‘ভীষণ এক্সাইটেড ও নার্ভাস’

আগের সংবাদ

নির্বাচন ঘিরে বারবার নির্যাতন : ইস্যু যাই হোক হামলার লক্ষ্যবস্তু ‘সংখ্যালঘু’, স্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘ধর্ম’

পরের সংবাদ

সম্পাদক পরিষদের আলোচনা সভায় বক্তারা : স্বাধীন সাংবাদিকতায় বড় বাধা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নামে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। সাংবাদিকতার বিকাশের ক্ষেত্রে বিজ্ঞ আদালতের কাছে বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের কাছে তিনি অনুরোধ রেখে বলেন, আপনারা দয়া করে একটু দেখুন, কিছু কিছু আইন আছে সেগুলো কীভাবে প্রয়োগ হচ্ছে। এজন্য স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বাধা তৈরি করে এমন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানহানির মামলার আইনসহ সব আইন সংশোধনের দাবি জানান তিনি। গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘৫০ বছরের বাংলাদেশ, গণমাধ্যমের অর্জন ও আগামীর চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মাহফুজ আনাম বলেন, আইনে স্পষ্ট আছে যে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেবল একটি মামলাই হতে পারে। একমাত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মামলাটি করতে পারেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হচ্ছে। বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এটা কী আইন অমান্য হলো না! সাধারণ নাগরিক ও সাংবাদিকদের রক্ষা করার দায়িত্ব কী আপনাদের নয়। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন স্বাধীন সাংবাদিকতায় বড় বাধা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কতটুকু সাইবার ক্রাইম আপনারা এই আইন দিয়ে প্রতিহত করতে পেরেছেন? সাম্প্রদায়িকতার বিকট বীভৎস পরিণতি সাইবার স্পেসে হচ্ছে। আপনারা তো থামাতে পারেননি। কিন্তু এই আইন যত্রতত্রভাবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে। তাহলে এই আইন কি সাইবার সিকিউরিটি দিচ্ছে, না কি সাংবাদিকতাকে প্রতিহত করছে? উপনিবেশিক আমলে প্রণীত অফিশিয়াল সিক্রেটস আইন বাতিলেরও দাবি জানান তিনি।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীস্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব সংবাদপত্রের নয়। মতপ্রকাশের জন্য কোনো সাংবাদিক আদালতে যাওয়া রাষ্ট্রে প্রত্যাশিত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংবাদপত্রগুলোর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষায় প্রেস কাউন্সিলকে সক্রিয় করে তুলতে হবে। সাংবাদিকতায় দলীয় রাজনীতির প্রভাবের বিষয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্যের অভাব দেখতে পাচ্ছি। অনেকটা রাজনৈতিক দলের মতোই বিভাজন। যে কারণে দাবি আদায়সহ সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না। সাংবাদিকতা কখনো যেন হলুদ রঙ ধারণ না করে কিংবা বিদ্বেষ যেন প্রকাশিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অনারারি অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী খান বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে কোনো বিভাজন থাকা উচিত নয়।

সাংবাদিকতা করতে এসে কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখা যাবে না। টিকে থাকারও একটা সংগ্রাম আছে। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। সবাই মিলে সত্যিকারের গণতন্ত্র তৈরি করতে হবে। তাহলেই সংবাদপত্র টিকে থাকবে। পরিষদের অন্যতম সদস্য নুরুল কবীর বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের সাংবাদিকতাকে লড়াই করে চলতে হয়েছে। ’৯০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমাদের সংবাদমাধ্যমে তুলনামূলক একটু ভালো সময় গেছে। সামনেও লড়াই-সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হবে।
সম্পাদক পরিষদের অন্যতম সিনিয়র সদস্য ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে, বর্তমানে মূল্যায়নের সময় এসেছে আমাদের গণমাধ্যম এখন কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। গণমাধ্যমের যাত্রা কোনো কালেও মসৃণ ছিল না। আমরা যখন গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করছি, তখন ঢাকা থেকে বের হচ্ছে ৫০২টি দৈনিক পত্রিকা, ৩৪৮টি সাপ্তাহিক পত্রিকা। সারা বাংলাদেশ থেকে বের হচ্ছে আরো ৭৭৭টি দৈনিক পত্রিকা। এ ছাড়া সরকারের কাছে ১০৭২০টির মতো অনলাইনের আবেদন জমা আছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা সাংবাদিকতার একটি নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অপব্যবহার দেখতে পাচ্ছি। বারবার আমরা এগুলো নিয়ে প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু সরকার আমাদের প্রতিবাদকে গুরুত্ব দেয়নি। একটি কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনব্যবস্থা যখন প্রবলভাবে দেশ শাসন করবে তখন গণমাধ্যম কিভাবে তার স্বাধীন চর্চা করবে? গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের প্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়ে শ্যামল দত্ত বলেন, অকার্যকর প্রতিষ্ঠান থাকার চেয়ে প্রতিষ্ঠান না থাকাই ভালো। এজন্য প্রেস কাউন্সিলসহ সাংবাদিকতার প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে।
সভায় সম্পাদক পরিষদ সদস্য ও সমকাল সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, বিশ্বজুড়েই সংবাদমাধ্যমের পথচলা কখনো কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, এখনো নেই। এই সময়ে গণমাধ্যমের সংখ্যা ও গুণগত সম্প্রসারণ হয়েছে সত্য, কিন্তু পেশাগত ঐক্যের স্বপ্ন ক্রমেই ফিকে হয়েছে। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকতার যে সুমহান ব্রত শত বছরের সংগ্রামের মধ্যদিয়ে গড়ে উঠেছিল, তাতেও চিড় ধরেছে।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক। সভার শুরুতে সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গোলাম সারওয়ারসহ প্রয়াত অন্য সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়