দেশে ২ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৮৪৬

আগের সংবাদ

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সেমিতে অস্ট্রেলিয়া

পরের সংবাদ

ধর্মঘটে `জিম্মি’ পরীক্ষার্থীরা, অংশ নিতে পারেনি অনেকে : বিভিন্ন পরীক্ষা রয়েছে আজ এবং আগামীকাল

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নীলফামারী থেকে বাসযোগে গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা আসার কথা ছিল শিক্ষার্থী শতাব্দী রায়ের। আগামীকাল রবিবার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা তার। সকালে প্রস্তুতি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখেন পরিবহন চলাচল বন্ধ। সময়ের মধ্যে ঢাকা যেতে না পেরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ওই শিক্ষার্থী। শতাব্দী রায় বলেন, আগামীকাল থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা রয়েছে আমার। এরপর ১২ নভেম্বর ঢাকায় টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৩ নভেম্বর রাজশাহীতে রুয়েট, কুয়েট এবং চুয়েটের যৌথ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেব। এখন বাস বন্ধ থাকায় আমার মতো অনেক শিক্ষার্থীর সমস্যা হবে।
শুধু শতাব্দীই নয়, গতকাল শুক্রবারের বাস ধর্মঘটে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। দূরপাল্লার বাস না থাকায় যাত্রা বাতিল হয়েছে তাদের। নিরুপায় হয়ে স্বল্প পথের যাত্রীরা চলাচল করেছেন ইজিবাইক অথবা থ্রিহুইলারে চেপে। এতে কেউ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন কেউ নিজ বাড়ির কাছেই আটকে গেছেন। অনেকেই বলেছেন, পরীক্ষার্থী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকদের জিম্মি করে, দুর্ভোগে ফেলে দাবি আদায় করতে চাচ্ছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। মানুষকে বিপদে ফেলে দাবি আদায়ের বেপরোয়া মনোভাব কখনোই সুফল বয়ে আনে না। আর এভাবে হুটহাট বাস বন্ধ করে দেয়া ঠিক না। সমস্যা হলে তারা আলোচনা করে সমাধান করুক, মানুষকে জিম্মি করছে কেন?
কুমিল্লা নগরের ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হাসান ও বিষ্ণুপুর এলাকার নজরুল ইসলামের বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাধীন সাত ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা ছিল ঢাকায় গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টায়। শুক্রবার সকাল ৯টায় ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে কুমিল্লা নগরের শাসনগাছা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখতে পান সব ধরনের রুটের বাস চলাচল বন্ধ। নানাভাবে চেষ্টা করেও সকালে ঢাকায় যাওয়ার পরিবহন পাননি নাজমুল ও নজরুল।
জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার দুদিনে ৩৫টি দপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষা। এর বাইরে গতকাল হয়েছে ঢাকার সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষাও। আগামীকাল রবিবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা রয়েছে। অঘোষিত ধর্মঘটের কারণে এসব

পরীক্ষায় অংশ নেয়ারা পড়েছেন মারাত্মক দুর্ভোগে। যারা অংশ নিয়েছেন তারা মোকাবিলা করেছেন এক ধরনের দুর্ভোগ, আর যারা অংশ নিতে পারেননি তারা মোকাবিলা করেছেন আরেক ধরনের দুর্ভোগ। সব মিলিয়ে পরিবহন মালিকদের বেপরোয়া মনোভাবের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী, পরীক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবাই।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেছেন মালিক-শ্রমিকরা। সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনালে সারিবদ্ধভাবে বাসগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। পরিবহন শ্রমিকের সংখ্যাও কম। মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়লেও ভাড়া সমন্বয় করা হয়নি। ভাড়া বাড়ানো না হলে তারা রাস্তায় পরিবহন নামাবেন না।
কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, গত বুধবার রাত ১২টা থেকে হঠাৎ করেই প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ১৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। ৬৫ টাকা লিটারের ডিজেল বর্তমানে ৮০ টাকা। এতে বাস চালানো কষ্টসাধ্য। এই অবস্থায় সরকারকে বাসভাড়া বাড়াতে হবে। না হলে ডিজেলের দাম আগের অবস্থায় আনতে হবে। তাদের দাবি মানলেই ধর্মঘট তুলে নেয়া হবে। তা না হলে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলবে।
পরীক্ষার্থী এবং জনগণের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামীকাল রবিবার বিআরটিএর ভাড়া পুনঃনির্ধারণ কমিটির বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে বাস্তবভিত্তিক মূল্য সমন্বয়ের মাধ্যম জনগণের ওপর বাড়তি চাপ সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করা হবে। তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, রবিবারের সভার আগে ধর্মঘট প্রত্যাহারের কোনো সম্ভাবনা নেই। সব জেলা সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস বন্ধ করেছে। মালিকদের সমর্থন দেয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।
এদিকে পরিবহন সংকটে আটকে পড়ায় সাভারে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের স্নাতক শ্রেণির ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা। গতকাল সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ডে প্রবেশপত্র হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলে এই বিক্ষোভ। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোনো কেন্দ্র থেকে অপ্রীতিকর খবর আমরা পাইনি। আমরা প্রত্যাশা করি, পরীক্ষাগুলো সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
মেজবাউল হোসেন নামে এক পরীক্ষার্থী বলেন, গাড়ি না থাকায় রিকশায় আসতে হয়েছে। ফলে বিভিন্ন মোড়ে যানজটে পড়ে ১৫ মিনিট দেরিতে কেন্দ্রে প্রবেশ করেছি। আমার হলেও অনেক পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। জিন্নুরাইন নামে আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, গাইবান্ধা থেকে পরীক্ষা দিতে ঢাকায় এসেছি। ধর্মঘটের আগেই রওনা হওয়ায় সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছাই। কিন্তু এখন বাড়িতে কীভাবে যাব? এমন ভোগান্তির কোনো মানেই হয় না। ভর্তি পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হলেও পরীক্ষার্থী হাবিবা আক্তার ঢাকা কলেজে কেন্দ্রে পৌঁছেন সোয়া ১০টায়। মিরপুর ১০ নম্বর সেকশন থেকে তাকে সাড়ে সাত কিলোমিটার পথ পেরিয়ে আসতে হয়েছে রিকশায় করে। হন্তদন্ত হয়ে পরীক্ষার হলে ঢোকার পথেই বললেন, সকাল সাড়ে ৮টায় বাসা থেকে বের হয়েও যথাসময়ে পৌঁছাতে পারলাম না। দাঁড়িয়ে থেকে সিএনজি পেলাম না। হঠাৎ বাস বন্ধ করে এ রকম হয়রানির মানে হয় না। গাজীপুরের নুসরাত জাহানকে এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ কেন্দ্রে আসতে হয়েছে অটোরিকশা ভাড়া করে। চোখেমুখে ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, অনেক টাকা খরচ করে আসতে হলো। সবাই তো ঢাকায় থাকে না। আমার পরিচিত কয়েকজন পরীক্ষা দিতেই আসেনি। ফরিদুর রহমান নামের আরেক পরীক্ষার্থী জানান, আশুলিয়া থেকে মিরপুরে পৌঁছাতে কয়েক দফা গাড়ি বদলানোর পর কিছুটা পথ তাকে হাঁটতেও হয়েছে। এভাবে পরীক্ষা দেয়া যায়? এমন সময় বাস বন্ধের কথা জানাল যে কিছুই করার ছিল না। আগে থেকে জানালে হয়ত কেন্দ্রের আশপাশে কোথাও থাকার চেষ্টা করতাম।
তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে ভর্তি পরীক্ষা চালিয়ে নেয়া হবে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, এখন যদি পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয় সেটি আরেকটি ভোগান্তি নিয়ে আসবে। কারণ শিক্ষার্থীরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এই প্রস্তুতি একটা জাতিকে উপরের দিকে নেয়। এমন প্রতিকূলতা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করেই সামনের দিকে যেতে হবে। এছাড়া এই ধর্মঘট তেমন একটা প্রভাব ফেলেনি।
উল্লেখ্য, আজ শনিবার সাত কলেজের বিজ্ঞান ইউনিট এবং ১৩ নভেম্বর (সোমবার) কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়