লিটন চক্রবর্তী, রাজবাড়ী থেকে : রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল লতিফ মিয়াকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার রাত ১২টার দিকে বানিবহ ইউনিয়নের বার্তা গ্রামে নিজের বাড়ি থেকে ৩০০ মিটার দূরে এ ঘটনা ঘটে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। লতিফ মিয়া বার্তা গ্রামের মৃত আরিফ উদ্দিন মিয়ার ছেলে।
জানা যায়, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বানিবহ ইউনিয়নের চেয়ারপ্রার্থী ছিলেন লতিফ মিয়া। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় তিনি অনেক আগে থেকেই গণসংযোগ করে আসছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত বানিবহ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করে রাজবাড়ী শহরে যান তিনি। বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকায় নেয়ার পথে মানিকগঞ্জের মুন্নু মেডিকেলে মারা যায় লতিফ মিয়া। আব্দুল লতিফ মিয়া ২০০৩ সালে বানিবহ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
প্রতিবেশী আব্দুল কাদির বলেন, রাস্তার পাশেই আমার ঘর। গুলির শব্দ শুনে আমি আর আমার দুই ছেলে বের হয়ে আসি। এসে দেখি লতিফ ভাই রাস্তার ওপর বসে আছে। আমরা তখন চিৎকার করতে থাকি। তখন আরো লোকজন এসে তাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
লতিফ মিয়ার বড় ভাইয়ের ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, কাকার নির্বাচনের ক্যাম্পেইন ছিল ৫নং ওয়ার্ডের ফুলতলা গ্রামে। সেখানে আমরা রাত ৯টা পর্যন্ত একসঙ্গে ছিলাম। কাজ শেষ হলে কাকা বানিবহ বাজারে পার্টি অফিসে আসেন। সেখান থেকে রাজবাড়ী শহরে একটা কাজে যান। রাত ১২টার দিকে গুলির শব্দ শুনে আমরা বের হয়ে এসে দেখি কাকা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছে।
নিহত লতিফ মিয়ার স্ত্রী শেফালী বেগম বলেন, আমার স্বামীর শত্রæ তার জনপ্রিয়তা। এজন্যই তাকে আজ খুন হতে হলো। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ হত্যার বিচার চাই।
বানিবহ ইউনিয়ন পরিষদ বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাচ্চু বলেন, লতিফ ভাই রাজনৈতিক হত্যার শিকার। আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই দ্রুত জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হোক।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাউদ্দিন বলেন, আমরা রাতেই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছি। জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে ইউনিয়ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা অনেকগুলো বিষয়কে সামনে নিয়ে তদন্ত করছি। আশা করি, দ্রুতই জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পারব।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. তায়রুন বলেন, রাত ১২টার পর লতিফ মিয়াকে হাসপাতালে আনা হয়। তার বুকে ও পাঁজরে পাঁচটি ক্ষত থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ফরিদপুরে পাঠিয়ে দেই। ভোরে মৃত অবস্থায় তাকে আবার হাসপাতালে আনা হয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।