কাগজ ডেস্ক : কোভিড মহামারি শুরুর পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে দ্রুত সাড়া দিয়েছিল, মানবজাতির সামনে অস্তিত্ব সংকটের হুমকি তৈরি করা জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ মোকাবিলায় একই রকম উদ্যোগী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গø্যাসগো শহরে জলবায়ু সম্মেলনের প্রাক্কালে গেøাবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিক ভারকুইজেনের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা এক নিবন্ধে তিনি বলেন, জলবায়ু সংকট মেটাতে এই বিশ্বকে আরো বড় পরিসরে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
নিউজউইকে প্রকাশিত ওই নিবন্ধে বলা হয়, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) দেশগুলোকে আরো বেশি তহবিল জোগানো হলে জলবায়ু ঝুঁকি থেকে তারা জলবায়ু সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। এটা কেবল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা ৪৮ দেশ নয়, হুমকিতে থাকা সব দেশের জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা ৪৮ দেশের জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি। ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে প্রশমন ও অভিযোজনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য একটি তহবিল গড়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর সেখানে ১০০ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়ার প্রতিশ্রæতি দেন। যদিও সেই প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। শেখ হাসিনা ও প্যাট্রিক ভারকুইজেন তাদের নিবন্ধে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সংকট। তবে সব দেশে এর প্রভাব সমান নয়। চার মহাদেশের ৪৮ দেশের জন্য এটা ¯্রফে অস্তিত্বের সংকট, এর মধ্যে কোনো অত্যুক্তি নেই।
সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ভানুয়াতু, মালদ্বীপ আর মার্শাল আইল্যান্ডের মতো দ্বীপরাষ্ট্রগুলো। ১৭ কোটি মানুষের আবাসভূমি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা লবণাক্ততার কবলে পড়ে বন্ধ্যা ভূমিতে পরিণত হওয়ার

হুমকিতে রয়েছে। তাপদাহ আর খরা মধ্যপ্রাচের অনেক এলাকাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে। সেখানে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার বিশ্বের গড়ের প্রায় দ্বিগুণ। এ পরিপ্রেক্ষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের গতি কমানো ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের দেশগুলোর জন্য এখনই জরুরি, দেরি করার সময় আর নেই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাবে বিশ্বের অর্থনীতিকে পরিবেশবান্ধব করতে হলে আগামী এক দশকে ৬-১০ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। অথচ সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর বেশির ভাগই স্বল্পোন্নত বা নি¤œ মধ্য আয়ের দেশ, খুব বেশি হলে মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশ।
শিল্পায়ন ও জীবাশ্ম জ্বালানির অতি ব্যবহারের ফলে বায়ুমণ্ডলে বাড়ছে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ, তাতে বেড়ে যাচ্ছে বিশ্বের তাপমাত্রা। ঊনিশ শতকের তুলনায় পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা এখন ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিপর্যয় এড়াতে হলে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির গতি কমিয়ে আনতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে, যেন ২১০০ সাল পর্যন্ত সময়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাক শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়ে। সেজন্য কার্বন গ্যাস নির্গমন কমাতে হবে ব্যাপক মাত্রায়। তা করতে গেলে তেল-গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে ব্যবহার করতে হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। আর জ্বালানি ব্যবস্থার এই রূপান্তরের জন্য প্রচুর অর্থ দরকার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর। গেøাবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিক ভারকুইজেন মন্তব্য করেন, জলবায়ু সংকটে সুবিচার নিশ্চিত করতেই উন্নত দেশগুলোকে ওই অর্থ জোগাতে হবে। নিবন্ধে বলা হয়, ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে এই সুরক্ষা দিতে না পারলে বিশ্বের কার্বন নির্গমনের পরিমাণ কমিয়ে আনার চেষ্টায় সাফল্য আসবে না।
শেখ হাসিনা ও প্যাট্রিক ভারকুইজেন লিখেন, লক্ষ্য পূরণ করতে হলে দরকার তহবিল। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু তহবিল হিসেবে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়ার যে প্রতিশ্রæতি জাতিসংঘে দেয়া হয়েছিল, তা পূরণ করা হয়নি, যা নিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো উদ্বিগ্ন। এই ১০০ বিলিয়ন ডলারের অর্ধেক, অর্থাৎ ৫০ বিলিয়ন ডলার প্রতি বছর অভিযোজনের জন্য বরাদ্দের ওপর জোর দেয়া হয় নিবন্ধে, যাতে ওই অর্থ ব্যবহার করে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো ‘জলবায়ু সমৃদ্ধির’ পথে এগিয়ে যেতে পারে। এতে বলা হয়, পূর্বাভাস ব্যবস্থা, জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো, শুষ্ক এলাকায় চাষাবাদ, শ্বাসমূলীয় বনের সুরক্ষা এবং পানি ব্যবস্থাপনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা গেলে তা ৭.১ ট্রিলিয়ন ডলারের সুফল বয়ে আনতে পারে। শেখ হাসিনা ও প্যাট্রিক ভারকুইজেন বলেন, বিপদের মুখে এক জোট থাকলে কিনা করা সম্ভব। টিকে থাকতে হলে সবাইকে একসঙ্গে উঠে দাঁড়াতে হবে।