ওয়ারী থেকে উদ্ধার : মারা গেল সেই নবজাতকটি

আগের সংবাদ

বিদ্রোহের ভারেই নৌকাডুবি

পরের সংবাদ

কানপুরে ব্যাকফুটে কিউইরা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচের শেষ দিনে আজ জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ২৮০ রান। চতুর্থ দিন শেষে ৪ রানে করা কিউইদের হাতে আছে ৯ উইকেট। তবে শেষ দিনে ভারতের স্পিনারদের বিপক্ষে মোকাবিলা করে ক্রিজে টিকে থাকায় কঠিন চ্যালেঞ্জ সফরকারীদের জন্য। এর আগে দ্বিতীয় ইনিংসে গতকাল ৭ উইকেটের বিনিময়ে ২৩৪ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত।
ভারতের বিপক্ষে আজ কানপুর টেস্টের শেষ দিনে ব্যাটিংয়ে নামবেন টম লাথাম ও উইল সমারভাইল। লাথাম ১৩ বলে ২ রান করে অপরাজিত আছেন। সমারভাইল ৫ বল মোকাবিলা করলেও গতকাল রানের খাতা খুলতে পারেননি। তবে কিউইদের শেষ দিনে যে ভারতের স্পিন ঘূর্ণি ভোগাবে তা গতকালই বুঝিয়ে দিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। কিউই ওপেনার উইল ইয়ং দিনের ৪ ওভারও মোকাবিলা করতে পারেননি। ৬ বল খেলে ২ রান করে তিনি অশ্বিনের এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন। এর আগে কানপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রান করেছিল নিউজিল্যান্ড। তাদের ১০ উইকেটের মধ্য ৯ জনই স্পিনারের শিকারে পরিণত হয়েছিল। টেস্টে সাধারণত শেষ দিনে পিচে বল বেশি ঘোরে। তাই নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ম্যাচে জয় তোলা প্রায় অসম্ভব।
এর আগে ৪৯ রানে এগিয়ে থাকা ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩৪ রান সংগ্রহ করে। ১৪ রানের বিনিময়ে ১ উইকেট হারিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করে চতুর্থ দিনের শুরুতেই হোঁচট খায় স্বাগতিকরা। প্রথম উইকেটের পর দ্বিতীয় উইকেটটিও শিকার করেন কাইল জেমিসন। তার শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন চেতশ্বর পূজারা। ভারতের টেস্ট অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান পূজারা ৩৩ বলে ২২ রান করেন। ইনিংসে ৩টি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। এরপর আক্রমণে এসে দলকে তৃতীয় সফলতা এনে দেন কিউই স্পিনার অ্যাজাজ প্যাটেল। তার বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হন আজিঙ্কা রাহানে। ১ বাউন্ডারির সাহায্য তিনি ১৫ বলে ৪ রান করেন। এরপর দৃশ্যপটে আসেন ভারতকে প্রথম ইনিংসে নাকানি চুবানি খাওয়ানো টিম সাউদি। তার প্রথম শিকার ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল। তার গতিতে পরাস্ত হয়ে কট বিহাইন্ডের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন আগারওয়াল। তার ব্যাট থেকে ১৭ রান আসে। ৫৩ বল মোকাবিলা করে তিনি ৩টি বাউন্ডারির দেখা পান। এরপর ক্রিজে আসা জাদেজাকে রানের খাতা খুলতে দেননি সাউদি। এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন জাদেজা। এর আগে প্রথম ইনিংসে তিনি অর্ধশতক রানের ইনিংস খেলেন। ৫১ রান তুলতেই নেই ৫ উইকেট।
চতুর্থ দিনের শুরুতেই যেন শেষ হয়ে যাচ্ছিল ভারতের ইনিংস। ম্যাচের ফলাফলও হয়ে যেত পারত একইদিনে। তবে দলকে এদিনও বিপদের হাত থেকে উদ্ধার করেন অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরির মালিক বনে যাওয়া শ্রেয়াস আয়ার। তাকে সঙ্গ দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। দুই জনের ৫২ রানের জুটিতে ভারত ১০০ রানের ঘর পার করে। অশ্বির ৬২ বলে ৩২ রান করে জেমিসনের বলে বোল্ড হন। এরপর আয়ারের সঙ্গে দলের হাল ধরেন ঋদ্ধিমান সাহা। অভিষেকের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি তোলার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ফিফটি তুলে নেন আয়ার। তবে এদিন আর তাকে সেঞ্চুরি করতে দেননি কিউই ফাস্ট বোলার টিম সাউদি। আয়ার ১২৫ বলে ৬৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন। তার ইনিংসে ৮টি বাউন্ডারি ও ১টি ওভার বাউন্ডারির মার ছিল। ১৬৭ রানে ৭ উইকেট হারানো ভারতের আর কোনো উইকেট পতন হতে দেননি অক্ষর প্যাটেল ও ঋদ্ধিমান জুটি। ঋদ্ধিমান ১২৬ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। তার ইনিংসে ৪টি বাউন্ডারি ও ১টি ওভার বাউন্ডারি ছিল। অক্ষর ৬৭ বলে ২৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। তিনি ২টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকান। দলীয় সংগ্রহ ২৩৪ রান হলে ইনিংস ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় অধিনায়ক রাহানে। ততক্ষণে নিউজিল্যান্ডের সামনে লক্ষ্যমাত্রা গিয়ে দাঁড়ায় ২৮৪ রানের। কিউই দুই পেসার টিম সাউদি ও কাইল জেমিসন ৩টি করে উইকেট তুলে নেন। বাকি ১ উইকেট শিকার করেন স্পিনার অ্যাজাজ প্যাটেল।
এর আগে কানপুরে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে তৃতীয় দিন বিনা উইকেটের বিনিময়ে ১২৯ রানে শুরু করেছিল নিউজিল্যান্ড। দুই ওপেনার টম লাথাম ও উইল ইয়ং ফিফটি তুলে নিয়ে মাঠ দ্বিতীয় দিন ছেড়েছিল। কিন্তু তৃতীয় দিনে দৃশ্যপটে হাজির হয় ভারতের বোলাররা। দলীয় ১৫১ রানে প্রথম উইকেটের দেখা পায় স্বাগতিকরা। ২১৪ বলে ৮৯ রানের ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন ইয়ং। তাকে শ্রীকর ভারতের ক্যাচের শিকার বানিয়ে উইকেট তুলে নেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এরপর অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে জুটি গড়ে তুলেন টম লাথাম। তবে তাদের ৪৬ রানের বেশি জুটি গড়তে দেননি উমেশ যাদভ। কেন উইলিয়ামসনকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন এই পেসার। এরপর মাঠে নেমে লাথামকে সঙ্গ দিতে পারেনি অভিজ্ঞ রস টেইলর। তিনি ২৮ বলে ১১ রান করে অ্যাক্সার প্যাটেলের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন। টেইলরকে বিদায় করে ক্ষান্ত হননি প্যাটেল, হেনরি নিকোলসকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে সফল হন এই স্বাগতিক স্পিনার। নিকোলস ৯ বলে ২ রান করেন। তবে প্যাটেলে চোখ তখনো ক্রিজে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকা টম লাথামের ওপর। সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়েও হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়েন লাথাম। ব্যক্তিগত ৯৫ রানে সাজঘরের পথ ধরেন এই কিউই ওপেনার। প্যাটেলের ঘূর্ণির চেয়ে বেশি নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেন লাথাম। অফ স্টাম্পের বল ডাউন দ্য উইকেটে বের হয়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন তিনি। ২৮২ বল মোকাবিলা করে ১০টি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। দুই স্পিনার অশ্বিন ও প্যাটেল যখন উইকেট উৎসবে মাতছিলেন তখন কি করে হাত গুটিয়ে বসে থাকেন রবিন্দ্র জাদেজা। আক্রমণে এসে বোল্ড আউট করে রাচিন রবিন্দ্রকে সাজঘরে ফেরান এই স্পিনার। ততক্ষণে প্রায় শেষ নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপ। তবে বাকি কাজটা অন্যদের জন্য আর রাখেন অশ্বিন ও প্যাটেল। বলা যায়, নিজেদের শিকারে আর কাউকে ভাগ বসাতে দেননি তারা। প্যাটেল টিম সাউদিকে আর অশ্বিন উইল সমারবাইল ও কাইল জেমিসনকে সাজঘরে ফেরান। তবে অ্যাজাজ প্যাটেল নিজেকে কারো শিকারে পরিণত হতে দেননি। দুই ওপেনারের ব্যাটে বড় সংগ্রহের পথে থাকা নিউজিল্যান্ড দিন শেষ হওয়ার আগেই গুঁড়িয়ে গেল ২৯৬ রানে। তখনো সফরকারীরা পিছিয়ে ৪৯ রানে। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে দিনের বাকি থাকা ৫ ওভারও শেষ করতে পারেননি ভারতীয় ওপেনার মায়াঙ্ক আয়ারওয়াল ও শুবমান গিল। প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা গিলকে এদিন রানের খাতা খুলতে দিয়েই বোল্ড আউট করেন কাইল জেমিসন। গিল ৩ বলে ১ রান করেন। তবে মাঠে নেমে আর কোনো উইকেট পরতে দেননি ভারতীয় টেস্ট অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান চেতশ্বর পূজারা। দিন শেষে তিনি ২ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৪ বলে ৯ রান করে অপরাপজিত ছিলেন। আয়ারওয়াল বাউন্ডারি হাঁকানোর জন্য চতুর্থ দিনের অপেক্ষায় রইলে। তিনি ১৩ বলে ৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪ রান তুলতেই কিউইরা ৬৩ রানে পিছিয়ে গেল। প্যাটেল ৬২ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট শিকার করেন। অশ্বিন ৩ উইকেট তুলতে খরচা করেন ৮২ রান। বাকি দুই উইকেট ভাগাভাগি করে নেন উমেশ যাদভ ও রবিন্দ্র জাদেজা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়