কাগজ ডেস্ক : ভারত, নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তানকে হারানোর পর গতকাল নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে নামিবিয়াকে হারিয়েছে পাকিস্তান। আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচে বাবর আজমরা হেসেখেলে ৪৫ রানে হারায় নামিবিয়াকে। এ জয়ের সুবাদে টানা চার ম্যাচ জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান। ৭ নভেম্বর শিরোপাপ্রত্যাশী ইমরান-আকরামদের উত্তরসূরিরা নিজেদের শেষ ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে মোকাবিলা করবে। এ ম্যাচে জয় পেলে গ্রæপ-২ থেকে সেরা হবে পাকিস্তান। সেই ক্ষেত্রে গ্রæপ-১ থেকে যারা রানার্সআপ হবে, সেমিফাইনালে তাদের বিপক্ষে খেলবে হাফিজ-রিজওয়ানরা। গতকাল পাকিস্তানের ১৮৯ রানের জবাবে খেলতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৪৪ রান সংগ্রহ করে নামিবিয়া। ৫০ বলে ৭৯ রানের ইনিংস খেলায় ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। অন্যদিকে নামিবিয়ার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে স্টিফেন বার্ড ২৯ বলে ২৯, ক্রেইগ উইলিয়ামস ৩৭ বলে ৪০ এবং ডেভিড ভিসা ৩১ বলে ৪৩ রান করেন।
চলতি আসরে দুর্দান্ত খেলছে পাকিস্তান। বিশ^কাপে দুই হট ফেভারিট ভারত ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে এখন তারাই আসরের বড় পরাশক্তি। গতকাল আবুধাবিতে নামিবিয়াকে ১৯০ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুড়ে দেয় পাকিস্তান। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রান তোলেন বাবর আজমরা। মোহাম্মদ রিজওয়ান ৫০ বলে ৭৯ এবং মোহাম্মদ হাফিজ ১৬ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন। নামিবিয়ার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ডেবিড ভিসা ৩০ রানের বিনিময়ে তুলে নেন বাবর আজমের উইকেটটি।
এর আগে টসে জিতে শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্যাট করতে নেমে নামিবিয়ার বল যেন ঠিকঠাক ব্যাটে মেলাতে পারছিলেন না বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই রুবেন ট্রাম্ফলম্যানকে মেইডেন দিয়ে বসেন রিজওয়ান। উইকেট বিলিয়ে না দিলেও দুই ওপেনার পাওয়ার প্লেতে মাত্র ২৯ রান তুলতে সক্ষম হন। তবে হাত খুলে খেলার সুযোগ যেন পারছিলেন না তারা। রিজওয়ানতো রীতিমতো টেস্ট মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন। দুজনে অর্ধশত রানের জুটি গড়তে খেলেন ৫৫ বল। যা টি-টোয়েন্টির সঙ্গে বড়ই বেমানান। ৯.১ ওভার শেষে বিনা উইকেটে দলীয় রান তখন ৫১। এরপরই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন রিজওয়ান-বাবর। পাক অধিনায়ক ৩৯ বলে ৫ বাউন্ডারির সাহায্য চলতি বিশ^কাপে তুলে নেন তৃতীয় অর্ধশতক। বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন ভারত ম্যাচে ৭৯ রানে অপরাজিত থাকা রিজওয়ানও। দুই ওপেনারের ব্যাটে ভর করে ১৩.১ ওভারে ১০০ রানের ঘরে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। উড়তে থাকা বাবর আজমকে শেষ পর্যন্ত নিজের শিকার বানিয়ে দলকে প্রথম সফলতা এনে দেন ডেভিড

ভিসা। বাবর ৪৯ বলে ৭ বাউন্ডারির সাহায্য ৭০ রান তুলে বিদায় নেন। এর আগে ভারতের বিপক্ষে ৫২ বলে ৬৮, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪৭ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
পরের ওভারে এসে ফখর জামানকে সাজঘরে ফেরান জেন ফ্রাইলিঙ্ক। ফখর ৫ বলে ৫ রান করে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ বন্দি হয়ে মাঠ ছাড়েন। তবে অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে নামিবিয়ার পরীক্ষা ভালোভাবেই নিচ্ছিলেন রিজওয়ান। তৃতীয় উইকেটে ব্যাটিংয়ে নেমে তাÐব চালাতে থাকেন মোহাম্মদ হাফিজও। তিনি ১৬ বলে ৫ বাউন্ডারির সাহায্য ৩২ রানে অপরাজিত ছিলেন। রিজওয়ান ৪২ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ৩ ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে বিশ^কাপে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন। ফিফটি তুলে ইনিংসের শেষ ওভারে তাÐব চালাতে থাকেন রিজওয়ান। জোনাথন স্মিটের ওভারে ২৪ রান তুলে নেন তিনি। ৫০ বলে ৮ বাউন্ডারি ও ৪ ওভার বাউন্ডারিতে ৭৯ রানে অপরাজিত থাকেন রিজওয়ান। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ওভার শেষে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রান তুলে নেয় পাকিস্তান। নামিবিয়ার বোলারদের মধ্যে ফ্রাইলিঙ্ক ৪ ওভারে ৩১ রানের বিনিময়ে ১ উইকেট তুলে নেন। আর ডেভিড ভিসা নিজের স্পেল পূর্ণ করে চলতি বিশ^কাপ আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাফল্য পেয়েছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী ভারতকে হারানো এবং সিরিজ নিয়ে টালবাহনা করা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় তুলে প্রতিশোধ নেয়া। সে মিশনে যাত্রা করে প্রথমে ভারতকে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে পরাজিত করে। যেটি এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয় পাকিস্তানের। তাছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ওডিআই বিশ্বকাপে এটাই ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয় পাকিস্তানের। এরপর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারায় পাকিস্তান। এই গ্রæপের যে দুটি দল সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল, সেই দুটি দলকে পরাস্ত করেছে তারা। তৃতীয় ম্যাচেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে তারা জয় তুলে নিয়ে এখন আসরে শিরোপা জয়ের সবচেয়ে সম্ভাবনাময়ী দল।