ক্র্যাবের ২ সদস্যকে হুমকি দেয়া পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার

আগের সংবাদ

গাপটিল-বাটলার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই

পরের সংবাদ

ভ্রমণ ভিসায় শ্রমিক যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে ‘বডি কন্ট্রাকে’! স্মার্টকার্ড বন্ধে মন্ত্রণালয়ে বিএমইটির চিঠি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামরুজ্জামান খান : সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মী ভিসা বন্ধ থাকলেও ভিজিট ভিসায় পাড়ি জমিয়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক। এরই মধ্যে ভিজিট ভিসায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন প্রায় অর্ধ লাখ শ্রমিক! এলিট ফোর্স র‌্যাবের অভিযানে এই চক্রের হোতাসহ আটজন গ্রেপ্তরের পর মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ৭ বছরে প্রায় ৫০০ জনকে এই কায়দায় দুবাই পাচারের হোতার জবানবন্দিতে মিলেছে চক্রের খোঁজ। ‘বডি কন্ট্রাকে’ (ঢাকা থেকে দুবাই বিমানবন্দর যাওয়া) বিমানবন্দর পাড়ি দিয়ে এদের অনেকে পড়েছেন অনিশ্চয়তায়। অবশ্য চার দিনে ১ হাজার ৩০০ জন বিএমইটির অনুমোদন বা স্মার্টকার্ড নিয়ে গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। তবে এই প্রক্রিয়ায় আবেদন বেড়ে যাওয়ায় স্মার্টকার্ড বন্ধ করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিএমইটি।
এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন ভোরের কাগজকে বলেন, ভিজিট ভিসায় স্মার্টকার্ড পাওয়ার কথা নয়। এভাবে শ্রমিক যাওয়ারও কথা নয়। কীভাবে কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম বলেছেন, ভিজিট ভিসায় যারা বিএমইটির অনুমোদন নিয়ে যাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সির একটা দায়বদ্ধতা থাকছে। বিদেশে গিয়ে চাকরি না পেলে টাকা ফেরত দিতে তারা চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের অনুমোদন সাপেক্ষে চাকরি পাওয়ার কথা বিবেচনা করে এদের স্মার্টকার্ড দেয়া হলেও অন্যদিক বিবেচনায় ভিজিট ভিসায় স্মার্টকার্ড বন্ধ করতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। কয়েক দিন স্মার্ট কার্ড দিয়ে ১ হাজার ৩০০ জন লোক পাঠানোর পর তারা সেখানে চাকরি পেয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ভিজিট ভিসায় শ্রমিক যাওয়ার আবেদন বেড়ে যাওয়ায় তা বন্ধ রাখা হয়েছে। এখনো ১৫ হাজার আবেদন জমা আছে। এগুলো ছাড়ের জন্য চাপ রয়েছে। ভিজিট ভিসায় গিয়ে ৩ হাজার ডলারে তা কনভার্ট করে অনেকে চাকরি পাচ্ছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা। বিএমইটির অনুমোদন নিয়ে কয়েক হাজার মানুষ ভিজিট

ভিসায় সংযুক্ত আরব আমিরাত যাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বৈধভাবে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে অন্যভাবে যাওয়ার প্রবণতা কমবে বলে তিনি আশা করেন।
পুলিশের ডিআইজি (ইমিগ্রেশন) মনিরুল ইসলাম বলেছেন, আমরা বিএমইটি কার্ড দেখে ছাড়পত্র দেই। এছাড়া যারা পূর্বে দুবাইয়ে কাজ করেছেন তাদের ছাড়া হয়ে থাকে। ভিজিট ভিসার যাত্রীদের ব্যাপারে খোঁজখবর করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হয়। মানবপাচার রোধে তারা সব সময় সজাগ বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মী ভিসা বন্ধ ছিল। বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময় তা চালু না হলেও আড়াই মাস আগে তা ফের চালু হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র, আল হারমাইন, আল মোবারক, ইসতেমা, সামস ও নেপ ইয়ার রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ভিজিট ভিসায় ১ হাজার ৩০০ জন শ্রমিক বিএমইটির স্মার্টকার্ড নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত গেছেন। এছাড়া প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক ‘বডি কন্ট্রাকে’ গেছেন। যার মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার জনের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায়। এজন্য দুই বিমানবন্দরেই তৎপর এদের নির্ধারিত দালাল। অভিযোগ রয়েছে, বিমানবন্দরে দায়িত্বরত ১৯টি সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে রিক্রুটিং এজেন্সি ও এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ মিলে এসব লোক পাঠিয়েছেন। এদের অনেকে সেখানে গিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
৭ বছরে একজন পাচার করেছেন ৫০০ জন : র‌্যাব জানায়, একাধিক ভুক্তভোগী র‌্যাব-৩ এ অভিযোগ করেন, একটি চক্র তাদের ভ্রমণ ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠাতে গিয়ে প্রতারণা করেছে। অভিযোগকারীরা বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড ছাড়া অবৈধভাবে বিদেশ যেতে অস্বীকৃতি জানান এবং টাকা ফেরত চান। তখন ওই মানবপাচারকারী চক্র নকল বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড তৈরি করে লোকজনকে সরবরাহ করে। নকল কার্ড নিয়ে ভিক্টিমরা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন করতে গেলে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সদস্যরা তাদের ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড নকল হিসেবে শনাক্ত করেন এবং বিদেশযাত্রা স্থগিত করেন। তখন ভুক্তভোগীরা তাদের সংশ্লিষ্ট দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কোনো সন্তোষজনক জবাব না দিয়ে সবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ নভেম্বর র‌্যাব-৩ ঢাকার তুরাগ, উত্তরা, রমনা, পল্টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের মো. নাইম খান ওরফে লোটাস (৩১), মো. নুরে আলম শাহরিয়ার (৩২), মো. রিমন সরকার (২৫), মো. গোলাম মোস্তফা সুমন (৪০), মো. বদরুল ইসলাম (৩৭), মো. খোরশেদ আলম (২৮), মো. সোহেল (২৭) ও মো. হাবিবকে (৩৯) গ্রেপ্তার করে। ধৃতরা জানান, এই চক্রের মূলহোতা মো. নাইম খান ওরফে লোটাস (৩১)। তিনি দুবাই প্রবাসী, চলতি বছরের মে মাসে দেশে ফেরত আসেন। তিনি এইচএসসি পাস এবং ২০১২ সালে ওয়ার্কপারমিট নিয়ে দুবাই যান। দুবাই শ্রম বাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা থাকায় দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান ভ্রমণ ভিসায় দুবাই অবস্থানকারীদের ওয়ার্কপারমিট দিয়ে কাজের বৈধতা দেয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নাইম মানবপাচারে জড়িয়ে দুবাই এবং বাংলাদেশে তার পরিচিতদের মাধ্যমে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লোকজনকে দুবাই যেতে উদ্বুদ্ধ করেন। দুই থেকে তিন লাখ টাকার তিনি তাদের ভ্রমণ ভিসায় দুবাই নিয়ে যান। ভ্রমণ ভিসায় যাওয়ার পর কেউ কেউ কাজের সুযোগ পেলেও অধিকাংশই কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ৭ বছর ধরে তিনি পাঁচ শতাধিক লোককে দুবাই পাচার করেছেন। দুবাইয়ে ফারুক নামে তার একজন সহকারী রয়েছেন এবং গ্রেপ্তারকৃত মো. নুরে আলম শাহরিয়ার (৩২) বাংলাদেশে তার মূল সহযোগী। বিএমইটি কার্ড জালিয়াত চক্রের মূলহোতা হাবিব এবং খোরশেদ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়