প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
শরীফা বুলবুল : আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে বসন্ত দিনের আবেগে কবিগুরু লিখেছিলেন বিখ্যাত সেই কবিতা- ‘আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে,/এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়,/সখীর হৃদয় কুসুম-কোমল-/কার অনাদরে আজি ঝরে যায়’…। পাহাড়ের কন্যাখ্যাত দার্জিলিংয়ে বসে ঋতুরাজ বসন্ত নিয়ে রবীঠাকুরের লেখা এই কবিতা বা গান এখনো আমাদের পহেলা ফাগুনের অনুষঙ্গ।
আজ সোমবার পহেলা ফাগুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। একই সঙ্গে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। প্রিয়জনের কাছে হৃদয়ের আবেগ, অনুভূতি কিংবা ভালোবাসা জানানোর বিশেষ দিন। আজ এই দিনটি ঘিরে ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা সামাজিকভাবে খানিকটা মুখর আয়োজন থাকবে। যদিও করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর ধরেই সীমিত হয়ে পড়েছে উন্মুক্ত সব আয়োজন। তাই করোনা চলাকালে ভালোবাসা জানাতে বেশির ভাগেরই আশ্রয় হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। নানাভাবে প্রকাশ করবেন নিজেদের আবেগ অনুভূতি। আজ সকাল সাড়ে ৭টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে বসন্ত উৎসব উদযাপন হবে।
ফাগুনের আগুন রঙে রাঙিয়ে ভালোবাসা দিবসের অনুভূতি জানাতে দৃশ্যমান আয়োজনের চেয়ে এখন বিজ্ঞান প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া মাধ্যমেই চোখে পড়বে বেশি। বর্তমান সময়ে ভালোবাসা দিবসে দৃষ্টিকাড়া সাজে সুনির্দিষ্ট কিছু দৃষ্টিনন্দন এলাকাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে আবেগ উচ্ছ¡াস। এর বাইরে যা হয় সবই ডিজিটাল তথা ভার্চুয়াল।
শুধুই কি ভার্চুয়াল? দিনে দিনে আবেগেও পড়েছে টান। আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতির কারণে সব কিছুই এখন অদ্ভুত এক জগতে বন্দি হয়ে গেছে। তাই পহেলা ফাগুন কিংবা বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও এখন সামাজিক মাধ্যম কেন্দ্রিক। যত রঙ আর আবেগ অনুভূতি যেন উপচে পড়ে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ অন্যসব ডিজিটাল মাধ্যমে। আকাশে আগুন ছড়িয়ে
ফুটে থাকা পলাশ, শিমুল কিংবা কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে এখন এসব সামাজিক মাধ্যমেই।
খ্যাতমান কবি-সাহিত্যিকদের অনেকেই বদলে যাওয়া এই সময়ে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন। জীবন যখন ব্যস্ততার মোড়কে বন্দি, আবেগ যখন গতির কাছে জিম্মি তখন ভার্চুয়াল আবেগ আর ভালোবাসাকে ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা’ হিসেবেই মেনে নিচ্ছেন কেউ কেউ। অনেকেই বলছেন, আবেগ-অনুভূতি, ভালোবাসা কিংবা প্রেম তা সে বাস্তবেই হোক আর ভার্চুয়ালই হোক অবশ্যই স্বাগত জানানো যায়। যে বৈরী সময়ে জীবনযন্ত্রণা যখন প্রবল, তখন জীবনকে কোথাও না কোথাও অবমুক্ত করতেই হয়। এমন মতামত জানাচ্ছেন দেশের জনপ্রিয় কবি-লেখকরাও।
জানতে চাইলে একুশে পদক পাওয়া কবি অসীম সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে সবকিছুই। এই বদলের সঙ্গে আমাদের মাধ্যমগুলোও বদলে গেছে। তবে আবেগ কিংবা অনুরাগের তো বদল ঘটেনি। ফেসবুকে কিংবা অন্যকোনো মাধ্যমে ভার্চুয়াল যে ভালোবাসার প্রকাশ করা হয়, তাতে তো ভালোবাসার কমতি নেই। কারণ মাধ্যম ডিজিটাল হলেও আমাদের মন তো ডিজিটাল নয়। তাই ভার্চুয়াল ভালোবাসাও তো ভালোবাসাই।
তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে ভার্চুয়াল জগত এতটাই প্রসারিত হয়েছে যে সবকিছুই ‘আর্টিফিশিয়াল’ হয়ে গেছে বলে মনে করেন কবি নাসির আহমেদ। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, যুগের ধর্ম তো আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। যে দিনটি ঘিরে এত আয়োজন সেই পহেলা ফাগুন কিংবা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস তো আর আমরা অস্বীকার করতে পারি না।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।