সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে পাথওয়ের ইফতার বিতরণ

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জে ভারসাম্যের কূটনীতি : ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দুই পরাশক্তির চাপ, কোয়াড-আইপিএসে যোগ দিতে মার্কিন তাগিদ, চীনের মানা

পরের সংবাদ

ডায়রিয়া পরিস্থিতি এখনো নাজুক : ধীরে কমছে রোগী > ৩ প্রতিষ্ঠানের ঠেলাঠেলি > পরিস্থিতি মোকাবিলায় টিকা দেয়ার উদ্যোগ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : হাসপাতালে ভর্তি ডায়রিয়া রোগী কিছুটা কমলেও পরিস্থিতি এখনো নাজুক। এবারের ডায়রিয়া দেশ থেকে বহু বছর আগে বিদায় নেয়া ‘কলেরা’র প্রত্যাবর্তনের বার্তা নিয়ে এসেছে। এ নিয়ে সরকারও চিন্তিত। পরিস্থিতি সামাল দিতে কলেরার টিকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মার্চের শুরুর দিকে দেশে যে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছিল সেই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বলা যায়, অনেকটা ধীরেই ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমছে। প্রশ্ন উঠেছে, ডায়রিয়া পরিস্থিতি আকস্মিক এমন বেসামাল হয়ে উঠল কেন? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষও জড়িত। কিন্তু এই ৩ প্রতিষ্ঠান একে অন্যের ওপর দায় চাপাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, দেশে ডায়রিয়ার যে প্রকোপ তা মূলত ঢাকা মহানগর কেন্দ্রিক। ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী কয়েকটি এলাকা থেকে হাসপাতালগুলোতে পানিবাহিত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি আসছে। চিকিৎসকরা বলছেন, বিশুদ্ধ পানির অভাবে সারাদেশে বিশেষ করে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এছাড়া বাইরের পানি ও খাবার খাওয়া, হাত না ধুয়ে খাবার খাওয়া আর অতিরিক্ত গরমের কারণে পরিস্থিতি অবনতি ঘটেছে। ওয়াসার পানি নাগরিকের বাসাবাড়ির কলে আসা পর্যন্ত তা কতটা বিশুদ্ধ থাকছে সেটি দেখার বিষয়। কারণ সুয়ারেজের লাইন ও পানির লাইন অনেক সময় লিক হয়ে গিয়ে জীবাণু ঢুকে যেতে পারে। খাওয়া ও ব্যবহারে শতভাগ নিরাপদ পানি যতক্ষণ পর্যন্ত দেয়া না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত ডায়রিয়া রোগী থাকবে। এই প্রক্রিয়ায় সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষও জড়িত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ) ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসাসহ সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ে একাধিকবার সভা করেছি। তারা জানিয়েছেন, পানি সরবরাহের বিষয়টি তারা দেখবেন।

পানি বিশুদ্ধ করতে যদি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করতে হয় তাহলে সেই কাজটি সিটি করপোরেশনের উদ্যোগেই করতে হবে। কারণ ঢাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার যে সুবিধা রয়েছে, তা এনজিও পার্টনারদের সহযোগিতায় পুরোটাই সিটি করপোরেশন পরিচালনা করে। সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে আমাদের কাছে সহায়তা চাইলে আগের মতোই সহায়তা দেয়া হবে।
আর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বা পানি বিশুদ্ধ করার দায়িত্ব ওয়াসার। অন্যদিকে ওয়াসার পানির কারণে কেউ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে মানতে রাজি নয় ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান জানিয়েছেন, তাদের পানিতে ডায়রিয়া বা কলেরার কোনো জীবাণু পাওয়া যায়নি। আর স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব স্বাস্থ্য বিভাগের।
এদিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ কমাতে কলেরা টিকাদান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রাজধানীর পাঁচটি এলাকাকে হটস্পট ধরে এ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে মে মাসে। রাজধানীর ডায়রিয়া প্রবণ ৫টি এলাকা হলো- যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও সবুজবাগ। এসব এলাকায় মুখে খাওয়ার কলেরা টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। আর জুন মাসে দেয়া হবে টিকার দ্বিতীয় ডোজ। তবে এ টিকার বাইরে থাকবে এক বছরের কম বয়সি শিশু ও গর্ভবতী নারীরা।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালের তথ্য বলছে, ৫/৬ দিন আগেও এই হাসপাতালে রোগীর অতিরিক্ত চাপ ছিল। গড়ে দৈনিক ১৩শর বেশি রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হতো। চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের। এখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা দৈনিক রোগীর সংখ্যা হাজারে নেমেছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১১ এপ্রিল রোগী ছিল ১ হাজার ১৫৪ জন। ১২ এপ্রিল ১ হাজার ১০৩ জন, ১৩ এপ্রিল এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ২০ জনে। তবে বৃহস্পতিবার রোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ে। ওই দিন হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫৮ জন। শুক্রবার রোগীর সংখ্যা হাজারের নিচে নামে। ওই দিন হাসপাতালে আসা রোগীর সংখ্যা ছিল ৯৬২ জন। এই হিসাবে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত এই হাসপাতালে রোগী এসেছে ৮৩১ জন। শুক্রবার একই সময়ে রোগীর সংখ্যা ছিল ৮১১ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত প্রতি বছর দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হয় এপ্রিল মাসে। এরপর ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ এই রোগের ব্যাপকতা চলতে থাকে। কিন্তু এই বছর ডায়রিয়া শুরু হয়েছে মার্চের প্রথম দিকেই। শুধু আগেভাগেই শুরু হয়েছে তাই নয়, যে কোনো বছরের তুলনায় এ বছর রোগীর সংখ্যাও রেকর্ড সংখ্যক। আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ৬ মার্চ থেকে তারা ডায়রিয়ার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করেন। ২২ তারিখ একদিনে ১ হাজার ২৭২ জন রোগী ভর্তি হয়। এর আগে এখানে কখনোই একদিনে এত সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়নি। ২৮ তারিখ থেকে এই প্রতিষ্ঠানে রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল গড়ে দৈনিক ১৩শর বেশি। এই হাসপাতালে আসা রোগীদের ৪০ ভাগই আসছে মারাত্মক পানিশূন্যতা নিয়ে। ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এমনকি হাসপাতালে নেয়ার পথে বা পৌঁছানোর আগেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল আলম ভোরের কাগজকে বলেন, চলতি মাসের ৯ তারিখ থেকে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। প্রতিদিনই কমছে। একপর্যায়ে এই সংখ্যাটা ৩ থেকে ৪শতে নেমে আসবে। প্রতিবারই পরিস্থিতির ধীরে ধীরেই উন্নতি হয়। এখনো যাত্রাবাড়ী থেকেই রোগী বেশি আসছে। এছাড়া মোহাম্মদপুর, মিরপুর, দক্ষিণখান, সবুজবাগ এলাকা থেকেও রোগী আসছে।
ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা সম্পর্কে তিনি বলেন, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেশের যে কোনো হাসপাতালে হয়ে থাকে। অতিমাত্রায় ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে যে পানিশূন্যতা দেখা দেয় সেটি পূরণ করাই প্রধান কাজ। তাই ডায়রিয়া হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইনসহ তরল খাবার বেশি করে খেতে হবে। এতেও যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় দ্রুত সময়ে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনের সময় দরকারি চিকিৎসা না পেলে রোগীর অবস্থা খারাপ হতে পারে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট একটি হাসপাতালে আসার জন্য দেরি না করে নিকটবর্তী যে কোনো হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে গিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়