দেয়াল চাপায় শিশুর মৃত্যু : কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিস

আগের সংবাদ

বিজয়ী বিদ্রোহীদের ভাগ্যে কী আছে : সিদ্ধান্ত অমান্যকারীরা সাময়িক বহিষ্কার > ১৯ নভেম্বর আ.লীগের সভায় আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

তেলের দাম বৃদ্ধি : খেসারত দেবে কৃষি, পোশাক শিল্প ও নিত্যপণ্য

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : বাংলাদেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর সুদূরপ্রসারী বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জনজীবনে। প্রথমেই ভাড়া বেড়েছে গণপরিবহনে। পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দামও বেড়েছে বাজারে। এ ধারাবাহিকতায় কৃষি, শিল্প উৎপাদনসহ সব ক্ষেত্রে এই তেলের মূল্য বাড়ানোর গভীর প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন ভোক্তা এবং অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, করোনার ধকল কাটিয়ে অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করছে, ঠিক তখনই জ¦ালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, তেলের মূল্য বাড়ানোর সরাসরি প্রভাব পড়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। যোগাযোগ খাতে ডিজেলের চাহিদা ৬৪ শতাংশের মতো। সরকারি ঘোষণায় ২৩ শতাংশ মূল্য বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহনে ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দাবি, তেলের দাম বাড়ানোয় ভাড়া বাড়ানোর ফলে বছরে ৭৩ হাজার কোটি টাকা জনগণের পকেট থেকে বেরিয়ে যাবে, যে মুনাফা লুটবেন দেশের পরিবহন মালিকরা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের পরিবহন ভাড়া হিসাব করে সংগঠনটি জানায়, দৈনিক ২৫-৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় হচ্ছে এই পথে। এক কিলোমিটার দূরত্বের জন্যে গাড়িতে চড়লেই এখন ৫ টাকার পরিবর্তে দশ টাকা দিতে হচ্ছে। লঞ্চ স্টিমার ভাড়া বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। সাধারণ মানুষের যাতায়াত খরচের বাজেটে এ এক বড় ধাক্কা।
কৃষি খাতে ডিজেলের চাহিদা মোট আমদানির ১৮ শতাংশ। নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল এই সময়টাতেই ডিজেলের চাহিদা থাকে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে ধানের সবচেয়ে বড় আবাদ হয় এই বোরো মৌসুমে। কৃষকরা বলছেন, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বোরো চাষে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে। মুন্সীগঞ্জের কৃষক কামাল তালুকদার বলেন, সামনে বোরো মৌসুমে চাষের খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা এখন হতাশ। এই মুহূর্তে ডিজেলের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই উচিত হয়নি। হাবিব নামে আরেকজন কৃষক বলেন, কৃষিযন্ত্রের সবই চলে ডিজেলে। তেলের অতিরিক্ত দাম খরচ বাড়াবে জমি চাষ, সেচ থেকে ধান কাটা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই। ক্ষোভ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, একবারে ১৫ টাকা বাড়াইছে, এটি সবার বিবেককে নাড়া দিছে। এই সরকার চাচ্ছে কী? এই সরকার কি জনগণের সরকার নয়? এই সরকার কি কৃষকের সরকার নয়?
এদিকে পণ্য পরিবহনের বাড়তি খরচ যোগ হয়েছে নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে। নিয়মিত বাজার করা দেলোয়ারা খাতুন বলেন, সবদিকে খরচ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের কষ্ট আরো বাড়ল। তরি-তরকারি, চাল-ডাল সবকিছুর দাম বাড়ায় দিছে এই তেলের দাম বাড়ানোর জন্য। এমনিই করোনার কষ্টে আছে মানুষ। সাধারণ মানুষ, মধ্যবিত্ত মানুষের বেহাল অবস্থা। তেলের দাম বাড়ানোয় সবচেয়ে বড় সংকটে পড়বে সাধারণ খেটে খাওয়া গরিব মানুষ। ন্যায্যমূল্যের পণ্যের জন্য ক্রেতাদের লাইনও তাই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।
অন্যদিকে ২৩ শতাংশ তেলের দাম বাড়ানোর বড় প্রভাব পড়ছে শিল্প-কারখানার উৎপাদন খরচের ওপর। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, তেলের বাড়তি দামের কারণে ১ শতাংশ উৎপাদন খরচ বাড়বে। ফলে রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হবে।
বাংলাদেশে মোট তেল আমদানির ৭৩ শতাংশই ডিজেল। জ্বালানি বিভাগের তথ্যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বেশি দামে আমদানি করে কমদামে বিক্রি করায় গত ৫

মাসে ১১০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। তবে সরকারের দাবি, আন্তর্জাতিক দরের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম না বাড়ালে দৈনিক ২০ কোটি টাকা লোকসান হবে। জ্বালানি সচিব আনিসুর রহমান বলেন, অক্টোবরে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছিল। এ হিসাবে মাসে ক্ষতি ৬০০ কোটি বা তারও অধিক। এই মুহূর্তে বিপিসির হাতে আর অন্য কোনো অস্ত্র ছিল না, দাম বাড়ানো ছাড়া।
অন্যদিকে, গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) হিসাবে, গত ৭ বছর তেল বিক্রি করে ৪৩ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে। সেই তুলনায় তেলের দাম কমানো হয়নি। প্রতি লিটার ডিজেল আমদানিতে সরকার ভ্যাট ট্যাক্স বাবদ ১৯ টাকা আদায় করে। এ ছাড়া শুল্ক হ্রাস করেও লোকসান কমানো যেত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়