ওয়ারী থেকে উদ্ধার : মারা গেল সেই নবজাতকটি

আগের সংবাদ

বিদ্রোহের ভারেই নৌকাডুবি

পরের সংবাদ

‘আর বিশ্বাস নয়, নিরাপদ সড়কের আন্দোলন চলবে’ : ৯ দফা ঘোষণাকারী ছাত্রীকে থানায় জিজ্ঞাসা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যে নয় দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছিল, সেগুলোই বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা এখন যে ৯ দফা তুলে ধরেছি, সেগুলো বাস্তবায়ন হবে কবে? আমরা আর বিশ্বাস করি না, নিরাপদ সড়কের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলতেই থাকবে। যদি মঙ্গলবারের (আগামীকাল) মধ্যে সরকার ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরাই যা করার করব। ৪র্থ দিনের মতো গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করার সময় মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী অনির্বান হক কাব্য এ কথা বলেন।
এদিকে, এই আন্দোলনে কোনো গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে কিনা- সে বিষয়ে জানতে দুজন শিক্ষার্থীকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে অধরা দেবনাথ নামের ছাত্রী নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীদের পক্ষে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করে বিবৃতি পাঠ করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে বাবার জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী। শুধু ধানমন্ডি ২৭ নম্বর নয়, নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর কাকরাইল, শান্তিনগর ও নীলক্ষেত ও উত্তরায় সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি জায়গা থেকেই নিরাপদ সড়ক ও নটর ডেম শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহত হওয়ার ঘটনার বিচার নিশ্চিত করতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। এ সময় সব ধরনের যানবাহনের কাগজ ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে শিক্ষার্থীরা। কোনো গাড়ির কাগজ না থাকলে বা চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে সার্জেন্ট ডেকে মামলা দেয়াতে দেখা যায়। পাশাপাশি বেসরকারি বাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেয়া হচ্ছে কিনা তা চেক করা হয়।
সরজমিন দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের

মিরপুর সড়ক অবরোধ করে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের অর্ধশত শিক্ষার্থী। প্রথমে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকলেও পরে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজসহ আরো বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দেয়। এ সময় তাদের ‘হাফ পাস না নিলে, দেখি গাড়ি কেমনে চলে’, ‘আমার ভাই মরল কেন প্রশাসন জবাব চাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘দাবি মোদের একটাই, নিরাপদ সড়ক চাই’- স্লোগান দিতে দেখা যায়। শত শত শিক্ষার্থীর জোরালো কণ্ঠস্বরে মুখরিত হয়ে ওঠে ওই এলাকা। এ সময় ধানমন্ডি ও আসাদগেট এলাকার বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে শত শত মানুষকে। বিকাল পৌনে ৩টার দিকে ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত’ আন্দোলন চালানোর ঘোষণা দিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহন আটকে কাগজপত্র যাচাই করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। কোনো গাড়ির ঠিকঠাক কাগজ না পেলে ‘প্রশাসন হাই হাই, এই গাড়ির লাইসেন্স নাই’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরে সার্জেন্ট ডেকে গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে মামলা দিতে বাধ্য করে তারা। গতকাল পুলিশ, বিচারকের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাস ও প্রাইভেটকারে কাগজপত্র না পেয়ে মামলা দেয়ায় শিক্ষার্থীরা।
এরই মধ্যে, শিক্ষার্থীরা সাভার চন্দ্রা থেকে সদরঘাট রুটে চলাচল করা ঠিকানা পরিবহনের একটি বাসের চালকের লাইসেন্স দেখতে চাইলে, চালকের আসনে থাকা ব্যক্তি জানান, তিনি বাসের আসল চালক নন। গাড়ির মূল চালক বাসায় গেছেন। বাসের সহকারী গাড়ি চালাচ্ছেন। চালকের আসনে থাকা ব্যক্তিটি মূল চালককে ফোন দেয়ার কথা বলে সুযোগ বুঝে সটকে পড়েন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সহায়তায় গাড়ির ভাড়া সংগ্রহকারীকে আটক করে পুলিশ। একপর্যায়ে সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ-২১-০৫০৬) আটকায় শিক্ষার্থীরা। প্রথমে চালক কাগজপত্র না দেয়ায়, শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয়া শুরু করে। একপর্যায়ে চালক কাগজপত্র দেখালে শিক্ষার্থীরা গাড়িটি ছেড়ে দেয়। এ সময় হাজি সেলিম গাড়ির মধ্যেই ছিলেন। কোনো কাগজ না থাকায় সুপ্রিমকোর্টের এক বিচারকের গাড়ি আটকে রাখে শিক্ষার্থীরা। গাড়িতে থাকা চালক মো. মুকুল উকিল জানান, বিচারপতি জাহাঙ্গীর উদ্দিনের গাড়ি এটি। ভুল করে গাড়ির কাগজ নিয়ে বের হতে পারেননি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডিএমপির তেজগাঁও জোনের এডিসি রুবায়েত জামান ভোরের কাগজকে বলেন, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনে নেমেছে। গত কয়েক দিনের মতোই তাদের আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি, আন্দোলনের ফলে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। একপর্যায়ে তারা জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আন্দোলন সমাপ্তি ঘোষণা করে।
এদিকে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর কাকরাইল ও শান্তিনগর মোড় অবরোধ করে হাবীবুল্লাহ্? বাহার কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ ও ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা দেড়টা থেকে তারা সড়কে অবস্থান করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। রিতা নাহার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্লিনারের হাতে কীভাবে গাড়ির চাবি তুলে দেয়া হয়। অথচ সেই ক্লিনারের অভিভাবক নাকি নিরাপদ সড়ক গড়বেন। এ জন্য তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা আশ্চর্য হয়েছি, মেয়ররা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। রাজিব মাহমুদ নামে অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি আদায় না হবে আমরা রাস্তা ছাড়ব না। আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা আগেও আন্দোলন করেছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সড়কে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটেই যাচ্ছে।
গতকাল সকাল ১১টার দিকে নীলক্ষেত মোড়ে সমবেত হন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে সিটি কলেজের সামনের সড়কে গিয়ে অবস্থান নেন। নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কাইয়ুম জানান, স্থানীয় দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষার্থী নীলক্ষেত থেকে একটি মিছিল নিয়ে সিটি কলেজ পর্যন্ত গিয়েছে। কয়েক দিন ধরে ছাত্ররা যেসব দাবি নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করেছিল সেই সব দাবি নিয়ে তারা সিটি কলেজের সামনে অবস্থান নিয়েছিল।
আন্দোলনকারী দুই শিক্ষার্থীকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ : নিরাপদ সড়কের দাবিতে দিনভর রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে আন্দোলনে অংশ নেয়া এক ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোহাম্মদপুর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এর আগে, ঘটনাস্থল থেকে হাফিজুর রহমান নামে এক ছাত্রকে আটক করে পুলিশ।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল লতিফ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ধানমন্ডি ২৭ এলাকায় সকাল থেকে আন্দোলন করছিল একদল শিক্ষার্থী। দুপুরে ওই ছাত্রী সেখানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাবার পরিবেশন করে। একই সময়ে আরেকটি ছেলে ওই ছাত্রীর কাছে বিকাশ নম্বর চায় ও টাকা পাঠানোর কথা জানায়। বিষয়টি পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারিতে এলে আন্দোলন ঘিরে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা বা লেনদেনের বিষয় আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতেই ওই ছাত্রীকে থানায় ডাকা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, হাফিজুর রহমানকে তিনি চেনেন না। আন্দোলনস্থলেই পরিচয়। তবে, হাফিজুর রহমান ছাত্র নয় বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তাকে আরো যাচাই করার বিষয় রয়েছে। রাত ৮টা পর্যন্ত হাফিজুরকে থানাতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল বলে জানান ওসি।
উল্লেখ্য, ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে সরকার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায়। এর পর থেকেই বাসে অর্ধেক ভাড়া দেয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে বুধবার সড়কে সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সেই আন্দোলন আরো গতি পায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়