ভিসি এয়ার মার্শাল নজরুল : ওবিই হচ্ছে জ্ঞানগর্ভ ও চিন্তা উদ্দীপক কর্মশালা

আগের সংবাদ

টানা ৪ জয়ে সেমিতে পাকিস্তান

পরের সংবাদ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : আত্মসমর্পণকারীদের মামলা নিষ্পত্তি করা হবে

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, মোংলা (রামপাল) থেকে : ওয়াদা করেছিলাম, খুন ও ধর্ষণ ছাড়া অন্যান্য মামলার নিষ্পত্তির বিষয়গুলো আমরা দেখব। আবারো পুনরাবৃত্তি করছি, মামলা নিষ্পত্তি করা হবে। আপনারা বলেছেন, যা অনুদান পাচ্ছেন তার বেশির ভাগ মামলায় খরচ হয়ে যাচ্ছে প্রক্রিয়ার ধীর গতির কারণে। হয়তো একটু দেরি হচ্ছে। আবারো বলছি, মামলার নিষ্পত্তির বিষয়ে কাজ হচ্ছে। দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবসের ৩য় বর্ষপূর্তি ও আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। গতকাল সোমবার বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে বর্ষপূর্তি ও আত্মসমর্পণকৃতদের পুনর্বাসন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়েছে। তিনি আপনাদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন। আপনাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি তার চিন্তায় রয়েছে। তবে শুনতে পাচ্ছি, অনেকেই আবার আগের পথে ফিরতে চাইছেন। দয়া করে যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তারা এমন চিন্তা করবেন না। কখনো ভাববেন না, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুর্বল। তারা সব খবর রাখেন। যারা আবার চিন্তা করবেন ফেরার তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোমুখি হতে হবে। মনে করবেন না, আপনাদের ভুলে গেছি। সবাই মিলেমিশে থাকবেন।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন কিছুদিন আগে পূজাকে কেন্দ্র করে গুজব তৈরি করে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করতে চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে তা আমরা মোকাবিলা করেছি। যারা এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছেন তাদের আশার গুড়ে বালি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন র‌্যাবের অধীনে নিরাপদ রাখতে একটি স্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করতে চাইছি। চাইলেই যেন কেউ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।
জলদস্যু আত্মসমর্পণে সাংবাদিক মহসিনুল হাকিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের ৪০ বছরের ইতিহাসে সুন্দরবনকে অশান্ত করা হয়েছে। তবে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় এ বন দস্যুমুক্ত হয়েছে। এ প্রক্রিয়া ভুণ্ডলের চেষ্টা হয়েছে। একদিন হয়তো এসব বিষয় নিয়ে একটি বই লিখব। তবে মানুষ ভুলে যায় তাই, একসময় সুন্দর বনের দুঃখবৃত্তিও হয়তো ভুলে যাবে। এ কারণে আমরা একটি ছবি বানিয়েছি অপারেশন সুন্দরবন। আমি র‌্যাব ডিজিকে অনুরোধ করব ছবিটি মুক্তির ব্যবস্থা নিতে।
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য বিপর্যয়ের পেছনে সমন্বয়হীনতার বিষয়ে ইংগিত করে তিনি বলেন, একটি জাতীয় পত্রিকায় দেখলাম, লেখা হয়েছে বনে বিষ দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। পুলিশ কিছু করছে না। কিন্তু বনে এমন পন্থায় মাছ শিকারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া আমার কাজ না। আসলে আমাদের পানি দেখেন একজন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ দেখেন আরেকজন। আবার বন বিভাগও আলাদা। এ বিষয়গুলো দেখার প্রয়োজন রয়েছে। পুলিশপ্রধান বলেন, দস্যুমুক্ত বন ধরে রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই পরিকল্পনা ছিল সুন্দরবনে ৪টি ক্যাম্প করার। যদিও দুটির বেশি করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া আতœসমর্পণকারীদের মধ্যে যারা খুন ও ধর্ষণ মামলার আসামি, তাদের ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। বাকিদের মামলা নিষ্পত্তিতে আমরা সহায়তা করব।
স্থানীয়দের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যারা দস্যুতার পথ থেকে ফিরে এসেছেন তাদের বুকে টেনে নিন। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে সহায়তা করুন।
র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে সে বিষয়ে এখানকার বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন ও পুলিশসুপারদের সঙ্গে কিছুদিন আগেও আলোচনা করেছি। হত্যা, ধর্ষণ ছাড়া অন্য সব মামলা প্রত্যাহারের জন্য আলোচনা করেছি। পিপিদের নিয়েও বসা হয়েছে। এখান থেকে বেশ কিছু মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গিয়েছে। যেসব মামলা আমরা নিতে পারিনি সেগুলো জেলা কমিটির কাছে গিয়েছে। সেখান থেকে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় যাবে। এছাড়া অন্য মামলাগুলো যাতে দ্রুতগতিতে নিষ্পত্তি হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের সঙ্গে না থেকে যারা বিপথে যেতে চাইবে, তাতের বিরুদ্ধে থাকা কোনো মামলার নিষ্পত্তি করা হবে না, উল্টো তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
র‌্য?াব ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩০ এর এমপি গেøারিয়া ঝর্না সরকার, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এমপি মো. শামসুল হক টুকু, খুলনা-২ আসনের এমপি সেখ সালাহউদ্দিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এমপি মো. হাবিবুর রহমান, এমপি পীর ফজলুর রহমান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন।
এর আগে আত্মসমর্পণকারী দস্যুদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১০২টি ঘর, ৯০টি মুদিদোকান (মালামালসহ), ১২টি জাল ও মাছ ধরার নৌকা, আটটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ২২৮টি গবাদিপশু হস্তান্তর করেন।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে উপকূলীয় অধিবাসীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবন ও জীবিকা। তবে জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের আগে তাদের বড় আতঙ্ক ছিল জলদস্যু ও বন দস্যুদের উৎপাত। ওই বছর র‌্যাবের কাছে সর্বমোট ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় ৪৬২টি অস্ত্র, ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দেন জলদস্যুরা। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত সুন্দরবন’ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই হিসাবে আজ ‘দস্যুমুক্ত সুন্দরবন’র তৃতীয় বর্ষপূর্তি। প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা, দিকনির্দেশনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও র‌্যাবের কর্মতৎপরতায় দস্যুমুক্ত হয় সুন্দরবন। এ সাফল্য অর্জনে র‌্যাব পেয়েছে দেশবাসীর আকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়