তথ্যমন্ত্রী : টিআইয়ের রিপোর্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে

আগের সংবাদ

নীরব মহামারি অসংক্রামক রোগ

পরের সংবাদ

মিরপুর তালবাড়িয়ায় আবারো পদ্মার ভাঙন : সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের আশঙ্কা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নুর আলম দুলাল, কুষ্টিয়া থেকে : পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া-রানাঘাট এলাকায় আবারো পদ্মার তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক থেকে মাত্র ১৫০ গজ দূরে অবস্থান করছে নদী। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে যে কোনো সময় কুষ্টিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে এলাকার প্রায় ৩০০ একর জমির মশুর, কলাসহ নানারকম ফসল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফসল, জমি, ঘরবাড়ি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে কয়েকশ পরিবার।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরজমিন মিরপুর তালবাড়িয়ার রানা খড়িয়া পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গত বর্ষায় যেসব এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, তা অনেক আগেই

নদীতে ভেসে গেছে। মিরপুর-ভেড়ামারা উপজেলার কয়েকটি পয়েন্টে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া ইউনিয়ন, বারুইপাড়া, বহলবাড়িয়া এবং ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া অংশে পদ্মা নদীর পাড়ে অস্বাভাবিক ও ভয়াবহ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকশ একর ফসলি জমি। এতে হুমকির মুখে পড়েছে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কসহ হাজারো বসতবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা। শত শত বিঘা ফসলি জমিও।
মহাসড়ক রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সংসদ সদস্য ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার নিজ ফেসবুক ওয়ালে বিষয়টি পোস্ট করেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, তার নির্বাচনী এলাকা মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া ইউনিয়ন, বারইপাড়া ইউনিয়ন, বহলবাড়িয়া ইউনিয়ন এবং ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া অংশে পদ্মা নদীর পাড়ে অস্বাভাবিক ও ভয়াবহ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যেই এসব ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙনে অনেকের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। এই ভাঙনে খুলনা থেকে পাকশী-ভেড়ামারা পয়েন্টে পদ্মা নদীর উপর লালন সেতু হয়ে পঞ্চগড় পর্যন্ত মহাসড়ক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া ইউনিয়নের তালবাড়িয়া বালুঘাট, বারুইপাড়া ইউনিয়নের মির্জাপুর বালুমহল এবং বহলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাহেবনগর পয়েন্টে দ্রুতগতিতে পাড় ভাঙতে ভাঙতে পদ্মা নদী এই মহাসড়কের মাত্র ১৫০ মিটারের মধ্যে চলে এসেছে। সেই পোস্টে আরো বলা হয়েছে, খুলনা-পঞ্চগড় মহাসড়ক ও মোংলা বন্দরসহ সমগ্র খুলনা বিভাগের সঙ্গে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের যোগাযোগ, পণ্য পরিবহন, আমদানি-রপ্তানিসহ জাতীয় অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিবেচনা করে খুলনা-পঞ্চগড় মহাসড়ক রক্ষায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কৃষক ইয়ারুল। তিনি জানান, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এবার তিনি নদী তীরবর্তী প্রায় ১০ বিঘা জমিতে মশুর চাষ ও কলাবাগান করেছিলেন। গত দুই দিনে নদীর ভাঙনে সব হারিয়ে গেছে। তালবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মেহেদী হাসান অপু জানান, এলাকার কিছু অসৎ মানুষ ভেকু ও স্কেভেটর দিয়ে নদী থেকে মাটি -বালি উত্তোলন করার ফলে এ ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। তিনি জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করায় ঈশ্বরদী এলাকায় নদীতে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। পানি ওই বাঁধে ধাক্কা খেয়ে এ পাড়ে আঘাত করায় ভেড়ামারা বাহিরচর, মিরপুরের বহলবাড়িয়া ও তালবাড়িয়া ইউনিয়নের মানুষ আজ অসহায় হয়ে পড়েছে। এলাকার সমাজসেবক ওদুদ আহমেদ জানান, বহলবাড়িয়া, খাদিমপুরসহ বেশ কয়েকটি মৌজার প্রায় ২০ হাজার মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বাহিরচর, বহলবাড়িয়া, তালবাড়িয়াসহ ৪টি ইউনিয়নের মানুষকে কাফনের কাপড় পরে রাস্তায় নামতে হবে। এছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।
গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে তালবাড়িয়া ইউনিয়নে পদ্মা নদীর ভাঙন-কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলেছে। কিন্তু পানি কমে যাওয়ার অনেক আগেই তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এবার কী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে সেবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্ব¡াবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ জানান, এ ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি ডিপিপি তৈরি করে পাঠিয়েছে। খুব শিগগিরই তা কার্যকরে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তিনি জানান, নদী থেকে বালি উত্তোলন করে নদীর পাড়ে রাখায় বালি থেকে পানি চুয়ে নিচে পড়াও ভাঙনের একটি কারণ বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২০ আগস্ট থেকে ওই একই এলাকায় ভাঙনে অনেক জমি, ফসল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তখন নানা উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও পরে আর কিছু জানা যায়নি।
ওই ভাঙনে তালবাড়িয়া মোবারক বাঁধের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে ৩ কিলোমিটার বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। নদীর অব্যাহত ভাঙনে তালবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রায় কয়েকশ পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাড়ি জমিয়েছেন। ক্রমাগত ভাঙনে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি, ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ৬টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। মূলত তালবাড়িয়া ইউনিয়নটি পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত। আর এ নদীর পাশ দিয়েই রয়েছে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক। এরই মধ্যে তালবাড়িয়া ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হতে চলেছে। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কসহ আশপাশের এলাকা নদীগর্ভে চলে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়