প্রজ্ঞাপন জারি : সরকারি-বেসরকারি অফিস অর্ধেক জনবলে আজ থেকে

আগের সংবাদ

বৈধ লবিস্টের প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবহার : বিএনপি-আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ > ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের

পরের সংবাদ

ঢাবি শিক্ষক সমিতি ও ক্ষমতাসীন দলের অভিযোগ : শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন!

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন দেখছে সরকার। ক্ষমতাসীনরা মনে করছে, এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাইরে ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় লিপ্ত তৃতীয় একটি পক্ষ। এজন্য আন্দোলনরতদের আরো সতর্ক থাকার পরামর্শও দিচ্ছেন দলটির নেতারা। একই মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিরও। তারাও বলছেন, একটি বিশেষ মহল এই আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরের অপচেষ্টা করছে বলে প্রতীয়মান হয়। এ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেন তারা। গতকাল সোমবার ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমতউল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগের কথা জানানো হয়।
আন্দোলন চলার মধ্যে গত শনিবার রাতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় শাবির শিক্ষক প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী এই আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়া আরো কেউ জড়িত বা ইন্ধন আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এর পর দিন রবিবার বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও এই আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেন।
এদিকে ঢাবি শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৩ জানুয়ারি শাবির সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের বিভিন্ন ইস্যুতে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন চলাকালে পুলিশকে ব্যবহার করা হয়। যা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। একপর্যায়ে ওই হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করেন। আন্দোলনকে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের মূল দাবি পূরণ হওয়া সত্ত্বেও উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলনে রূপ দেয়া হয়। আন্দোলনের এ রূপান্তরের বিষয়টি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও উদ্বেগের। যা খতিয়ে দেখার দাবি রাখে। এতে আরো বলা হয়, চলমান পরিস্থিতিতে গত রবিবার আন্দোলনকারীরা হঠাৎ উপাচার্যের বাসার পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে, যা অমানবিক ও শিক্ষাঙ্গনের আন্দোলনে একটি অনাকাক্সিক্ষত মাত্রা যুক্ত করেছে।

শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে কোনো সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই বাঞ্ছনীয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে যে ধরনের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপিত হয়েছে তা থেকে প্রতীয়মান হয়, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বাইরে তৃতীয় একটি পক্ষ এ আন্দোলনে ফায়দা হাসিল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। একটি বিশেষ মহল এ আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরের অপচেষ্টা করছে বলে প্রতীয়মান হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে সরকারকে আহ্বান জানাব, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অবিলম্বে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে। পাশাপাশি পুলিশি হামলায় কারো কোনো উসকানি রয়েছে কিনা তাও তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে এই আন্দোলনকে পুঁজি করে সরকারবিরোধী পক্ষ ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। দলটির নেতারা মনে বলছেন, নিকট অতীতেও শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে কৌশলে ঢুকে পড়ে নিজেদের রাজনৈতিক দলের ফায়দা লুটতে উসকানি দিয়ে থাকে তারা। এজন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আরো সতর্ক থাকতে পরামর্শ দলটির নেতাদের।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নিকট অতীতে ছাত্রদের বিভিন্ন যৌক্তিক আন্দোলনেও আমরা দেখেছি, একটি কুচক্রি মহল সেখানে কৌশলে ঢুকে পড়ে। স্কুল ড্রেস পড়েও বড়দের দেখা গেছে আন্দোলনে অংশ নিতে এবং ভিন্ন ফায়দা লুটতে। সবই বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে। আমরা দেখেছি। সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেও অপকর্মকারীরা সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের এ ব্যাপারে আরো সতর্ক থাকতে হবে। তৃতীয় পক্ষ তাদের আন্দোলনে যেন কোনো ফায়দা নেয়ার সুযোগ না পায়। সুষ্ঠু আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে বলেও মনে করেন তিনি।
এর আগে দুপুরে সচিবালয়ে দলটির আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ বিষয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তানের মতো। তাদের দাবি-দাওয়ার প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল। আমরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন নানা দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছি। ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘটও করেছি। কিন্তু কখনো বাড়ির বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করিনি। শুনলাম ভিসির বাংলোতে পানি প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ভিসির জন্য খাবার পাঠানো হয়েছিল সে খাবারও ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। জেলখানার কয়েদিরাও খাবার পায়, পানি পায়। খাবার বন্ধ করে দেয়া, ভিসির বাংলো কিংবা ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়া বা কেটে দেয়ার জন্য চেষ্টা করা এগুলো আন্দোলনের অংশ হতে পারে না, এগুলো প্রতিহিংসামূলক। আমি ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধ জানাব, রাজনৈতিক ক্রীড়ানক হিসেবে তাদের যেন কেউ ব্যবহার না করে। আমি আশা করব এর একটি যৌক্তিক সমাধান হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। যিনি শুরু থেকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনার মধ্যস্থতা করে আসছেন। নাদেল বলেন, রবিবার বিকাল ৩টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমার সর্বশেষ কথা হয় দীর্ঘসময়। পরবর্তী আলোচনা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কখন, কীভাবে হবে, তারা জানতে চায়। আমি তাদের আলোচনাগুলো লিখিতভাবে দিতে বলি। আমি জিজ্ঞেস করি শিক্ষামন্ত্রী আপনাদের যে আহ্বান জানিয়েছেন তাতে সাড়া দিতে আপনারা কতটুকু প্রস্তুত? তখন তারা ভিসির পদত্যাগ ছাড়া কোনো কিছুতেই সন্তুষ্ট হবে না বলে জানান। তাদের বলি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আরেকটু চিন্তাভাবনা করেন। কারণ আলোচনার তো একটা স্পেস লাগবে। শর্ত দিয়ে আলোচনা আগায় না। তারা বললেন, ঠিক আছে আমরা যোগাযোগ করব। এর ঘণ্টাখানের পরে দেখলাম তারা ভিসির সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দিচ্ছে না। সন্ধ্যায় ভিসির বাসার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এভাবে দ্রুত তারা একটার পর একটা সিদ্ধান্ত নেয়। তাতে তো সমস্যা সমাধানে তাদের আন্তরিকতার লক্ষণ দেখছি না। কাজেই আমি মনে করি আন্দোনলটা যদি সত্যিই শিক্ষার্থীদের হাতে থাকত, তাহলে এ রকম হতো না। কারণ তারা যখন আমাদের সঙ্গে কথা বলেন, তখন মনে হয় সমাধানে আগ্রহী। আলোচনা শেষ হলেই দেখা যায় তারা পূর্বের অবস্থানে ফিরে যায়। এ থেকে প্রতিয়মান, বের হয়ে আসার পর তারা হয়তো অন্য কারো সঙ্গে আলোচনা করে বা কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়।
এদিকে শাবি উপাচার্যের অপসারণের দাবির আন্দোলন সম্পর্কে ‘বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য’ ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা অভিযোগ করেন, আমাদের এই যৌক্তিক আন্দোলন সম্পর্কে, দায়িত্বশীল মহলে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর এবং অসত্য তথ্য, উপস্থাপন করা হচ্ছে। এতে আমাদের অহিংস আন্দোলনকে ঘিরে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, এ আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষের কোনো হস্তক্ষপের বা ইন্ধনের অভিযোগ সম্পূর্ণ অযোক্তিক এবং অমূলক।
প্রসঙ্গত, হল প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটার পর উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবি তুলে গতকাল সোমবার ষষ্ঠ দিনের মতো অনশন করছিলেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়