তিনজন গ্রেপ্তার : কৌশলে পানের ভেতর ইয়াবা পাচার

আগের সংবাদ

শূন্য থেকে মহাশূন্য জয় : ডিজিটাল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

তৃণমূলের রাজনীতি : বিএনপি (রংপুর বিভাগ) > মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, গতি নেই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী করতে পারছে না তৃণমূল। তবে দল পুনর্গঠনে এবার নড়েচড়ে বসেছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার তাগিদ নিয়ে মাঠে নেমেছেন তারা। সেই মোতাবেক ঘর গোছানো শুরু করেছেন রংপুর বিএনপির নেতারাও। মহানগর, জেলা, থানা ও পৌর কমিটিগুলো বিলুপ্ত করে নতুন করে গোছানোর কাজ শুরু হয়েছে। নতুন কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের জায়গা দিতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন স্থানীয় নেতারা।
বিএনপির রংপুর বিভাগে ১টি মহানগর ৯টি জেলা। এর মধ্যে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, সৈয়দপুর জেলায় আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। রংপুর জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ। কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীতে পূর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ। এছাড়া এই বিভাগের অন্তর্গত ৫৮টি উপজেলা এবং ২৯টি পৌরসভার বেশির ভাগেই কোনো কমিটি নেই। কোথাও কোথাও আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে বছরের পর বছর। রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক টিমের নেতারা বলছেন,

বিভাগের জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড কমিটিগুলো গোছানোর কাজ প্রায়ই শেষ।
জানতে চাইলে বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ভোরের কাগজকে বলেন, জেলাগুলোর কয়েকটির সম্মেলন হয়ে গেছে। দিনাজপুর, পঞ্চগড়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। দিনাজপুরে পুরনো কমিটি হলেও সেখানে নতুন কমিটি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বাকি কমিটিগুলোর মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। বিভাগের সব জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক টিমের সঙ্গে বৈঠক করে সবার সমন্বয়ের ভিত্তিতে প্ল্যান করে পুনর্গঠন করছি। পুলিশ দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে দেয় না। কর্মসূচি দিলে বেরিকেড দেয়। তবুও আমরা চেষ্টা করছি।
রংপুরের বিভাগের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির আন্দোলন কিংবা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তেমন সাংগঠনিক প্রস্তুতি ছিল না এই বিভাগে বিএনপির নয়টি সাংগঠনিক জেলায়। মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিক কাঠামোতে দুর্বলতার মূল কারণ জেলা-উপজেলা কমিটিগুলো হালনাগাদ না থাকা। তারা জানান, জেলা বিএনপির কমিটির মেয়াদ ৬ বছর আগে শেষ হয়ে গেলেও দলীয় কোন্দলে সেই কমিটি এখনো গঠন করা হয়নি। এছাড়া ইতোমধ্যেই মেয়াদ শেষ হয়েছে দুটি জেলা কমিটির। তবে রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক টিমের প্রধান ডা. এ জেড এম জাহিদ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পুনর্গঠনে বিভাগের কর্মকাণ্ডে যোগ দিতে পারেন না। এ কারণে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে পুনর্গঠন কাজ করাটা কঠিন হবে বলে জানিয়েছেন সাংগঠনিক টিমের নেতারা।
জেলা ও মহানগর নিয়ে ক্ষুব্ধ হাইকমান্ড : বহু দিন ধরে দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় না থাকা, দীর্ঘ ৬ বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থতা, তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি না করা এবং শীর্ষ নেতাদের অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব নিয়ে জেলা ও মহানগরের প্রতি চরম অসন্তোষ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করবেন তিনি। ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষুব্ধ। সংশ্লিষ্ট নেতারা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ে সস্মেলন অনুষ্ঠান করে পরে জেলা বিএনপির কাউন্সিল করার কথা জানান বিএনপির এ ভাইস চেয়ারম্যান।
সূত্র জানায়, ৬ বছর আগে কেন্দ্র থেকে জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। সাইফুল ইসলামকে সভাপতি, রইছ আহাম্মেদকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি এবং প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেনকে সভাপতি ও শহিদুল ইসলাম মিজুকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর বিএনপি কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুটি ক্ষেত্রেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা না করে পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়। এরপর ৬ বছর পার হয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি।
অন্যদিকে রংপুর মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত রংপুর সিটি করপোরেশনের ৬টি থানাসহ ৩৩টি ওয়ার্ডের একটি কমিটির সম্মেলনও হয়নি; এমনকি কমিটিও গঠন করা হয়নি। ঢাকা থেকে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট গঠন করে দেয়ার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর ঘোষণা করেনি দলের হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে মহানগর কমিটির ১৬ জন সহসভাপতিসহ বিভিন্ন পদের নেতা দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। এদের মধ্যে দুই নেতা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। ফলে মহানগর বিএনপি নামসর্বস্ব দলে পরিণত হয়েছে।
গ্রুপিংয়ে ঝিমিয়ে পড়েছে কার্যক্রম : রংপুরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ঝিমিয়ে পড়েছে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম। কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার ইশারায় চলে রংপুরের জেলা মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যক্রম। জেলা ও মহানগরের দুয়েকজন নেতা দলীয় কর্মীদের খোঁজখবর নিলেও উপজেলা পর্যায়ে নেতারাকর্মীদের এড়িয়ে চলেন। এখন বিএনপি করাই তাদের অপরাধ বলে মন্তব্য করেন কর্মীরা।
২০১৭ সালে রংপুর জেলা ও মহানগরের কমিটি গঠন করা হয় দুই বছরের জন্য। কমিটির মেয়াদ দেড় বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও নতুন করে কমিটি গঠনে নেই কোনো তৎপরতা। এছাড়া দলের মহানগর কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন মারা যাওয়ার এক বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত কাউকেই সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়নি। দলের একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিগত মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি সামসুজ্জামান সামু, বর্তমান মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান লাকু, জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু, সাধারণ সম্পাদক সামসুল হক ঝন্টু, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক লিটন পারভেজসহ একাধিক নেতা।
তাদের প্রতিপক্ষ গ্রুপে রয়েছেন- মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম মিজু, সহসভাপতি কাওসার জামান বাবলা, সহসভাপতি সুলতান আলম বুলবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম। এদের দুটি পক্ষের গৃহবিবাদের কারণে রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনগুলো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না বলে একাধিক নেতাকর্মী অভিযোগ করেছেন। রংপুর যে কোনো রাজনৈতিক ইস্যুতে এদের এক মঞ্চে দেখা যায় না। তারা বরাবর একই কর্মসূচি ভিন্ন ভিন্ন মঞ্চে পালন করে থাকেন। তবে এ নিয়ে সামসুজ্জামান সামু ও সহিদুল ইসলাম মিজুর কাছে জানতে চাইলে তারা দুজনেই এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা বলেন, বড় দলে নানা মতপার্থক্য থাকতেই পারে। এটা স্বাভাবিক বিষয়। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা বলেন, দলের ভেতর কিছুটা সংকট রয়েছে, পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে; তবে এখন তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। নিশ্চয় সংকট ঘুচবে।
৫ বছর ধরে কমিটি নেই দিনাজপুর ও পঞ্চগড়ে : ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয় দিনাজপুর জেলা বিএনপির। বিএনপির জেলা কমিটির মেয়াদ দুই বছর। সেই হিসাবে গত মাসে এই কমিটি মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে নতুন করে সম্মেলনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এই জেলায়। ২২টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে ৮ ইউনিটের কমিটি অনেকবার পুনর্গঠন হওয়ার পরও বাতিল হয়েছে। দিনাজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রেজওয়ানুল হক বলেন, জেলায় বিএনপির ১২৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই নতুন কমিটি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। তবে করোনার কারণে পুনর্গঠন শেষ করা যায়নি।
গত ৬ বছর ধরে দুই পক্ষের দ্ব›েদ্ব পঞ্চগড় জেলা বিএনপির কোনো কমিটি নেই। এখানে একটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার। আরেক পক্ষের নেতৃত্বে পৌর বিএনপির সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম। জানতে চাইলে জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আমাদের দ্ব›েদ্বর কারণে কমিটি আটকে আছে, এটা ঠিক নয়। বিভিন্ন কারণে কমিটি হয়ে উঠছে না।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়ে চলছে লালমনিরহাট : সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়ে চলছে লালমনিরহাট জেলা বিএনপির কমিটি। ২০১৭ সালের ২৫ মে অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুকে সভাপতি ও হাফিজুর রহমান বাবলাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু এরপর ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি লালমনিরহাট জেলার।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা বলেন, জেলার বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটির সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা যায়নি। তবে নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে। ৫টি উপজেলা ও ২টি পৌরসভাসহ ৭টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে ৫টি ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। অন্য ২টির আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে।
বগুড়া জেলায় আহ্বায়ক কমিটি পুনর্গঠন : ৬ বছর পর বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি পুনর্গঠন করেছে বিএনপি। গত ১৫ নভেম্বর শনিবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রেজাউল করিম বাদশাকে আহ্বায়ক, মোশাররফ হোসেন এমপিকে ৩নং যুগ্ম আহ্বায়ক এবং শহিদুল ইসলাম বাবলুকে ৩৪নং ও এইচ এস মাফতুন আহমেদ খান রুবেলকে ৩৫নং সদস্য মনোনীত করে বগুড়া জেলা বিএনপি পুনর্গঠন করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়