জাবির ভর্তি পরীক্ষা : প্রক্সি দিতে গিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থী কারাগারে

আগের সংবাদ

এশিয়ান আর্চারিতে পদক খরা ঘোচাল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

আবেদন পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই : সংসদে আইনমন্ত্রী > বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না খালেদা জিয়ার

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারছেন না। পরিবারের পক্ষ থেকে তৃতীয় দফায় তাকে বিদেশ নিতে আবেদন করা হলেও সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল মঙ্গলবার সংসদে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই। গত ১১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার।
একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে পাসের জন্য উত্থাপিত বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২১টি বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর গতকাল আলোচনা চলাকালে বিএনপি সাংসদ রুমিন ফারহানা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে আইনগতভাবে তাকে বিদেশে

চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি জানান। দণ্ডবিধির ৪০১ ধারা মতে এই সুযোগ দেয়ার এখতিয়ার সরকারের রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি কখনো বলিনি ৪০১ ধারা মতে তাকে (খালেদা) বিদেশ যেতে দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু তিনি বর্তমানে সাজা স্থগিতপূর্বক বাসায় আছেন, সেটা ৪০১ ধারার ভিত্তিতেই। তারা যে আবেদনটি করেছিলেন, সেটা ৪০১ ধারার আলোকেই নিষ্পত্তি হয়েছে। আর একটি আবেদন যে ধারার অধীনে নিষ্পত্তি হয়েছে, একই ধারায় বিষয়টি পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।
আইন সবার জন্য সমান উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, তিনি (খালেদা জিয়া) তার চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। আর এটা পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক বিবেচনার কারণে। সাজা স্থগিত রেখে মুক্তির শর্তে তার বাসায় অবস্থান করা এবং বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার কথা থাকলেও তিনি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছেন। আমরা কোনো বাধা দেইনি।
এর আগে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার দাবি জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলে তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হোক। একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, তার (খালেদা) যদি কিছু হয়ে যায় সব দায়দায়িত্ব এই সরকারকে বহন করতে হবে। এ কথা খুব পরিষ্কার। পরে কয়েকশ নেতাকর্মী মোনাজাতে অংশ নেন।
খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা সূত্র জানায়, করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন বিএনপিপ্রধানের রক্তে হিমোগেøাবিন মাত্রা কমে যাচ্ছে। শরীরের হিমোগেøাবিন যা আছে, তা ধীরে ধীরে পানি হয়ে যাচ্ছে। কিছু খেলেই বমি হচ্ছে। অক্সিজেনের লেভেল ওঠানামা করছে। ফলে বাধ্য হয়ে মাঝেমধ্যে কৃত্রিম অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ কারণে নিয়মিত দেয়া হচ্ছে ইনসুলিন। তবে গত দুদিনের তুলনায় এখন একটু ভালো আছেন তিনি। তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক হাসপাতালে রয়েছেন পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান সিঁথি ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক বিএনপি নেতা এ জেড এম জাহিদ।
খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, তার (খালেদা জিয়ার) শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। ২৬ দিন হাসপাতালে থেকে এলো। আবার এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই হাসপাতালে যেতে হলো। চিকিৎসকরা একটাই পরামর্শ দিচ্ছেন বিদেশে নেয়ার। তিনি বলেন, তার হিমোগেøাবিন অনেক কমে গেছে। হাঁটতে চলতে পারছে না।
এদিকে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দেয়াকে সরকারের অমানবিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। তারা বলছেন, সরকার অনেক দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়েছে। সেখানে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সরকারের হুকুমে একটি ফরমায়েশি রায়ে সাজা দেয়া হয়েছে। সরকার চাইলে তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারত। তবে বিএনপি নেতারা এখনো হাল ছাড়ছেন না। তারা মনে করছেন বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে দেখার সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সরকার খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নানা গড়িমসি করছে। দেশের মানুষ তার মুক্তি চায়। কিন্তু সরকার চায় না, কারণ সরকার তাকে ঘোর বিরোধী মনে করে।
মঙ্গলবার ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-ভাসানী) আয়োজিত মওলানা ভাসানীর ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, খালেদা জিয়াকে আইন দেখিয়ে চিকিৎসাবঞ্চিত করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে একটা মামলায় যদি সাজা দেয়া হয়, হাইকোর্ট সে মামলা থেকে আরেকটু সহানুভূতিশীল হয়ে সাজা কমিয়ে দেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট ৫ বছর সাজা বাড়িয়ে দিয়েছেন। হত্যা মামলার আসামি বিদেশ গিয়ে বসে থাকে, অথচ খালেদা জিয়াকে চিকিৎসাও করতে দেয়া হবে না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলছি। এটা খালেদা জিয়ার জীবনরক্ষার বিষয়। সরকার অমানবিক আচরণ করছে। বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, সরকার প্রতিহিংসাবশত মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়েছিল। সেখানে তাকে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে আজকের এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। এখনো সরকার চায় না আমাদের নেত্রীর সুচিকিৎসা হোক। তাই তাকে বিদেশে যেতে অনুমতি দেয়নি।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রতিটি বৈঠকের প্রধান এজেন্ডা হিসেবে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি রাখা হলেও গত সোমবারের বৈঠকে তা ছিল না। বৈঠক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয় নিয়ে কথা বলতে চান না ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্পষ্টভাবে তিনি বলে দিয়েছেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অন্য কেউ খালেদা জিয়ার বিষয়ে মিডিয়াসহ কোথাও কোনো কথা বলবে না। এ কারণেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা এ বিষয়ে গণমাধ্যমে মুখ খুলছেন না।
উল্লেখ্য, গত ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর ২৫ অক্টোবর তার ছোট একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর হয় বায়োপসি পরীক্ষা। এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা পেতে তা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়। প্রায় এক মাসের মতো রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে গত ৭ নভেম্বর বিকাল ৫টায় ছাড়পত্র নিয়ে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় ফেরেন খালেদা জিয়া।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়