নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে রড মিস্ত্রির মৃত্যু

আগের সংবাদ

ওমিক্রনে ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের : রোগী বেড়েছে ৫ থেকে ৬ গুণ, উপসর্গ নিয়েও হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা

পরের সংবাদ

আন্দোলন অব্যাহত : শাবি উপাচার্যের পদত্যাগ চান শিক্ষকরাও

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফারুক আহমদ, সিলেট ব্যুরো ও নাজমুল হুদা, শাবি প্রতিনিধি : সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
গতকাল রবিবার দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দীর্ঘ বৈঠক শেষে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে চারটি সিদ্ধান্তের কথা জানান শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস। সিদ্ধান্তগুলো হলো- শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ওপর পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়ে সরকার কর্তৃক নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে; অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে যা যা করা দরকার করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি সরকারের এখতিয়ারভুক্ত হওয়ায় শিক্ষকরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন এবং পদত্যাগের ব্যাপারে অতিদ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রতি কোনো ধরনের সহিংসতায় সম্পৃক্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। অনশন করা শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ও অনশনস্থলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারপরও কেউ অনশন ভাঙেননি। নতুন করে অনশনে বসেছেন আরো পাঁচ শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি আলোচনায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী। এক দফা এক দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা শিক্ষামন্ত্রীর বিভিন্ন প্রস্তাবে সাড়া দেননি। ফলে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষার্থীদের আলোচনায়ও মেলেনি কোনো সমাধান। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও অনশন কর্মসূচি অব্যাহত। গতকাল বিকাল পৌনে ৪টা থেকে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেছেন তারা। বাসভবনে পুলিশ ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। রাত পৌনে ৮টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন আন্দোলনরতরা। শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অনশনের ১০০ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষার্থীরা ফের আলোচনায় বসার কথা থাকলেও এ নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশনস্থলে দায়িত্বরত মেডিকেল টিমের তথ্যমতে, সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৬ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অনশনস্থলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১২ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে গণঅনশনের ডাকে সাড়া দিয়ে আরো পাঁচ শিক্ষার্থী অনশনে বসেন।
এর আগে বিকালে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে জানান, অনশনের পরও উপাচার্য পদত্যাগ না করলে তাকে পূর্ণ অবরুদ্ধ করে রাখা হবে। তার বাসায় পানি, বিদ্যুৎসহ সব পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হবে।
বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচির পর সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী নাফিসা আঞ্জুম বলেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে আমাদের বাধ্য করা হচ্ছে আরো কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে। আমরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করছি বিষয়টি ঠিক এমন নয়, আমরা উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেব না। আমরা ওই জায়গায় বসে অনশন করছি, আর সবাই গিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করবেন, আলাপ-আলোচনা করবেন তা হবে না।
এদিকে গত শনিবার রাতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে ভার্চুয়ালি আলোচনায় বসেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তারা টানা দেড় ঘণ্টার বেশি সময়ে আলোচনায়ও কোনো সমাধান হয়নি এ সংকটের। শিক্ষামন্ত্রী বিভিন্ন প্রস্তাব দিলে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা জানান শিক্ষার্থীরা। এমনকি রাতেই শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেন। তবে তারা শিক্ষামন্ত্রীর কোনো প্রস্তাবই মানেননি। এমনকি এ সময় শিক্ষার্থীরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন।
গত শনিবার রাতেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষে মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, শিক্ষামন্ত্রী অনশন ভেঙে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার কথা বলেন। তখন আমরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সময় চাই। পরে আমরা অন্য অনশনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করলে তারা অনশন ভাঙতে রাজি হননি। সে ক্ষেত্রে আমরা আমাদের দাবিতে অনড় থাকব। গতকাল দুপুরে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে এ দাবি নিয়েই আলোচনা হবে বলে জানান তিনি। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফের আলোচনায় বসার কোনো সিদ্ধান্ত শিক্ষামন্ত্রী জানাননি বলে জানা যায়।
এর আগে শিক্ষামন্ত্রীর ভার্চুয়ালি আলোচনার বার্তা নিয়ে গত শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল ক্যাম্পাসে আসে। পরে মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে ভিডিও কনফারেন্সে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার অনুরোধও জানান তিনি। তবে শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত পরে জানাতে চেয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভার্চুয়ালি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তিনি জানান, শিক্ষামন্ত্রী দায়িত্ব নিয়ে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের যেন আইনগত ও একাডেমিক কোনো সমস্যা না হয়, সেটা তিনি দেখবেন। তরুণরা আমাদের দেশের সম্পদ, তাই তাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয় শিক্ষামন্ত্রী বারবার এ বিষয়টি তাদের বলেছেন। তিনি সব সময় আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলেও শিক্ষার্থীদের জানিয়েছেন।
ভিসির পদত্যাগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে নাদেল বলেন, এ ব্যাপারে আগামীকাল আন্দোলনকারীরা লিখিতভাবে প্রস্তাবনা পাঠালে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙার বিষয়ে ইতিবাচক কোনো কথা বলেননি। তারা বলেছেন, সবার সঙ্গে কথা বলে তারা আগামীকাল জানাবেন। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের অভিযোগপত্র বা লিখিত প্রস্তাবনা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে শিক্ষার্থীরা পাঠাননি বলে জানা যায়।
এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদসহ আরো অনেক উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়