ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা

আগের সংবাদ

বিদেশি বিনিয়োগে যত উদ্যোগ : আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতিসহ ৫ বাধা, কর ব্যবস্থা আরো সহজ করার দাবি

পরের সংবাদ

সর্বত্র শোকের ছায়া : থেমে গেল জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের চরণযুগল

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী- পঞ্চাশ বছরের সুদীর্ঘ জয়যাত্রার অগ্নিসাক্ষী তিনি। স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদকপ্রাপ্ত এই শিক্ষাবিদ ভাষাবিজ্ঞানী ও নজরুল গবেষক হিসেবে সুপরিচিত। ভাষা আন্দোলনের সময়ের দুর্লভ কিছু আলোকচিত্রও তুলেছিলেন। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের এই প্রত্যক্ষ সাক্ষী সেসব ইতিহাস গ্রন্থিত করেছেন তার লেখায়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রথম গ্রন্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাসের প্রথম গ্রন্থসহ প্রায় ৩০টি বই লেখা ও সম্পাদনা করেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার থেমে যায় ৮৭ বছর বয়সী এ লেখক-গবেষকের চরণযুগল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম নজরুল অধ্যাপক এবং নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পরিচালক, বাংলা একাডেমির সাবেক সভাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম গতকাল বেলা আড়াইটায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সবার শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আজ বুধবার দুপুরে অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের কফিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। আসরের পর জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে বর্ষণ ইসলাম। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতাল থেকে উত্তরার

বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১০ নম্বর সেক্টরের খালিদ বিন ওয়ালিদ মসজিদে এশার পর এক দফা জানাজা হয়। রাতে মরদেহ রাখা হয়েছে হাসপাতালের হিমঘরে।
এর আগে পেটের ব্যথা নিয়ে গত ৭ অক্টোবর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হয়েছিলেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যরা তাকে ভারতে নিয়ে যেতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। অবস্থার অবনতি হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। তাকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টায় গত ২৫ নভেম্বর কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার বিকালে সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান-অ্যান আরবর বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টারে ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন ও গবেষণা করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন। এরপর থেকেই তিনি নজরুল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করে। একই বছরের ৩ ডিসেম্বর তিনি কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের সভাপতি পদে যোগদান করেন। তিনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এই ভাষাসৈনিক ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বন্দিশিবিরে নির্যাতিত হন।
সর্বত্র শোকের ছায়া : জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মৃত্যু দেশের শিক্ষাঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নীতি-আর্দশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে তার অবদান দেশ ও জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি শিক্ষক। শিক্ষকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ তার এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারাল, আর তিনি হারালেন একজন অভিভাবককে। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, বিশিষ্ট এই গুণী লেখক ও গবেষকের সাহিত্যকর্ম বাঙালি জাতিকে সবসময়ই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে। তিনি মনেপ্রাণে জাতির পিতার আর্দশকে ধারণ ও লালন করতেন এবং মুজিববর্ষের নানা আয়োজন সফল করতে দক্ষতার সঙ্গে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। বাংলা সাহিত্য ও গবেষণায় তিনি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে থাকবেন।
অধ্যাপক রফিকুলের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। এছাড়া শোক জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও স¤প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়