চকবাজারে প্লাস্টিক গোডাউনে আগুন

আগের সংবাদ

তথ্যপ্রযুক্তি সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি : বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর ফ্রিল্যান্সার দেশ

পরের সংবাদ

ফরাসি উদ্যোক্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে ফরাসি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার দুপুরে প্যারিসে ফ্রান্সের ব্যবসায়ী নেতা ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে এক সভায় এ আহ্বান জানান তিনি। ফরাসি উদ্যোক্তারা তাদের বিনিয়োগের সর্বোচ্চ লাভ ফেরত পাবেন বলেও আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে কাজ করে জানিয়ে তিনি বলেন, ফরাসি বিনিয়োগকারীদের সহায়তা করতে পারলে খুশি হব। বাংলাদেশে আপনাদের বিনিয়োগ প্রবেশ অধিকতর সহজ করতে অংশীদার হিসেবে একজন স্থানীয় উদ্যোক্তাকে খুঁজে নিতে পারেন। ফরাসি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্ব গড়ে তোলারও আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে ফরাসি ব্যবসায়ীরা অধিক লাভবান হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি নিশ্চিত ফরাসি উদ্যোক্তারা তাদের বিনিয়োগের সর্বোচ্চ লাভ ফেরত পাবে। তাই আমরা এ অঞ্চলে সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশে বিনিয়োগ করার আমন্ত্রণ জানাই। আমাদের আইনি ও নীতি কাঠামো টেকসই সংস্কারের জন্য উন্মুক্ত। আমাদের শক্তিশালী আইনি ব্যবস্থা বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা দেয়।
সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাই-টেক পার্ক স্থাপনের কথা উল্লেখ করে সেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে আঞ্চলিক বাজারগুলোতে প্রবেশ সুবিধার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক কানেকটিভিটির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। এ অঞ্চলের

সঙ্গে আমাদের সড়ক, রেল, মেরিটাইম, জ¦ালানি এবং ডিজিটাল কানেকটিভিটি সত্যিকারের গেইম-চেইঞ্জার হবে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বড় অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান সেতু হিসেবে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, গতকালের আলোচনায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে এক মত হয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিক অংশীদারত্বেও দ্বিপক্ষীয় সুসম্পর্কের প্রতিফলন হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় লাভের ভিত্তিতে ফরাসি ব্যবসায়ীদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সার্বিকভাবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রবৃদ্ধির জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের অঞ্চলটা অধিকতার শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ। মহামারি সত্ত্বেও বাংলাদেশের ব্যাপক বিনিয়োগ ও অবকাঠামো প্রকল্পের কার্যক্রমের গতি কমাতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা একটি শান্তিপূর্ণ, সার্বজনীন এবং সমৃদ্ধ দেশ গড়া। ২০১৭ সালে প্যারিস সফরের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে যেটা বলেছিলাম সেটা এখানে আবার বলছি। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ফ্রান্সের আরো বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন আর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজন আরো বিদেশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্য। আমরা একসঙ্গে উভয় দেশের অর্থনীতির জন্য লাভজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারি।
গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথাও তুলে ধরেন টানা তিন বারের সরকারপ্রধান। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের ৫ দশমিক ২১ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়া প্যাসিফিকে এই প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ। আমাদের কৌশল হচ্ছে জনগণের জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে কাজ করা।
আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন নীতিমালার কারণে আর্থসামাজিক সেক্টরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে গৃহ প্রদান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাংলাদেশের অর্জন ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে কোভিড-১৯ টিকার আওতায় আনতে সরকারের পরিকল্পনার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ এবং ফ্রান্সের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুই দেশের বাণিজ্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ফ্রান্স এখন বাংলাদেশের পঞ্চম রপ্তানি গন্তব্য। ২০২৫ সালের মধ্যে বাণিজ্য দ্বিগুণ করতে চায় সরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়