তিনজন গ্রেপ্তার : কৌশলে পানের ভেতর ইয়াবা পাচার

আগের সংবাদ

শূন্য থেকে মহাশূন্য জয় : ডিজিটাল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

টিকা তৈরি করে বিদেশে পাঠানোর সক্ষমতা আছে : সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১) টিকা উৎপাদন করে অন্য দেশকে দেয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। গতকাল সোমবার সংসদে সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ পুরস্কার বিতরণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে পুরস্কার চালু করায় জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা- ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানাতে গতকাল জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সাংসদ সাবেক প্রধান হুইপ আব্দুস শহীদ কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ বিধিতে সাধারণ আলোচনার জন্য জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব তোলেন। প্রস্তাবে বলা হয় -জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনার মাধ্যমে ইউনেস্কোকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানানো হোক। এই প্রস্তাব ওঠানোর পর তা নিয়ে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি ও বিরোধী দলের সাংসদরা। আলোচনা শেষে সংসদে সেটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদে সভাপতিত্ব করেন।
এ বিষয়ে আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সিনিয়র সাংসদ ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ওয়াসিকা আয়শা খান, বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, বিএনপির হারুনুর রশীদ, জাপার রুস্তম আলী ফরাজী, পীর ফজলুর রহমান প্রমুখ।
সা¤প্রতিক বিদেশ সফরের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের সাফল্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। আমি এটাও বলে এসেছি, আমরা নিজেরা ভ্যাকসিন তৈরি করতে চাই। ভ্যাকসিন তৈরির যে বাধাগুলো আছে, সেগুলো আপনাদের সরিয়ে দিতে হবে। করোনা ভাইরাসের টিকা সর্বজনীন বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, এটা উন্মুক্ত করতে হবে। এটা

জনগণের প্রাপ্য। জনগণের সম্পদ হিসেবে দিতে হবে। সারাবিশ্বে কোনো মানুষ যেন ভ্যাকসিন থেকে দূরে না থাকে। আমাদের সুযোগ দিলে আমরা উৎপাদন করব। আমরা বিশ্বে দিতে পারব। সে সক্ষমতা আমাদের আছে। জমিও নিয়ে রেখেছি। এভাবে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
গøাসগোতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন এবং প্যারিসে ইউনেস্কোর ৭৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে দুই সপ্তাহের সফর শেষে গত রবিবার সকালে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের প্রস্তাবে গত বছর ডিসেম্বরে ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের শরৎকালীন অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক এই পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বঙ্গবন্ধুর নামে জাতিসংঘের কোনো অঙ্গসংস্থার প্রবর্তন করা প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার এটি।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার চালু করায় ইউনেস্কোকে সংসদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান। ‘মোটিভ ক্রিয়েশন’ নামে উগান্ডার একটি সংগঠন এবারের ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক প্রাইজ ইন দ্যা ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ পুরস্কার পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিন ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশেরও কোনো না কোনো উদ্যোক্তা এই পুরস্কার পাবে বলে আমি আশা করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫ এর পর আমরা কী দেখেছি? ১৯টা ক্যু হয়েছে। হাজারো সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈনিক, বিমানবাহিনীর অফিসার ও সৈনিক এবং সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। কারাগারে ফেলে রাখা হয়েছে, নির্যাতন চলেছে। গুলি-অস্ত্র, দুর্নীতি -এটাই ছিল জননীতি। এর বাইরে একটা দেশকে উন্নত করার কোনো আন্তরিকতাই আমরা দেখিনি।
তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশে আসার দেখেছি, মানুষ বিজ্ঞান পড়েই না। এই অবস্থা! বিজ্ঞানের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। গবেষণাত ছিলই না। কোনো বিশেষ বরাদ্দও ছিল না। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা পিছিয়ে নেই। আমি ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের জনগণকে। তারা বারবার আমায় ভোট দিয়েছে। সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। এক দশকের ভেতরে বাংলাদেশের পরিবর্তন সারাবিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। এখন বাইরে গিয়ে বাংলাদেশের কাউকে কথা শুনতে হয় না।
সংসদনেতা বলেন, ভালো কাজ চোখে না দেখলে আমাদের কিছু বলার নেই। আমরা সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আমরা তৈরি করেছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ২০০১ সালে অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় খালেদা জিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা পুনরায় সেটি চালু করি। যুবসমাজকে উৎসাহিত করতে সেখান থেকে ইয়াংবাংলা নামে একটা উদ্যোগ নেয়া হয়। তাদের স্টার্টআপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তাদের এটাও বলা হয়, শুধু চাকরির পেছনে ঘুরবে কেন, চাকরি দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে। নিজের পায়ে দাঁড়াবে। নিজের ব্যবসা করবে, নিজেরা অন্যকে চাকরি দেবে। এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আমাদের সরকারের আমলে।
স্পিকারকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং রেহানার (বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা) ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকসহ আমাদের কিছু তরুণ সাংসদ মিলেই ইয়াবাংলা স্টার্টআপ প্রোগ্রাম নিয়েছে। এই প্রোগ্রামের জন্য আমরা বিশেষ বরাদ্দও রেখেছি। ছেলেমেয়েরা যদি কেউ উদ্যোগ নিতে চায়, আমরা তাদের পাশে দাঁড়াব। অনলাইনে কেনাবেচা, ই-কমার্স, টেন্ডার এগুলোতো হয়েছে বাংলাদেশে। সামনে আরো সময় আছে। আরো হবে। একদিনে তো হয় না। ধাপে ধাপে করতে হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বক্তারা বলেন, তার জম্ম না হলে এদেশ কখনো স্বাধীন হতো না, তারা বঙ্গবন্ধুর জনগণের প্রতি দরদ ও স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের পুনর্গঠনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বক্তারা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশের উন্নয়নেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন। বক্তারা ইউনেস্কো কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার ঘোষণায় ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়