তথ্যমন্ত্রী : টিআইয়ের রিপোর্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে

আগের সংবাদ

নীরব মহামারি অসংক্রামক রোগ

পরের সংবাদ

অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে বীজ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শিশুদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনার নীরব শিকার হয়ে শিশুদের শ্রেণিকক্ষে প্রত্যক্ষভাবে পাঠদান করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে তাদের মানসিক উন্নতিতে ব্যাঘাত ঘটেছে। করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশের ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এবং শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের প্রথম দিকে কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর থেকে স্কুল বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর এবং দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়াসহ এশিয়ার প্রায় ৮০ কোটি শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে।
ইউনিসেফ ও ইউনেসকো বলছে, ক্রমাগত স্কুল বন্ধ থাকার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর পরিণতি অত্যন্ত গুরুতর; যার মধ্যে রয়েছে পড়াশোনার ক্ষতি, মানসিক দুর্দশা, স্কুলের খাবার ও নিয়মিত টিকা না পাওয়া, কাঠামোগত শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি এবং শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি। এই ভয়াবহ পরিণতিগুলোর মধ্যে অনেক এরই মধ্যে অসংখ্য শিশুকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং অনেকগুলো আগামী বছরগুলোতে অনুভূত।
শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে শুধু শিক্ষার পরিবেশ জড়িত নয়, এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে শিশুর শারীরিক-মানসিক বিকাশ, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সামাজিক উন্নতি এবং শিশুর পুষ্টিবিষয়ক সচেতনতা। করোনার কারণে সব বিষয়ে ব্যাঘাত ঘটেছে, যার ফলে শিশু শিক্ষা হচ্ছে না। শিশু শিক্ষার সঙ্গে একটি পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা জড়িয়ে থাকে। যে পরিবার অর্থনৈতিকভাবে যত বেশি সচ্ছল তারা শিশুর জন্য ততবেশি সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। করোনার কারণে অধিকাংশ পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা কমে গেছে। দারিদ্র্যের খাতায় নাম লিখছে অনেক নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবার। যার ফলে এসব পরিবার থেকে শিশুর পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও বাড়িতে বসে পাঠদানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠলেও এ সমস্যার সমাধান করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে।
বৈশ্বিকভাবে পড়াশোনায় ব্যাঘাতের অর্থ হলো লাখ লাখ শিশু শ্রেণিকক্ষে থাকলে যে একাডেমিক শিক্ষা অর্জন করতে পারত তা থেকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বঞ্চিত হয়েছে, যেখানে ছোট ও আরো বেশি প্রান্তিক শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। শিশু শিক্ষায় একাডেমিক শিক্ষার গুরুত্ব রয়েছে। সেসব শিশুর জন্য একাডেমিক শিক্ষা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ যারা চরাঞ্চল, পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করে এবং উপজাতি। এসব শিশুর বেড়ে ওঠা পারিপার্শ্বিক পরিবেশের তুলনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ অনেক বেশি অনুকূল হয় শিক্ষাগ্রহণের জন্য। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে এসব শিশুর নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে।
স্কুল বন্ধ থাকার কারণে এর নেতিবাচক প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে। স্কুল বন্ধ থাকায় তা পড়াশোনার ক্ষতির পাশাপাশি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করেছে, তাদের নিয়মিত পুষ্টিপ্রাপ্তির উৎস কমিয়ে দিয়েছে। প্রান্তিক শিশুদের ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি আরো বেশি খারাপ হয়েছে।
ক্রমে উঠে আসা তথ্য-প্রমাণ দিচ্ছে যে, কোভিড-১৯ শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চহারে উদ্বেগ ও বিষণ্নতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়ে, কিশোর-কিশোরী ও গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীরা অধিকহারে এ সমস্যাগুলোর সম্মুখীন। গ্রামীণ পরিবেশ আর শহরে পরিবেশের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। শহরে বেড়ে ওঠা শিশু করোনা পরিস্থিতিতে যেভাবে বেড়ে উঠছে গ্রামীণ পরিবেশ থেকে শিশুরা সেভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে শিক্ষাগ্রহণের ধরনটা ভিন্ন।
প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুদের অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি করার জন্য স্কুলে খাবার প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বিদ্যালয়ের দীর্ঘসময় অবস্থানরত এসব শিশুর পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও বিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য খাদ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিশুরা এই পুষ্টি চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব বিশেষ করে তাদের ওপর প্রভাব পড়ছে যারা প্রান্তিক শিশু। পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শিক্ষার্থীদের নিবিড় সহায়তা প্রয়োজন। শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য, সামাজিক বিকাশ এবং পুষ্টি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে স্কুলগুলোকে শুধু শেখানোর নির্ধারিত গণ্ডির বাইরেও যেতে হবে। সযতেœ নিবিড় পরিচর্যার ফলস্বরূপ শিশুরা আবার শিক্ষায় নিজেকে আগ্রহী করতে পারবে। এক্ষেত্রে সরকার, পরিবার, শিক্ষক সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
ফারিয়া ইয়াসমিন
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়