জড়িত। বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের

প্রতিপক্ষ চীনের দিকে বেশি ঝুঁঁকে আছে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের হাতে যত সব হাতিয়ার আছে, সেগুলো কাজে লাগাচ্ছে। কেউ আবার বলছেন, দেশের ভেতরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ (বিএনপি-জামায়াত) মার্কিন লবিস্টদের পেছনে টাকা ঢালছে। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান আচরণের পেছনে এ বিষয়টিও কাজ করছে। বিশেষ করে সরকারের তরফে পার্লামেন্টে বলা হয়েছে, বিএনপি প্রায় দুই মিলিয়ন ডলার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্টদের পেছনে ব্যয় করেছে। এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে।
তবে অনেকে আবার এও বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সদ্ভাবের যথেষ্ট মূল্য আছে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক থাকলে, গোটা পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক থাকে। ট্রাম্পের আমলে এতসব নিয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কারণ ছিল না। ট্রাম্প ব্যবসা-বাণিজ্যের বাইরে খুব বেশি মাথা ঘামাননি। কিন্তু জো বাইডেন এসে সেই জায়গায় পরিবর্তন করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন বিশ্ব নেতৃত্ব ধরে রাখাকে অধিক গুরুত্ব দেয়ায় নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ করা ছাড়া বিকল্প নেই বাংলাদেশের। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ইস্যুতে বাংলাদেশ নিজস্ব শক্তিশালী অবস্থান রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এক জায়গায় ঠিক থাকলেও অনেক জায়গায় ঠিক না থাকার ফলে সম্পর্কটা অস্বস্তিতে পড়েছে। সম্প্রতি অভিজিৎ হত্যার এক পলাতক আসামিকে খুঁজতে পাঁচ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এতদিন পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন ঘোষণাকে অনেকেই মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র সন্দেহ করে পলাতক আসামি বাংলাদেশের মধ্যেই আছে। এ রকম একটা অস্বস্তিকর সময় পার করছে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, সম্পর্কে জটিল রূপের আভাস থাকলেও এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ফাটল ধরাবে বলে মনে হয় না। কারণ ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপটে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক অনেক গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু দেশটি বাংলাদেশকে নানামুখী চাপে রেখেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে এই বিশ্লেষক বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ওয়াশিংটনের মাখামাখি সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও মানবাধিকার বিষয়ে দেশটির বিরুদ্ধে নেতিবাচক কথা এনেছে। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে সখ্যতা থাকলেও বেশ কিছু বিষয়ে আপত্তি তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়