নরসিংদীতে আটক নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান

আগের সংবাদ

‘তোরে আমি কি জন্য একা যাইতে দিলাম’

পরের সংবাদ

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার গেরো খুলছে : দল চায় সমঝোতা, তারেক চান আন্দোলন

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে সরকার কিছুটা নমনীয় বলে মনে করছেন বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতারা। সরকারের নমনীয় মনোভাবের পরই খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অনুমতি প্রার্থনা করতে চান বিএনপির সিনিয়র নেতারা। অন্যদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান চান আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করতে। গত সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তিনি চলমান আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে নিতে বলেছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মূল এজেন্ডা হিসেবে ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সামনে দলীয় প্রধানের চিকিৎসা ইস্যুতে আগামীর করণীয় কী হতে পারে, সে বিষয়ে মতামত দেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসে সরকারপ্রধানের সঙ্গে দেখা করার প্রসঙ্গ। নেতারা বলেন, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক যে অবস্থা, তাতে আন্দোলন করে দাবি আদায় করতে গেলে দেরি হয়ে যেতে পারে। এর চেয়ে মহাসচিবের নেতৃত্বে সিনিয়র নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাইলে হয়তো সরকারপ্রধানের মন নরম হতে পারে। এমন প্রস্তাবে তারেক রহমান প্রথমে চুপ থাকলেও পরে বলেন, মায়ের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। আপাতত আন্দোলন চালিয়ে যান।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের নেত্রী যখন কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন পর পর দুবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে কথা বলেছিলাম। প্রতি মুহূর্তে আমরা কথা বলছি। এগুলো সরকারের কাছে অবশ্যই পৌঁছাচ্ছে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারপারসনের চিকিৎসার ব্যাপারে দাবি জানিয়ে আসছি।
তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। এসব নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে আমরা এখনো এমন সিদ্ধান্ত নেইনি যে, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। তবে আমরা রাজনৈতিকভাবে চেষ্টা করছি। অন্যান্য রাস্তা যা আছে, আমরা সব

দিক থেকেই চেষ্টা করছি।
সূত্র জানায়, আগামী শুক্রবার বিএনপির সাবেক এমপিদের এক করে জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি সমাবেশ করা উদ্যোগ নেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি জয়নুল আবেদিন ফারুক। সমাবেশ প্রসঙ্গে দলটির সিনিয়র নেতারা বলেন, তিনি (জয়নুল আবেদিন ফারুক) কার অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করতে চাইছেন। তিনি তো সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কোনো আলাপও করেননি। এসব কথার জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেখানে দলীয়প্রধানের শারীরিক অবস্থা এতটা খারাপ, সেখানে এখন উচিত সবার তার সুচিকিৎসার দাবিতে যে যার জায়গা থেকে নিজের মতো করে ঝাঁপিয়ে পড়া। মহাসচিবের এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে একজন সিনিয়র নেতা বলেন, এই কর্মসূচি আপাতত স্থগিত রাখলেই ভালো। এ নিয়ে কিছুক্ষণ উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয় সিনিয়র নেতাদের মধ্যে। পরে তারেক রহমান এমপিদের সমাবেশ স্থগিত করার নির্দেশ দেন।
বিএনপির নেতাদের অনেকে বলেছেন, দলীয়প্রধান খালেদা জিয়া যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, তখনো তারা সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে পারছেন না। তারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে বিএনপি বড় ধরনের সংকটের মুখোমুখি। এ কারণেই এখন রাজপথে কিছুটা ঠাণ্ডা কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করাসহ সব ধরনের চেষ্টা চালানোর কথা বলছেন বিএনপি নেতারা। তবে নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, চলমান আন্দোলনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুটি দেশের জনগণের কাছে এখন একটি মানবিক ইস্যু। এতে সরকার অনেকটাই চাপের রয়েছে।
এদিকে খালেদা জিয়াকে সরকার শেষ পর্যন্ত বিদেশে চিকিৎসা করতে দেবে, গত দুদিন ধরে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তারা খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আইনমন্ত্রীর হাতে একটি স্মারকলিপি তুলে দেন। এ সময় আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিষয়টি পর্যালোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেবেন।
তিনি বলেন, আমি একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যখন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হয়, তখন কিন্তু উনার পরিবারের আবেদনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক দিক দিয়ে বিবেচনা করেছেন। তখন কিন্তু কোনো দাবি তুলতে হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই করেছেন। সেক্ষেত্রে মানবিকতার কমতি আমাদের নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মানবিকতা দেখাতে জানেন।
তিনি বলেন, ৪০১ ধারার আলোচনায় আমি এখন যেতে চাই না। আইনে মতপার্থক্য থাকবে। আমারও আপনাদের সাথে আইনে মতপার্থক্য আছে। আপনারা যে ৪০১ ধারা, উপধারার কথা বলেছেন, সেখানে আপনারা বলেছেন, কোথাও বিদেশ যাওয়া যাবে না কথাটি বলা নেই। সেখানে বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে বলা না থাকলেও একটা কথা বলা আছে, সেটা হলো, শর্তযুক্ত বা শর্তমুক্ত।
সেখানে দুটি শর্ত দেয়া হয়েছে। আমি সে আইনের দিকে যাব না। আপনারা যে স্মারকলিপি দিয়েছেন, সেটা আমি অবশ্যই পর্যালোচনা করব। তবে সিদ্ধান্ত ও মতামতের ব্যাপারে আলোচনার প্রয়োজন আছে। সেটা আমরা করব। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জন্য প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকে চিকিৎসক আনার কথা বলেন।
গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বলেন, আমার ধারণা, সরকার ম্যাডামকে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যেতে দেবে। খালেদা জিয়ার শারীরিক যে অবস্থা, তিনি এখন সিসিইউতে আছেন। এই অবস্থায় তিনি রাজনৈতিক ফ্যাক্টর নন। তিনি এখন নাতি-নাতনিদের দেখবেন, এটাই তার চাওয়া। তার এই অসুস্থতাকে পলিটিক্যাল করা ঠিক হবে না।
তিনি আরো বলেন, আমার আশা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার (খালেদা জিয়ার) বর্তমান পরিস্থিতির কথা নিজে প্রয়োজনে ডাক্তার পাঠিয়ে খবর নিতে পারেন। এতে তিনি কনফিডেন্স পাবেন। তিনি বুঝবেন, কেন খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে যেতে দেয়া দরকার। আমার ধারণা, তিনি ম্যাডামকে বাইরে যেতে দেবেন। এর আগে গত শনিবার রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে কিছু সময় খালেদা জিয়ার খোঁজখবর নিয়েছেন রেজা কিবরিয়া।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসক সূত্র জানায়, তার (খালেদার) শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটাই ‘মন্দের ভালো’। বয়সজনিত অসুখগুলো আপস অ্যান্ড ডাউনের মধ্যে থাকায় কেবিনে ফিরতে পারেননি তিনি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক সক্ষমতা বলতে দর্শনার্থী হিসেবে পরিবার বা দলের কেউ গেলে বিছানা থেকে সালাম বিনিময় করেন। সিনিয়র দুই চিকিৎসক নিয়মিত রাউন্ডে গেলেও মেডিকেল টিমের বাকি সদস্যরা প্যারামিটারগুলো দেখে চলে যান। বর্তমানে ‘ইনস্ট্যান্ট সাপোর্ট’ থাকলেও অক্সিজেন লাগছে না খালেদা জিয়ার।
জানতে চাইলে রেজা কিবরিয়া বলেন, গত দুয়েকদিন ধরে তিনি কিছুটা ভালো আছেন। কিন্তু এটা ভালো না। তার চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সঙ্গে যখন শনিবার কথা বলেছি- ম্যাডামের অসুখগুলো, বিশেষ করে আফটার কোভিড যেসব নতুন অসুখ তৈরি হয়েছে, এগুলো বারবার অ্যাটাক করছে। চিকিৎসকরা ঠেকিয়ে রাখার চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করলেও এক্ষেত্রে অবশ্যই তার উন্নত চিকিৎসা দরকার দেশের বাইরে। এসব অসুখের পদ্ধতি শর্টটাইম অ্যাপ্লিকেবল হলেও লং টার্মে তার সুস্থতা আনবে না। যে কারণে তাকে আমেরিকায় চিকিৎসা নিতে হবে। এই চিকিৎসা সিঙ্গাপুরেও নেই।
বিএনপির সমমনা একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে দলীয় বা পারিবারিকভাবেই পরিষ্কার তথ্য দেয়া দরকার। তারা চাইছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে লুকোচুরি না করে প্রকাশ্যে মানুষের কাছে তুলে ধরা হোক। আর নিয়মিত বুলেটিন না থাকার কারণে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা বিষয়টিকে রাজনীতিকরণ করছে। জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়ার মতো একজন বড় রাজনৈতিক দলের নেতাকে নিয়ে তারা যা খুশি খেলে যাচ্ছে। তার কী রোগ? কেন তারা প্রকাশ করতে চাইছে না, এটা একটা বড় প্রশ্ন। দেশের মানুষ খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সঠিক খবরটি জানতে চায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়