আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার : আরসাপ্রধানের ভাই শাহ আলী আটক

আগের সংবাদ

বালু ব্যবসায়ীদের কারণে ৩ মাস ধরে বন্ধ ড্রেজার : নদী পুনরুদ্ধার কাজে বাধা

পরের সংবাদ

ঢাকায় ওমিক্রনের দাপট : রোগী সাড়ে ৬ হাজার, সংক্রমণ ২১ শতাংশ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা গত ২ সপ্তাহ ধরেই চলছে। সংক্রমণের হার পৌঁছে গেছে ২১ শতাংশে। সংক্রমণ বাড়ার এই প্রবণতা ‘অশুভ ইঙ্গিত’ দিচ্ছে বলেই মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত সরকারও। এদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, দেশে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটও দিন দিন বেড়ে চলছে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানান, দেশে করোনা আক্রান্তের ৬৯ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। তিনি বলেন, আমরা ঢাকায় যে নমুনা পরীক্ষা করেছি, জিনোম সিকোয়েন্স করেছি তাতে দেখা গেছে ওমিক্রন (আক্রান্তের) এখন ৬৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যেটা আগে ১৩ শতাংশ ছিল। আমরা গত ১০ দিনের মধ্যেই এই তথ্য পেয়েছি। আমরা মনে করি ঢাকার বাইরেও একই হার হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ে ফেরত দুই নারী ক্রিকেটারের ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার খবর সরকারিভাবে জানানো হয়েছিল। জার্মানির গেøাবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জার (জিআইএসএআইডি) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, নমুনা থেকে ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করে দেশে এ পর্যন্ত মোট ৫৫ জনের ওমিক্রনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তবে সবার ক্ষেত্রে জিনোম সিকোয়েন্সিং হয় না বলে সঠিক সংখ্যাও বলা সম্ভব নয়। ঢাকার বাসাবো, বনানী, মহাখালী, চাঁনখারপুল ও উত্তরায় ওমিক্রনে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। ঢাকার বাইরে যশোরেও ওমিক্রনে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। গত বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জাহিদ মালেক বলেছিলেন, করোনা আক্রান্তদের ১৫ থেকে ২০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। একই দিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন দেশে ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) শুরু হয়েছে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ

প্রকাশ করে গতকাল সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে ওমিক্রন ও ডেল্টা ধরনে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তাতে আমরা কিছুটা হলেও চিন্তিত ও আতঙ্কিত। ডেল্টা ধরনের পুরো সময়েও সংক্রমণ এত দ্রুতগতিতে বাড়েনি। মানুষ বেপরোয়াভাবে চললে এটা বাড়তে থাকবে। আমরা চাই না, সংক্রমণ এভাবে বেড়ে যাক। গত বছর ডেল্টা সংক্রমণের হার ২৯ থেকে ৩০ শতাংশে উঠেছিল। এখন ধাপে ধাপে বাড়ছে, এভাবে বাড়লে ৩০ শতাংশে পৌঁছাতে সময় লাগবে না। হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যাও বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে হাসপাতালে রোগী ভর্তির কোনো জায়গা থাকবে না। তখন চিকিৎসা দেয়া দুরূহ হয়ে পড়বে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, আমরা যদি বেপরোয়াভাবে চলি, সরকারের বিধিনিষেধ না মানি তাহলে সামনের দিনগুলো ভালো কাটবে না।
মন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের বিভিন্ন রকমের মেলা হয়, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান হয়। এখানেও লক্ষ্য করেছি কোনো রকমের মাস্কের ব্যবহার নেই। খুব স্বল্প সংখ্যক মানুষ মাস্ক পরেন। এতে কিন্তু তারা নিজেদের ঝুঁকিতে ফেলছেন।
সংক্রমণ বৃদ্ধি অশুভ ইঙ্গিত- ডিজি হেলথ : এদিকে গতকাল ভার্চুয়ালি দেশের করোনা পরিস্থিতির সার্বিক তথ্য তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম। দেশে ওমিক্রনসহ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের অব্যাহত ঊর্ধ্বমুখী ধারাকে ‘অশুভ ইঙ্গিত’ বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকায় ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। সে তুলনায় অন্যান্য বিভাগে কম। ফলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সরকারি ১১ দফা নির্দেশনা মেনে না চললে পরিস্থিত আরো খারাপ হতে পারে।
সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ওমিক্রনে সংক্রমিত হলে বড় ধরনের সমস্যা হয় না। ক্ষতি কম হয়- এমন ধারণা অনেকের মধ্যেই তৈরি হয়েছে। এটি সত্য নয়। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে করোনায় যারা মারা গেছেন; তাদের ৮০ শতাংশেরই টিকা নেয়া ছিল না। বাকি ২০ শতাংশ নানা ধরনের দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এখনো কোনো ব্যক্তি ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কিনা, সে তথ্য স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে নেই। জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে ১৪ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে।
এক প্রশ্নের উত্তরে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, স্কুলে যায় না, এমন শিশু-কিশোরদের প্রশাসনের সহায়তায় টিকা দেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া শেষ হলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কলকারখানার শ্রমিক, পরিবহন খাতের শ্রমিক ও হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকা দেয়া হবে। সরকার ঘোষিত ১১ দফা নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে সেব্রিনা ফ্লোরা আরো বলেন, সংক্রমণ বাড়ছে। আমরা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। লকডাউনের চিন্তা-ভাবনা আমরা করছি না। দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে এবং সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে চাইলে লকডাউনে যেতে হয় এমন পরিস্থিতি যাতে তৈরি না করি। শুধু পরীক্ষা ও শনাক্ত করলেই চলবে না। রাজধানীসহ সারাদেশে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে বহু মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করছে। এতে করোনার সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। জনগণকে সতর্ক হতে হবে।
সংক্রমণের হার ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ : করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৫৫টি পরীক্ষাগারে ৩১ হাজার ৯৮০টি নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের উপস্থিতি মিলেছে ৬ হাজার ৬৭৬ টিতে। গত বছরের ১৮ আগস্ট, এর চেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছিল। ওই দিন ৭ হাজার ২৪৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে ৪ হাজার ৯৯২ জনই ঢাকা বিভাগের। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪২৭ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত বছরের যা ১৩ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। ওই দিন শনাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, রবিবার ২৯ হাজার ৩০৫টি নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের উপস্থিতি মিলেছে ৫ হাজার ২২২টিতে। মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। শনিবার ২৪ হাজার ২৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। সংক্রমণের উপস্থিতি মিলেছে ৩ হাজার ৪৪৭টি নমুনায়। শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের।
চলতি বছরের সংক্রমণের ১ম সপ্তাহ (৩ থেকে ৯ জানুয়ারি) থেকে ২য় সপ্তাহে (১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি) নমুনা পরীক্ষা, শনাক্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হার চার সূচকই ঊর্ধ্বমুখী। ১ম সপ্তাহে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৩ টি নমুনা পরীক্ষায় ৭ হাজার ২৩৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩৪৮ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের। ২য় সপ্তাহে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৩০টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয় ২৪ হাজার ১১ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯৮৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের। শতকরা হিসাবে নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ। শনাক্ত বেড়েছে ২৩১ দশমিক ৯ শতাংশ। সুস্থতা বেড়েছে ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ৬৮ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৪০৫টি। এর মধ্যে রোগী শনাক্ত হয় ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৭ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৩২০ জন। আর মোট প্রাণহানির সংখ্যা ২৮ হাজার ১৫৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৭ হাজার ৯৯৮ জন এবং নারী ১০ হাজার ১৫৬ জন। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের ৪ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী। বয়স বিবেচনায় ত্রিশোর্ধ্ব ২ জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১ জন, ষাটোর্ধ্ব ৩ জন, সত্তরোর্ধ্ব ২ জন আর আশির্ধ্বো ২ জন। বিভাগ বিবেচনায় ঢাকা বিভাগের ৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ২ জন আর বরিশাল বিভাগের ১ জন। ৭ জন সরকারি হাসপাতালে ও ৩ জন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়