ভালোবাসা এখন ‘ভার্চুয়াল’, আবেগেও পড়েছে টান : তবুও বসন্ত জেগেছে বনে

আগের সংবাদ

সংস্কৃতির চর্চা জোরদারের তাগিদ > বাঙালির প্রাণের মেলার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী : হাতে নিয়ে বই পড়ার আনন্দ অনেক

পরের সংবাদ

জনগণের বন্ধু বঙ্গবন্ধু

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ নামক পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল ভূখণ্ডের অধিবাসী ‘জনগণকে’ বঙ্গবন্ধু আপন করে নিয়েছিলেন, বিনিময়ে জনগণও তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘জাতির পিতা’, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ প্রভৃতি বিশেষণে ভূষিত করেছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন প্রকৃত মানবতাবাদী। তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’-তে তিনি বলেছেন, ‘… আমি মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখি। রাজনীতিতে আমার কাছে মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান বলে কিছু নাই। সকলেই মানুষ।’ (পৃ. ১৯১)। এটি বঙ্গবন্ধুর ‘আত্মপরিচিতি’। এছাড়াও তার সান্নিধ্যে যারা এসেছেন তারাও বঙ্গবন্ধুর মানবতাবাদী চেতনার দ্বারা সম্মোহিত হয়েছেন। তার ঘনিষ্ঠ অনুসারী জননেতা তোফায়েল আহমেদ বলছেন, ‘দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় তার স্মৃতি অমর হয়ে আছে, থাকবে বহুকাল-চিরকাল।… শ্রদ্ধা করার মতো ব্যক্তিত্বের অধিকারী মানুষটি খুব সহজেই মানুষকে কাছে টেনে নিতেন। নাম মনে রাখতে পারতেন মাঠ পর্যায়ের কর্মীদেরও। সঠিক সময়ে শতভাগ নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের বেলায় তার কোনো জুড়ি ছিল না। তিনি যা কিছু বলতেন, চিন্তাভাবনা করে বলতেন এবং একবার যা বলতেন, সেখান থেকে একচুলও নড়চড় করতেন না।… আর তাই তো তিনি জনগণের নেতা হয়েছেন। হয়েছেন নেতারও নেতা।’ (তোফায়েল আহমেদ ২০১১)।
১৯৪৩ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ লোক মারা যাচ্ছিল তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলকাতার ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন। এ সময় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন সিভিল সাপ্লাই মন্ত্রী। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। গ্রাম থেকে লাখ লাখ লোক শহরের দিকে ছুটছে স্ত্রী-পুত্রের হাত ধরে। খাবার নাই, কাপড় নাই। ইংরেজ যুদ্ধের জন্য সমস্ত নৌকা বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছে। ধান, চাল সৈন্যদের খাওয়াবার জন্য গুদাম জব্দ করেছে। যা কিছু ছিল ব্যবসায়ীরা গুদামজাত করেছে। ফলে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দশ টাকা মনের চাল চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকায় বিক্রি করছে। এমন দিন নাই রাস্তায় লোকে মরে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। আমরা কয়েকজন ছাত্র শহীদ সাহেবের কাছে গিয়ে বললাম, ‘কিছুতেই জনসাধারণকে বাঁচাতে পারবেন না, মিছামিছি বদনাম নেবেন।’ তিনি বললেন, ‘দেখি চেষ্টা করে কিছু করা যায় কি না, কিছু লোক বাঁচাতে চেষ্টা করব।’ (পৃ. ১৭)।
এ সময় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আদেশে লঙ্গরখানা চালু করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বলছেন, ‘আমিও লেখাপড়া ছেড়ে দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়লাম। অনেক লঙ্গরখানা খুললাম। দিনে একবার করে খাবার দিতাম। মুসলিম লীগ অফিসে, কলকাতা মাদরাসায় এবং আরো অনেক জায়গায় লঙ্গরখানা খুললাম। দিনভর কাজ করতাম, আর রাতে কোনোদিন বেকার হোস্টেলে ফিরে আসতাম, কোনোদিন লীগ অফিসের টেবিলে শুয়ে থাকতাম।’ (পৃ. ১৮)।
১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সংবর্ধনা সভায় আসেন শেখ মুজিব। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রাণের জোয়ার নেমেছিল। ১০ লাখ মানুষের পদভারে গোটা উদ্যানের সবুজ ছেয়ে গিয়েছিল। গোধূলিলগ্নের অদ্ভুত সুন্দর আলোর আভায় মঞ্চে আসেন শেখ মুজিব। কেঁপে ওঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সমবেত সবার, জাতির কৃতজ্ঞতা, বাঙালি মনের আকাক্সক্ষার বিস্ফোরণ ঘটে একটি কণ্ঠে, আজ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু, বাংলার বন্ধু, যিনি ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও বাঙালির জয়গান গেয়েছেন। (তোফায়েল আহমেদ ২০১১)।
মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার বিনিময়ে জনগণের কাছ থেকে যে আস্থা বঙ্গবন্ধু অর্জন করেছিলেন সে কারণে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র সৃষ্টির আগেই, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর দেশের শাসনভার তার হাতে চলে এসেছিল। ‘নির্বাহী, বিচার বিভাগ এবং আইনসভাসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের এসব কাঠামোর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত কর্তৃত্ব স্থাপনের বিরল ঘটনা ইতিহাসবেত্তাদের নিকট অবিশ্বাস্য বলেই প্রতীয়মান হবে, সন্দেহ নাই। চিন, ভিয়েতনাম, কিউবা বা রাশিয়ার স্বাধীনতা বা মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসেও এমনটি ঘটেনি।’ (অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ২০১১)। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালি জাতির নিরঙ্কুশ ‘ম্যান্ডেট’ লাভ করেন। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে লাখো মানুষ ঘোষিত ইশতেহারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক, রাষ্ট্রপতি ও জাতির পিতা হিসেবে অনুমোদন করে; যা দেশি-বিদেশি সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ‘জনগণের সার্বভৌমত্ব’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের রক্তাক্ত অভ্যুদয় ঘটেছে। জনগণের সঙ্গে রাজনীতি করতে করতে বঙ্গবন্ধুর জীবনযাপন এমনই হয়ে পড়েছিল যে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে গণভবনে কিংবা রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বঙ্গভবনে বাস করতেন না। আর খুনি মোশতাক গং এ সুযোগই কাজে লাগিয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে মূলত বাংলাদেশে ‘জনগণের সার্বভৌমত্ব’ হত্যার প্রচেষ্টা করা হয়। এএএল খতিব তার ‘হু কিলড মুজিব’ শীর্ষক গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে এদেশের জনগণ নিজেদের এতিম ভাবার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলছেন, ‘জনগণের মানসিকতা এমন অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ভীতিকর ছিল ঠিক যেন তারা বঙ্গোপসাগরের দমিয়ে রাখা সন্তান-সন্ততি, হয়তো এটা একটা সাইক্লোন কিংবা ধ্বংস হতে পারে। বিপদ হতে সতর্ক থাকার জন্য খুনি মোশতাক হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকা থেকে বিচ্যুত হওয়ার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিল। যদি কেউ জনগণের রোষাগ্নিতে পতিত হয় তাহলে মেজররাই হবে।’ (পৃ. ২৪)।
তবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে শারীরিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে দিয়ে জনগণের সার্বভৌমত্বের ক্রিয়াশীলতা সাময়িকভাবে থমকে দেয়া সম্ভব হলেও, বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনার শাশ্বত প্রকৃতির কারণে খুনিচক্র তা চিরতরে স্তব্ধ করতে পারেনি। পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশে দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সংগ্রাম, নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও সরকার পরিচালনার কারণে জনগণের সার্বভৌমত্ব সফলভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের গতিকেও তা বেগবান করেছে। এই সঙ্গে ত্যাগের মহিমায় দেদীপ্যমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাসঙ্গিকতা সূর্যের মতো উজ্জ্বল স্থান লাভ করেছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভোররাতে সাবেক ও কর্মলত একদল সেনা কর্মকর্তার হাতে প্রাণ হারান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু পরিবারের অধিকাংশ সদস্যও সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক ধারাবাহিকতায় দীর্ঘস্থায়ী ছেদ পড়ে। সামরিক স্বৈরতন্ত্রের ঘোর অমানিশায় তা পথ হারায়। একের পর এক আরো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড আর অভ্যুত্থানের মধ্যে দেশ পাক খেতে শুরু করে। সামরিক স্বৈরতন্ত্রের গাঢ় প্রচ্ছায়া দীর্ঘ সময়ের জন্য দেশকে গ্রাস করে। চরম অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা দেশকে টালমাটাল করে দেয়। জনগণকে ভালোবাসার কারণেই বঙ্গবন্ধুকে প্রাণ দিতে হয়েছিল কাপুরুষ ঘাতকদের হাতে।
মানবতাবাদী হওয়ার কারণেই বঙ্গবন্ধু এদেশের জনগণকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে পেরেছিলেন। ‘জনগণকে’ ঘিরেই বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও কর্ম পরিচালিত হতো। তিনি তার বক্তৃতা-বিবৃতিতে অসংখ্যবার ‘জনগণ’ পদবাচ্যটি ব্যবহার করেছেন। প্রকৃতপক্ষে জনগণই ছিল তার চেতনার উৎস। তার হৃদয়ের তন্ত্রীতে অনুরণিত হতো জনগণের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার সুর। মিটিং-মিছিলে, আলোচনা-পরামর্শে, সাক্ষাৎকারে, তার বক্তৃতা-বিবৃতি জনগণকে ঘিরে আবর্তিত হতো। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ ভবনের লনে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু এবং (১৯৭০ সালের নির্বাচনে) জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নবনির্বাচিত সদস্যদের সম্মানে ঢাকা শিল্প ও বণিক সমিতি আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় বক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘… উন্নত জীবনের আশাতেই জনগণ সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করেছিল। কিন্তু তার জায়গায় এ পর্যন্ত তারা এমনভাবে শোষিত হয়েছে যে তাদের মেরুদণ্ডই ভেঙে গেছে।…’ হাজার বছর যাবৎ এদেশের জনগণের ওপর চলে আসা অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনা অনুভূতি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির পথরেখা অঙ্কন করে দিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হওয়ার মাত্র এক বছরের মধ্যে একটি সংবিধান প্রণয়ন করা হয়; শত ষড়যন্ত্রের মধ্যেও দেশ গড়ার কাজ দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যেতে থাকে; ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছার কারণে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সেনাদের বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়; পাকিস্তানি বর্বলতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভারতে আশ্রয় নেয়া ১ কোটিরও বেশি শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়; নতুন সংবিধানের অধীনে ১৯৭৩ সালের মার্চে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়; সমুদ্রবন্দর, রেল যোগাযোগ, সেতু, কালভার্ট প্রভৃতি দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে পুনর্গঠন এবং অবকাঠামো পুনর্বাসন করা হয়; সমাজ উন্নয়নের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিতদের অর্থনৈতিক মুক্তি অঙ্গীকার নিয়ে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকারের কর্মকাণ্ডের কারণে মানুষের মনে ক্রমান্বয়ে দেশ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হতে থাকে। শত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা শাসন পরিচালনার মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌমত্ব যখন ইতিবাচকভাবে পূর্ণমাত্রায় ক্রিয়াশীল ছিল সে পরিস্থিতিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দুই দশক পরে দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ শাসনামলে ১৯৯৬ সালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয়। একই বছর ২ অক্টোবর এজাহার দায়ের করা হয় ধানমণ্ডি থানায়। বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর সূচিত হয় বিচার প্রক্রিয়া।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ গোলাম রসুল ১৯ আসামির মধ্যে ১৫ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন। আসামিদের ১১ জন ছিল পলাতক। এরপর এ মামলার আপিল-শুনানি হয় হাইকোর্টে। হাইকোর্টেও একটি বেঞ্চ এ মামলার দ্বিধাবিভক্ত রায় দিলে সেটি যায় তৃতীয় বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমের বেঞ্চে। তার রায়ে ১২ আসামির ফাঁসির আদেশ বহাল থাকে, তিনজনকে খালাস দেওয়া হয়। অবশেষে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটির সর্বশেষ পর্যায় শুরু হয়। টানা ২৯ কার্যদিবস শুনানির পর ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এভাবে ঘটে। এরপর রায় অনুযায়ী এ যাবৎকাল কয়েকজনের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়েছে। কয়েকজন পলাতক আছে। তাদেরও দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। বাঙালির ললাটে কলঙ্কের কালিমা লেপনকারী এ মামলার রায় আরো অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে তারই কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘জনগণের’ সার্বভৌমত্বের ক্রিয়াশীলতার কারণে ইনডেমনিটি আইন বাতিল হয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌমত্বের ক্রিয়াশীলতার প্রভাবে জাতীয় শোক দিবসকে জন্মদিন হিসেবে পালন করার প্রহসন জনগণের সার্বভৌমত্বের ক্রিয়াশীলতার মাধ্যমে চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। পাশাপাশি জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্মের দোহাই দিয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটকারী যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচারও শেষ পর্যায়ে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এসব কর্মকাণ্ড প্রকৃতপক্ষে জনগণের সার্বভৌমত্বের ক্রিয়াশীলতার লক্ষণ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়