দেশে ২ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৮৪৬

আগের সংবাদ

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সেমিতে অস্ট্রেলিয়া

পরের সংবাদ

পুড়ে কয়লা হলেন ৫ শ্রমিক : জুতার কারখানায় আগুন, ডিএনএ পরীক্ষায় পরিচয় শনাক্ত, লাশ পেতে ২১ দিনের অপেক্ষা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটে কামালবাগ এলাকায় রোমানা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি জুতার কারখানায় লাগা ভয়াবহ আগুনে অঙ্গার হয়েছে ৫ শ্রমিকের দেহ। মুখগুলো দেখে আর চেনার উপায় নেই। কয়লা হওয়া দেহগুলো শনাক্ত হয়েছে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে। নিহতরা হলেন- কারখানাটির সেফ ম্যান মানিকগঞ্জের মৃত আব্দুল রশিদ মিয়ার ছেলে আমিনুল মিয়া (৩৬), জুতার কাটিং মাস্টার বরিশালের মুলাদি এলাকার সিকান্দার মিয়ার ছেলে আব্দুল রহমান রুবেল (৩৫), সিনিয়র জুতার কারিগর কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের শহুর আলীর ছেলে শামীম মিয়া (৩৫), জুতার কারিগর চাঁদপুরের মনির হোসেন (৩৫) ও শেরপুরের শ্রীবরদী এলাকার মৃত সাইফুল ইসলামের ছেলে কামরুল হাসান (২২)। নিহত মনিরের বোন জামাই মো. শাহজাহান ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার কাজ শেষ করে রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ঘুমাতে যান মনির। এরপর রাত ১টার দিকে আগুন লাগে। বের হওয়ার দরজায় দাউ দাউ করে আগুন জ¦লতে থাকায় আর বের

হতে পারেননি। মৃত মনিরের স্ত্রী নুরুন্নাহার দুই সন্তান মিম (৯) ও বায়েজিদকে (৪) নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মনিরের অনেক স্বপ্ন ছিল ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করার। এখন সবই অনিশ্চিত। শুধু মনির কিংবা কামরুল নয়, মৃত ৫ জনের পরিবারেই নেমে এসেছে অন্ধকারের ছায়া। মৃত শামীমের বড় ভাই কাজল মিয়া জানান, লাশ নিতে হলে ডিএনএ টেস্ট করাতে হবে। কারণ লাশগুলো দেখে কোনটা কার, সেটি বোঝার উপায় নেই। থানা পুলিশ আমাদের জানিয়েছে ডিএনএ টেস্ট করতে ২১-২৩ দিন সময় লাগবে। এখন সেই প্রতীক্ষা শুরু হলো আমাদের।
জুতার কারখানাটিতে সরজমিনে দেখা যায়, কামালবাগে আবাসিক এলাকা থেকে ১৫০ গজ দূরে রুমানা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের অবস্থান। কারখানাটির দ্বিতীয় তলায় রাবার ও প্লাস্টিকের কাঁচামালের মজুদ থাকে। জরাজীর্ণ ভবনের নিচতলায় রাখা আছে ডিওপি তেলের অনেকগুলো ড্রাম। আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে সেগুলো। প্লাস্টিক পুড়ে পুরো রুম ও বাইরে স্তূপে পরিণত হয়েছে। দোতলায় থাকা রাবারে পানি ছিটানোর কারণে সেটি শক্ত হয়ে প্রলেপ পড়েছে। ফলে ভেতরে পানি ঢুকছে না। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মেশিন দিয়ে শক্ত প্রলেপ কেটে পানি ছিটাচ্ছেন।
ভবনটির দ্বিতীয় তলায় শ্রমিকদের থাকার জন্য করা হয়েছিল খোপ খোপ ঘর। নিহত পাঁচ শ্রমিক ওই ঘরগুলোর একটিতে ঘুমিয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কারখানা থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুনে মদিনা বাজারের ১০টি দোকানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়ে ছাই দোকানগুলোতে থাকা কাঁচামাল। কাঁচাবাজারের সুপারভাইজার মো. রফিক বললেন, ১০-১২ বছর আগে রফিক হাজী এই জমি লিজ নিয়ে কারখানাটি তৈরি করেছিলেন। কারখানায় অন্তত অর্ধশত শ্রমিক দুই শিফটে কাজ করেন। রফিক হাজী চকবাজারের রহমতগঞ্জের হাজী গলি রোডে বসবাস করলেও তার গ্রামের বাড়ি কেরানীগঞ্জে।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা। এ বিষয়ে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের প্রধান পরিদর্শক মো. সাইফুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ঘটনাস্থল থেকে কেমিক্যাল সদৃশ আলামতও সংগ্রহ করা হয়েছে। সিআইডির রাসায়নিক ল্যাবে পরীক্ষা করে তারপর বলা যাবে, এগুলো দাহ্য কোনো কেমিক্যাল ছিল কিনা।
চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবদুল কাইউম জানান, ডিএনএ টেস্টের পর মৃতদের লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সহকারী উপপরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, সাধারণত বিভিন্ন জেলা থেকে অল্প শিক্ষিত মানুষ পুরান ঢাকার এই জুতার কারখানায় কাজ করতে আসেন। কাজের সময় তাদের অনেকে বিড়ি-সিগারেট খান। হয়তো সিগারেট কিংবা কয়েলের আগুনেও এই ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে। এছাড়া অন্য কোনো কারণ আছে কিনা, তা তদন্ত শেষে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়