অভিনয় ক্যারিয়ারে এক যুগ পূর্ণ করলেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। ২০০৯ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার খেতাব জয় করে ২০১০ সালে প্রথম নাটকে অভিনয় করেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত প্রথম ওয়েব ফিল্ম ‘রেডরাম’। বর্তমানে দশর্কদের পছন্দের চাহিদায় শীর্ষে অবস্থান করছেন তিনি। অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন রোমান রায়

অভিনয়ে এক যুগ পূর্ণ করলেন। আপনার অনুভূতি কেমন?
অবশ্যই ভালো লাগছে। যদিও বলতে এক যুগ মনে হচ্ছে। আমার প্রথম নাটক ১২ বছর আগে প্রচারিত হয়েছিল। নাটকে নিয়মিত মনোযোগ দিয়ে কাজ করা শুরু করেছি হয়তো ৫ বছর আগে।

ক্যারিয়ারের দীর্ঘ এত বছরে কতটা সংগ্রাম করতে হয়েছে?
এখানে সবাই আমাকে যথেষ্ট সম্মান ভালোবাসা দিয়ে রেখেছে। আমি যে এতদূর আসতে পেরেছি এখানে আমার সহকর্মীদের অবদান রয়েছে। তারা যদি আমাকে এই পেশার প্রতি সিরিয়াস হতে না বলতেন, তাহলে হয়তো আমি হতাম না। হয়তো আমার চেষ্টাতেও কমতি থাকত। সেদিক থেকে বলব আমার অ্যাক্টিং ক্যারিয়ারের জার্নিটা খুব সুন্দরভাবে উপরের দিকে গিয়েছে। এই সময়টাতে অনেক ভালো ভালো নির্মাতা, শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছি। আর বাধাটা ছিল আমার নিজের দিক থেকে। শুরুর দিকে যখন বাইরের দেশ থেকে এখানে এসেছি তখন এডজাস্ট করতে একটু সমস্যা হচ্ছিল। প্রথম দিকে ভাষা নিয়ে আমার সমস্যা হচ্ছিল। পরে নিজের চেষ্টা ও চর্চার মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠতে পেরেছিলাম।

ছোট থেকেই কি মিডিয়াতে কাজ করার স্বপ্ন ছিল?
অভিনয় করব ছোট থেকে এমন স্বপ্ন ছিল না। আমি সবসময় চেয়েছি এমন একটা কাজ করব, সেটা যে পেশায় হোক। যেখানে কাজের জন্য সবাই আমাকে চিনবে জানবে। সেটা পর্দায় দেখবে, নিউজে আমার খবর পড়বে। তখন থেকেই চেয়েছি যে কাজটাই করব সে কাজ দিয়ে যেন শীর্ষে যেতে পারি। ছোটবেলায় অভিনয়ের চেয়ে আমি স্পোর্টস পছন্দ করতাম। নিজেও দৌড়ঝাঁপ করতে পছন্দ করতাম। সে সময়ে অনেক মেডেলও জিতেছিলাম। তখন চিন্তা করতাম বাংলাদেশে আসলে আমি বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করব। বাংলাদেশে আসার পর সেটা পরিবর্তন হয়ে যায়। লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করি। তারপর সেটা জিতে যাওয়ার পর লাইফের ট্র্যাক চেঞ্চ হয়ে যায়।

এক যুগে কতটা প্রাপ্তি ঘটেছে?
আমি যতটুকু প্রাপ্য তার চেয়ে বেশি পেয়েছি। অবশ্যই অনেক গুণ বেশি পেয়েছি। যে পরিমাণ ভালোবাসা, পরিচিতি, সহযোগিতা আমার দর্শক, সহশিল্পী, নির্মাতাদের কাছ থেকে পেয়েছি তার জন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। অল্প বয়স থেকে আমার ক্যারিয়ার শুরু। তাই অনেকে ছোট বোন বা মেয়ের মতো করে সবার কাছে নিয়েছে। এবং আমাকে আপন মনে করেই শিখতে সহযোগিতা করেছেন। সেদিক থেকে বলব আমি অনেক অনেক লাকি। এত দ্রুত সবার আপন হয়ে গিয়েছি এটা ভাগ্যের ব্যাপার।

ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার নিয়ে
পরিকল্পনা কী?
এই যে অভিনয়ের ১২ বছর হবে এটাও কোনো পরিকল্পনা ছিল না। আল্লাহ যদি চান ভালো কাজ করতে পারলে দর্শকরা যেদিকে নিয়ে যান সেদিকে যাব।

আপনার অভিনীত প্রথম ওয়েব ফিল্ম ‘রেডরাম’ কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি। আমাদের দেশে তো থ্রিলারধর্মী কাজ খুব বেশি হয় না। তাই আমাদের কাজটা সবাই খুব পছন্দ করছেন। সম্প্রতি ‘রেডরাম’ নিয়ে একটা বিশেষ শোয়ের আয়োজন করেছিলাম। সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম কী পরিমাণ পছন্দ করেছেন সবাই। সবার মুখে প্রশংসা শুনে ভালো লেগেছে। অনেকের কাছ থেকে এটাও শুনেছি কেন হলের জন্য বানানো হয়নি। যতটুকু চেয়েছিলাম তার চেয়ে বেশি পেয়েছি।

ওয়েব ফিল্মে নিয়মিত দেখা যাবে?
ভালো গল্পের হলে অবশ্যই দেখা যাবে। সেটা নাটক বা ওটিটি কনটেন্ট কিংবা সিনেমা হোক। যেটার জন্যই আসুক ভালো গল্প হলে করব। আমি আসলে ভালো গল্পের কাজ করতে চাই। ভালো একটা প্রজেক্টর অংশ হতে চাই। সেটা যে মাধ্যমই হোক না কেন। আমি ভালো কাজের সঙ্গে আছি।

দর্শকরা আপনাকে বড়পর্দায় কবে দেখতে পাবেন?
সিনেমার প্রতি আমার আগ্রহ কম বা বেশি ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। আমি তো বললাম ভালো গল্পে কাজ করতে চাই। এখন যদি হুট করে একটা সিনেমায় কাজ করলাম এবং সেটা মোটামুটি হলো। তখন কিন্তু সে আপনারাই বলবেন এত বছর পর সিনেমায় কাজ করল সিনেমাটা ভালো হলো না। ওয়েব ফিল্ম করার সময়ও একই চিন্তা করে করেছি। যেটা করব সেটার গল্প খুব স্ট্রং হতে হবে। সবকিছু নির্ভর করে একটা ভালো গল্পের ওপরে। সিনেমার ক্ষেত্রেও তাই করতে চাই। যেন হল থেকে বের হয়ে সবাই প্রশংসা করেন। এটা শুনতে চাই না যে হ্যাঁ হয়েছে খারাপ না। এ জিনিসটা চাই না। সেরকম গল্প যেদিন আসবে সেদিন করব।

অভিনয়ে চরিত্র নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
চরিত্র নিয়ে যে একই গণ্ডিতে থাকতে চাই না সেটা এতদিনে সবাই বুঝে গিয়েছে। আমি সবসময় ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে কাজ করতে আগ্রহী। আমি চাই প্রতিটা চরিত্র খুব কঠিন, চ্যালেঞ্জিং হোক। যাতে কাজটা দ্রুত করে ফেলতে পারি।