সম্প্রীতির জমিনে শকুনের চোখ

আগের সংবাদ

ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান এখন ‘মেটা’

পরের সংবাদ

১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ : সংকটের শেষ নেই শিল্প পুলিশে

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইমরান রহমান : দেশের অর্থনীতির উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও ছোট-বড় শিল্পকারখানার সংখ্যা। ক্রমবর্ধমান বিশাল এই শিল্প এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২০১০ সালে যাত্রা শুরু করে শিল্পাঞ্চল পুলিশ। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১১ বছরেও পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিটটি নানামুখী সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। জনবল ও যানবাহন সংকটের কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। ভাড়া ভবনেই চলছে প্রধান কার্যালয়সহ জোনগুলোর কার্যক্রম। আবাসন সংকটও চরম আকার ধারণ করেছে।
সূত্রমতে, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অতি প্রয়োজনীয় শিল্পাঞ্চল থানাও নেই। ফলে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ শিল্প সংক্রান্ত মামলা, গোয়েন্দা নজরদারি, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বছরের পর বছর ধরে ধুকতে হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখা এই সংস্থাকে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের এ ইউনিটকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে যাত্রা শুরু করে শিল্পাঞ্চল পুলিশ। বর্তমানে শিল্প পুলিশের জনবল ৩ হাজার ৮১০ জন। তার মধ্যে শিল্প পুলিশের সদর দপ্তরে ১২০, ঢাকায় ৭৩৫, গাজীপুরে ৭৩৫, চট্টগ্রামে ৭৩১, নারায়ণগঞ্জ ৭৩১, ময়মনসিংহে ৩৮০ ও খুলনায় ৩৭৮ জন।
শিল্পাঞ্চল পুলিশ সূত্র জানায়, বিদ্যমান জনবলের বাইরে অতিরিক্ত ১২ হাজারের মতো জনবল চাচ্ছে শিল্প পুলিশ। জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে শিল্প পুলিশের জোন সংখ্যা ৬টি। দেশের সব অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ইপিজেড, দেশি-বিদেশি ক্রেতার নিরাপত্তা, শ্রমিক অসন্তোষ মোকাবিলা করতে শিল্প পুলিশের নতুন ২৩টি জোন ও সাব-জোন গঠনের প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। ইপিজেড, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ শিল্পাঞ্চল ইউনিটের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা দিতে দেশের বড় জেলাগুলোকে মোট ১৭টি কেপিআই সাব-জোনে অন্তর্ভুক্ত করে শিল্প পুলিশের মাধ্যমে নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। ‘শিল্পাঞ্চলের মধ্যে শিল্পাঞ্চল থানা’ করার প্রস্তাব করা হলেও এসব বিষয় ঝুলে আছে।
শিল্পাঞ্চল পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে দেশে ৮৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ৩৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য শিল্পাঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তা দিতে শিল্পাঞ্চল পুলিশ আরো বর্ধিত আকারে দেশব্যাপী শিল্পাঞ্চল জোন, সার্কেল, থানা গঠন করা প্রয়োজন। শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা, দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তাদের নিরাপত্তা বিধানসহ শিল্প সংক্রান্ত মামলা, গোয়েন্দা নজরদারি, অপরাধ

নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান জনবল দিয়ে অনেকটা কষ্টসাধ্য। তাই বিদ্যমান জনবলের পাশাপাশি নতুনভাবে শিল্পাঞ্চল জোন গঠন এবং অবকাঠামো সংস্কারপূর্বক বিভিন্ন সাব-জোন গঠনসহ জনবল বাড়ানো দরকার।
সংস্থাটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শিল্প পুলিশের কার্যক্রমের আওতায় ৮১২৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ৪০ লাখ ৪১ হাজার ১৯৪ জন শ্রমিক; বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ ও বেপজাসহ মোট ৫১৫৯টি শ্রমিক সংগঠন এবং ৪ হাজার ৮৯৯ জন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত মালিক-শ্রমিকের মধ্যে বেতন-ভাতা, বোনাস, ছাঁটাইসহ বিভিন্ন কারণে সৃষ্ট ৬ হাজার ২৯৭টি শ্রমবিরোধ মীমাংসা করেছে শিল্প পুলিশ। চলতি বছরের আট মাসেই ৯৩৮টি বিরোধ মিটানো হয়েছে।
এদিকে ২০১০ সালে শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রতিষ্ঠা হলেও মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় ২০১৭ সালের ১৫ জুন থেকে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ৬টি জোনে আগের মুলতবী মামলা ও রুজুকৃত মামলাসহ মোট ২৫১টি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় শিল্প পুলিশ। এর মধ্যে ১২৪টি মামলা তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট (ফাইনাল রিপোর্টসহ) দিয়েছে। আর তদন্তাধীন মামলার সংখ্যা ১২৭টি। এই মামলাগুলো সংশ্লিষ্ট থানা থেকে শিল্প পুলিশের কাছে পাঠানো হয়। ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা, শিল্প সংক্রান্ত মামলা ও আইন প্রয়োগে প্রভাব পড়ছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, শিল্পাঞ্চলের মধ্যে শিল্পাঞ্চল থানা দরকার। ৩/৪টি থানা নিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের ন্যায় একটি সার্কেল, জোন করা প্রয়োজন। এতে নিরাপত্তা দেয়াসহ সব কাজ করতে শিল্প পুলিশের সুবিধা হবে। অন্যদিকে মালিক-শ্রমিকরা তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সম্পর্কিত অভিযোগ দূরে না গিয়ে শিল্পাঞ্চল থানায় করতে পারবেন। শিল্প পুলিশ থেকে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাঠালেও সেটি পুলিশ সদর দপ্তরে অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে পরিচিত শিল্প পুলিশের সদর দপ্তর পর্যন্ত ভাড়া ভবনে চলছে। ইউনিটটির সদস্যদের জন্য নেই নিজস্ব কোনো প্রশিক্ষণ মাঠও।
এত সংকটের পরও সব ঠিকঠাক দেখছেন সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সব ঠিকঠাকভাবেই চলছে। যখন যেটার প্রয়োজন হবে তখন সেটার প্রস্তাব অবশই করা হবে। এখন সাব-জোনে ভাগ হয়ে কাজ করছি। তবে জোন বাড়ানো দরকার। শিল্পাঞ্চল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসবও বাড়বে। ৩৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাড়লে সেখানে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। তখন অবশ্যই শিল্প পুলিশের জনবল, লজিস্টিকসহ সব সেটআপ পরিবর্তন হবে।
১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ : সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েই ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে শিল্প পুলিশ। ‘নিরাপত্তার সঙ্গে সমৃদ্ধির পথে’ স্লোগানকে সামনে রেখে আজ শনিবার আশুলিয়ার জোন অফিসে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বিশেষ অতিথি শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ন, শ্রম ও কর্মসংসস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুনুœজান সুফিয়ান, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের সঙ্গে শিল্প পুলিশের পার্থক্য হলো- এখানে আগাম গোয়েন্দা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়। কারণ শিল্পকারখানা নিয়ে কে কোথায় থেকে ষড়যন্ত্র করছে তা আগেভাগে জানতে হয়। তাহলে সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া যায়। শিল্পকারখানার ভেতরের পরিবেশ সম্পর্কে জানার জন্য একজন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। তার সঙ্গে বিভিন্ন পদমর্যাদার আরো জনবল রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়