ভিসি এয়ার মার্শাল নজরুল : ওবিই হচ্ছে জ্ঞানগর্ভ ও চিন্তা উদ্দীপক কর্মশালা

আগের সংবাদ

টানা ৪ জয়ে সেমিতে পাকিস্তান

পরের সংবাদ

তৃণমূলে সংঘাত থামছেই না : সংঘর্ষে জড়িতদের তালিকা করছে আ.লীগ, অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে এক মাসে নিহত ৮, নির্বাচনী সংঘর্ষে ৩৮ নিহত

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলছে। মাঠে নেই বিএনপি জোট। পুরো মাঠ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে। কেন্দ্র থেকে দেয়া হচ্ছে দলের মনোনয়ন। তারপরও দলটিতে বিদ্রোহ থামছে না কোনোভাবেই। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী হচ্ছেন একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। যদিও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, নৌকার বিরুদ্ধে যারাই প্রার্থী হবে- তাদের বহিষ্কার করা হবে। ভবিষ্যতে বিদ্রোহীরা যেন আর কোনো দিন নৌকা প্রতীক না পায়, সে ব্যবস্থাও নেয়া হবে, বর্তমানে সেটিও করা হচ্ছে। এরপরও কোনোভাবেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না বিদ্রোহী প্রার্থীর। শুধু বিদ্রোহী প্রার্থীই নয়, নির্বাচনী মাঠে নানা ইস্যুতে চলছে সংঘাত-সহিংসতা। প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে মারমুখী আচরণে। ফলে চলতি বছরেই নির্বাচনী সহিংসতায় মারা গেছে ৩৮ জন। আর আহত হয়েছেন ২ হাজারের বেশি নেতাকর্মী ও সমর্থক। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। অভিযোগ আছে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদত দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা। এছাড়া বিদ্রোহী হলেও দল থেকে সেরকম কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ায় আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। আর দলের হাইকমান্ড থেকে বলা হচ্ছে, তৃণমূলে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িতদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
চলতি বছরে প্রথম ধাপে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই ভাগে। প্রথমে ২০৪টি নির্বাচন হয়েছে ২১ জুন আর ১৬০টি নির্বাচন হয়েছে ২০ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৬টি ইউপিতে ১১ নভেম্বর, তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন হবে ২৮ নভেম্বর। সেই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে ২০টির মতো পৌরসভা নির্বাচনও। চতুর্থ ধাপের তফসিল হতে পারে চলতি সপ্তাহের শেষ অথবা আগামী সপ্তাহের শুরুতেই। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। তবে স্থানীয় সাংসদ ও জেলা নেতাদের ইচ্ছায় শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে নির্বাচন উন্মুক্ত করা হয়েছে। ডিসেম্বরেই সব ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলার ভোটে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে এ পর্যন্ত সংঘর্ষ হয়েছে ১৭৭টি। এতে নিহত হয়েছেন ৩৮ নেতাকর্মী। এখনো নিজেদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এমনকি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটছেই। দিন দিন ‘অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী সহিংসতা’র শঙ্কা আরো বাড়ছে।
নির্বাচনী সহিংসতায় গত বৃহস্পতিবার নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার কাচারিকান্দি গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন সাদির মিয়া ও হিরণ নামের দুই ব্যক্তি। আহত হয়েছেন ৩০ জন। ১৫ অক্টোবর মাগুরা সদর উপজেলার জগদল ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছেন চারজন। তারা হলেন- সবুর মোল্যা, কবির হোসেন, রহমান মোল্যা ও ইমরান। ১৭ অক্টোবর রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার সদর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নেথোয়াই মারমাকে নিজ বাসায় গুলি করে হত্যা করে একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত। ২৭ অক্টোবর

ঢাকার ধামরাইয়ে চার ইউনিয়নে গুলি ছোড়া, মারধর ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বালিয়া ইউনিয়নে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজনের হাত ভেঙে যায়। সোমভাগ ইউনিয়নে মারধরের শিকার হন প্রার্থীসহ চারজন। গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নে পোস্টার লাগাতে গিয়ে মারধরের শিকার হন এক জন। ২৩ অক্টোবর ফরিদপুরের সালথার যদুনন্দী ইউনিয়নে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মারিজ সিকদার নামের একজন নিহত হন, আহত হন ২০ জন। ২৪ অক্টোবর সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হন আলাল নামের একজন। এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভোটের দিন নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে একজন নিহত হন। একই সময়ে কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নে সহিংসতায় নিহত হন আরেকজন। আহত হয়েছেন ১০ জন। বরিশালের গৌরনদীতে নিহত হয়েছেন দুইজন। বুধবার রাতে খুলনার ডুমুরিয়ার সাহস ইউনিয়নসহ কয়েকটি স্থানে সহিংসতা ঘটে। আহত হন পাঁচজন। পাবনার সুজানগরে বৃহস্পতিবার রাতে হাটখালী ইউনিয়নের বারভাগিয়া গ্রামে সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হন। বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজারের চকরিয়ায় বিএমচর ইউনিয়নে দুই প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একই সময়ে মাদারীপুরের কালকিনির আলীনগরে চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে হামলা হয়। গত শুক্রবার পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া ইউনিয়নে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংঘর্ষে আহত হন ১০ জন। এদিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, এক সময় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগকে দলীয় কার্যালয় করতে ৫ শতাংশ জমি দিয়েছেন। এবার তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেকেই তার পক্ষে-বিপক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছে। এ নিয়ে ভাকুর্তার দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। যে কোনো সময় সেখানে বড় ধরনের সংঘর্ষ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ।
এসব বিষয়ে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে যারা সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন, নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছেন তাদের সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবিরোধী তৎপরতা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। অন্যথায় সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং তাদের মদতদাতা, উসকানিদাতা নেতা ও জনপ্রতিনিধিরাও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙের অভিযোগে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার সম্মুখীন হবেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং তাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে দলীয় প্রধানের নির্দেশে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। অপকর্ম করলে কেউ রেহাই পাবে না- শাস্তি তাদের পেতেই হবে। ছলে-বলে কৌশলে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় কেউ নির্বাচিত হলে শৃঙ্খলাবিরোধী অপকর্ম বলে গণ্য করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নানা ধরনের সামাজিক ইকুয়েশন থাকে। সেক্ষেত্রে তৃণমূলে প্রার্থীদের মধ্যে কিছুটা গোলমাল-গোলযোগ সব সময় হয়ে থাকে। তবে এসব যে দলীয় প্রতীকের কারণে হচ্ছে, তা নয়। এখানে যার যার অবস্থান থেকে আঞ্চলিকতার বিষয় থাকে। নানা ইস্যু কাজ করে। রাজনীতির বাইরেও গিয়ে এসব গোলমাল হয়ে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ আছে। কেউ যেন গোলমাল বা সংঘাত সৃষ্টি না করে- দল হিসেবে আমরা সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে আসছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়