বন্ডে অনুমোদন দিল বিএসইসি

আগের সংবাদ

ছাত্র বিক্ষোভে ফের উত্তাল সড়ক : ২০১৮ সালের আন্দোলনের রেশ > ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি পূরণের আল্টিমেটাম

পরের সংবাদ

‘তোরে আমি কি জন্য একা যাইতে দিলাম’

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ‘আমার বাবা সকালে শেষ বিদায় নিয়া গেল, বাসায়ও আর ফিরা পারল না। কি জন্য তোরে শেষ বিদায় দিছি! ও বাবা, তোরে আমি কি জন্য একা যাইতে দিলাম।’ এভাবেই ছেলে হারানোর শোকে আহাজারী করছিলেন নটরডেম কলেজের ছাত্র নিহত নাঈম হাসানের (১৭) বাবা শাহ আলম দেওয়ান। গতকাল বুধবার দুপুরে তার কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিবেশ। এর আগে ওই দিনই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত হয় মেধাবী এ শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনার পর গাড়ি ও ঘাতক চালক রাসেলকে আটক করে পল্টন থানা পুলিশ। এদিকে সহপাঠীর মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানী মতিঝিলের শাপলা চত্বর, গুলিস্তান ও নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে এ ঘটনায় বজ্র ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিএসসিসি। কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও নিহত ছাত্রের জানাজায় মেয়র থাকবেন বলে জানা গেছে।
নাঈম হাসানকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা কবি নজরুল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র আমিনুল ইসলাম ফাহিম জানান, গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনের রাস্তায় পায়ে হেঁটে পার হবার সময় গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে ময়লা পরিবহনের একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতর আহত হয় নাঈম। দ্রুত তাকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন। ফিরোজ নামে এক পথচারী জানায়, দুর্ঘটনার পর কেউ তাকে ধরছিল না। সবাই ভিড় করে দাঁড়িয়ে ছিল। পরে আমরাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। নিহত

শিক্ষার্থীর বাবা শাহ আলম দেওয়ান জানান, তার দুই ছেলে। বড় ছেলে শাহরিয়ার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র। আর নাঈম হাসান নটরডেম কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের মানবিক বিভাগের ছাত্র। পরিবার নিয়ে কামরাঙ্গীরচর ঝাউলাহাটি চৌরাস্তা এলাকায় নিজেদের বাড়িতে থাকেন। বাবা শাহ আলম নীলক্ষেত বই মার্কেটে চাকরি করেন।
তিনি আরো বলেন, গতকাল সকাল ৭টার দিকে নাঈম বাসা থেকে বের হয় কলেজে যাবার জন্য। দুপুর ১২টার দিকে বাসায় ফেরার কথা ছিল তার। এর আগেই নাঈমের ফোন থেকে পুলিশ ফোন করে জানায়, নাঈমকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া জানান, গতকাল বেলা সোয়া ১২টার দিকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃতদেহটি মর্গে রাখা হয়েছে। তিনি আরো জানান, নিহতের পরনে নটরডেম কলেজের ইউনিফর্ম রয়েছে। আর তার ব্যাগে থাকা জাতীয় জন্ম নিবন্ধন সনদ থেকে তার নাম জানা যায়, নাঈম হাসান। বাবা শাহ আলম দেওয়ান ও মা জান্নাতুল ফেরদৌস। তার বাড়ি ল²ীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার পূর্ব কাজিরখিল দেওয়ানবাড়ি গ্রামে।
এদিকে ডিএসসিসি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটরডেম কলেজের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দোষী চালকের ফাঁসির দাবি জানায়। গতকাল বুধবার বিকাল ৩টা থেকে মতিঝিল ও গুলিস্তান সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই দিনই বিকালে কয়েকশ বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী নগরভবনে প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় ভবনের সামনেই স্লোগান দেয় তারা। এ সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের হাতে প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। অনেক বিক্ষোভকারীর বুকে পিঠে লেখা ছিল, আমি বাঁচতে চাই। তারা স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। পরে ডিএসসিসি থেকে জানানো হয়, বজ্র ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। কমিটির কার্য পরিধি হবে- এই দুর্ঘটনা কীভাবে সংগঠিত হলো তা সবিস্তারে উত্থাপন ও দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়াতে সুপারিশ। মতিঝিল থানার ডিউটি অফিসার এস আই কলিমউদ্দিন বলেন, পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছে। দুর্ঘটনায় জড়িত গাড়ির চালককে আটক করা হয়েছে। পল্টন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, আমরা ঘটনাস্থল থেকে সংশ্লিষ্ট চালক রাসেলকে আটক করেছি। এ ঘটনায় মামলা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়