দুদকের মামলা : অব্যাহতি পেতে হাইকোর্টে ওসি প্রদীপের আবেদন

আগের সংবাদ

‘কাগুজে’ বিদেশি বিনিয়োগ : সাড়া মেলে নিবন্ধনের এক-তৃতীয়াংশের,হ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সুশাসনের অভাব

পরের সংবাদ

বালু ব্যবসায়ীদের কারণে ৩ মাস ধরে বন্ধ ড্রেজার : নদী পুনরুদ্ধার কাজে বাধা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাশেদ আলী : যমুনার পানি এনে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারদিকের নদনদীতে প্রবাহ বাড়াতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি আবারো স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পড়েছে। ভাগবাটোয়ারার জেরে প্রায় ৩ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে টাঙ্গাইলের পুংলী নদী খননের কাজ। পিছিয়ে পড়েছে অন্যান্য কাজও। ফলে ৩ বছর মেয়াদি (২০১০-২০১৩) প্রকল্পটি ১২ বছরেও শেষ হবে কিনা- এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর আগেও স্থানীয়দের বাধা, পলি ভরাট, জমি অধিগ্রহণ জটিলতাসহ নানা কারণে ৪ দফা মেয়াদ বাড়াতে হয় প্রকল্পটির। খরচও বাড়ে ১৮০ কোটি টাকা।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, যমুনা সেতু নির্মাণের পর তুরাগের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গায় পানি আসা কমে যায়। ফলে শুষ্ক মৌসুমে সংযুক্ত কয়েকটি নদীর পানি কালো ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়ে। এই রিভার সিস্টেম পুনরুদ্ধারের জন্য ২০১০ সালে একটি প্রকল্প (নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা খনন) হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তা শেষ করার কথা ছিল। প্রকল্পের প্রধান কাজ ছিল ১৬২ কিলোমিটার নদী খনন। তবে নদীর প্রায় ৯০ কিলোমিটার খননের পর দেখা যায়, বন্যায় সেই অংশ আবার ভরাট হয়ে গেছে। ফলে মেনটেইন্যান্স ড্রেজিং, জমি অধিগ্রহণ, সেডিমেন্ট বেসিন নির্মাণসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে কয়েক দফা প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়। চলতি বছরের জুনে তা শেষ হওয়ার কথা। বালু ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে কাজ বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে কিছু ঝামেলা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় দুই সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাছান ইমাম খান (সোহেল হাজারী) ও তানভীর হাসানের (ছোট মনির) সহায়তায় তা মিটমাট হয়ে গেছে। জমি অধিগ্রহণও হয়েছে। তাই আশা করছি, নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ হবে।
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বালু ব্যবসায়ীদের বাধার কারণে প্রায় ৩ মাস ধরে বন্ধ থাকা মেনটেইন্যান্স ড্রেজিং এখনো চালু হয়নি। গত সেপ্টেম্বরে টাঙ্গাইলের পুংলী নদীর

মারুয়া পয়েন্টে এসএসআর নামে একটি ২০ ইঞ্জি ড্রেজার স্থাপন করা হয়। কিন্তু চালু করার আগেই বালু ব্যবসায়ীরা তাতে বাধা দেন। ফলে দীর্ঘ তিন মাসেও সেটি আর চালু হয়নি। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গার কাছে পুংলীর সংযোগ পয়েন্টে জেবি নামে আরেকটি ২০ ইঞ্জি ড্রেজারও তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে একই কারণে।
টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাছান ইমাম খানের (সোহেল হাজারী) কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়গুলো মিটমাটের চেষ্টা করেছি। আর কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। আমি স্থানীয়দের বলেছি, যেন এ কাজে কেউ বাধার সৃষ্টি না করেন। কেননা এ প্রকল্পটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদনদী রক্ষার বিষয়ে বদ্ধপরিকর। এরপরও কাজ চালু না হওয়ার কারণ খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ড্রেজার কর্মীরা জানান, জহুরুল, গোলজার হোসেন, আজমল, শাহাদাতসহ কয়েক ব্যক্তি তাদের ড্রেজার না চালাতে বলে গেছে। নইলে আগুন দিয়ে ড্রেজার পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে তারা। কর্মীরা আরো জানান, ওই লোকগুলো বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা দেশীয় ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি তুলে ব্যবসা করছে। সরকারিভাবে ড্রেজিং শুরু হলে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে, তাই বাধা দিচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ মাটি তাদের নির্ধারিত জমিতে ফেলতে বলছে। কেউ সাব-কন্ট্রাক্ট চাচ্ছে। কেউ টাকা দাবি করছে। বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে বলে জানান ড্রেজার কর্মীরা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম বলেন, তিনি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে নিলাম (অকশন) নিয়ে বালু ব্যবসা করছেন। ওই প্রকল্পের কাজের সঙ্গে তার কোনো দ্ব›দ্ব নেই। উল্টো স্থানীয় সংসদ সদস্য সোহেল হাজারী তাকে ওই কাজে সহযোগিতা করতে বলেছেন। দ্ব›দ্ব না থাকলে সংসদ সদস্য কেন তাকে এমনটি করতে বললেন- এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, তাই হয়তো বলেছেন।
একই প্রসঙ্গে গোলজার হোসেন জানান, তিনি এবারই প্রথম জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে নিলাম নিয়ে বালু ব্যবসা করছেন। ২০১৯ সালে তিনি পুংলী নদীর ২৫০ মিটার খননের কাজও পেয়েছিলেন। গত সপ্তাহে সংসদ সদস্য সোহেল হাজারী তাদের ডেকে নিয়ে বলে দিয়েছেন যেন সবাই এ কাজে সহযোগিতা করি। এরপর থেকে আমরা সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এমনকি ড্রেজারের পাইপলাইন টানতেও আমরা এখন সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু নদীতে পানির প্রবাহ বাড়বে। কারণ যমুনা থেকে নিউ ধলেশ্বরী, পুংলী, বংশাই, তুরাগ ও বুড়িগঙ্গার মধ্যে সংযোগ পুনরুদ্ধার করা হবে। ফলে সারা বছর এসব নদীতে নৌ চলাচল নির্বিঘœ হবে। মাছ ও জলজ প্রাণির বিস্তার ঘটবে। প্রবাহ বাড়লে ও দূষণ কমানো গেলে বছরজুড়েই এসব নদনদীর পানির মান ভালো থাকবে। ফলে নদী পাড়ের বাসিন্দারা স্বস্তি পাবেন। নৌ পর্যটন খাতের বিকাশ ঘটবে। সব মিলিয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শুরু থেকেই উজানের পলি এ প্রকল্পের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ২০১০ সালের প্রকল্পটি প্রথমে ২০১৩ সালে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু পলি, বালুর কারণে ‘সিল্ট লিভ’ হয়ে ধলেশ্বরীর উৎসমুখ বন্ধ হওয়ায় নতুন করে সমাধান খুঁজতে হয় সংশ্লিষ্টদের। ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। পরে গাইড বাঁধের মাধ্যমে উৎসমুখ স্থিতিশীল রেখে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং সেডিমেন্ট বেসিন নির্মাণ করে তাতে পলি থিতিয়ে স্বচ্ছ পানি পংলী নদীতে প্রবাহিত করার পরিকল্পনা করা হয়। প্রকল্প সংশোধন করে ব্যয় ৯৪৪ কোটি টাকা ৯ লাখ টাকা থেকে ১ হাজার ১২৫ দশমিক ৫৯ কোটি টাকা করা হয়। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ কাজটি করতে গিয়ে বারবার স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়তে হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। ড্রেজিংয়ে বাধা দেয়া, জমি অধিগ্রহণে মামলা-মোকদ্দমাসহ নানা জটিলতায় বারবার থেমে যায় কাজের গতি।
অন্যদিকে, কার্যাদেশ পেয়ে এশিয়ান ড্রেজিং নামে একটি কোম্পানি দেশীয় ড্রেজার স্থাপন করায়ও কাজের গতি ধীর হয়। পরে আবারো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন মাস করা হয়। এরপরও কাজ শেষ না হওয়ায় আরো এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়েছে। এখনো ৫৩ কিলোমিটার নদী খনন বাকি থাকায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি শেষ হওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়