সম্প্রীতির জমিনে শকুনের চোখ

আগের সংবাদ

ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান এখন ‘মেটা’

পরের সংবাদ

পাটুরিয়া ঘাটে দুর্ঘটনা : মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি চলাচল বন্ধ করুন

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৯, ২০২১ , ১১:৫৮ অপরাহ্ণ

একটি সহযোগী দৈনিকের খবরে প্রকাশ, মেয়াদোত্তীর্ণ ৯০ শতাংশ ফেরি দিয়েই চলছে নৌপথের যোগাযোগ। দেশের নৌপথে ৫৩টি ফেরি চলাচল করে। এর মধ্যে ৪৫টির বার্ষিক ফিটনেস সনদ নেই। ঝুঁকি নিয়েই চলছে ফেরিগুলো। গত এক বছরে পাঁচটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফিটসেনবিহীন ফেরিগুলো অবিলম্বে বন্ধ না করলে দুর্ঘটনা বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। গত বুধবার পাটুরিয়া ঘাটে তীরে এসে ডুবে যাওয়া রো রো ফেরি শাহ আমানতের বয়স অন্তত ৪২ বছর। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে চলাচল করা ১০টির ফেরির ছয়টিরই বয়স এমন। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ফেরিতে থাকা ১৭টি ট্রাকের মধ্যে দুটি কাভার্ড ভ্যান পন্টুনে নামতে সক্ষম হলেও বাকি ট্রাকগুলো ফেরির সঙ্গে পানিতে ডুবে যায়। উদ্ধার অভিযান এখনো চলমান। গত আগস্ট মাসের পদ্মা সেতুতে একাধিকবার ধাক্কার ঘটনায় আলোচনায় আসে দেশের ফেরি সার্ভিসের হালচাল। এবার তীরে এসে ফেরিডুবির ঘটনার পরও একই কথা আলোচিত হচ্ছে। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেই কিছু দিন আলোচনা হয়। এসব ঘটনা সংবাদমাধ্যমে বড় হেডলাইন ও টিভির স্ক্রিনজুড়ে প্রচার হয়। এমন ঘটনা আর দেখতে চাই না আমরা। নদীমাতৃক দেশে নৌযানই চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম আজো। দেশের মোট যাত্রী সংখ্যার ৩৫ শতাংশ নৌপথে চলাচল করে। মোট পণ্যের ৭০ ও তেলজাত দ্রব্যের ৯০ শতাংশ নৌপথে পরিবহন করা হয়। প্রতি বছর প্রায় ৯ কোটি মানুষ দেশের নৌপথে যাতায়াত করেন। যৌক্তিক কারণেই নৌপথ জনপ্রিয়, সহজলভ্য এবং আরামদায়ক ভ্রমণ মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত অথচ এ নৌপথ কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিয়মিত প্রাণহানিরও। প্রতি বছর এপ্রিল, মে, জুন ও অক্টোবরে নৌদুর্ঘটনার হার সবচেয়ে বেশি। যান চালনায় নিয়ম না মানা এবং অদক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে লঞ্চ বা ফেরি পরিচালনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্য পরিবহনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এবং যান্ত্রিক ত্রæটি এমন নানা কারণে নৌপথে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হলো নৌদুর্ঘটনার ফলে আজ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষের প্রাণের বিনিময়েও আমরা ভবিষ্যৎকে নিরাপদ করার কোনো শিক্ষা গ্রহণ করিনি। প্রতিটি দুর্ঘটনার পরই যথারীতি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, তদন্তের রিপোর্টও জমা হয়। কিন্তু সুপারিশমালার বাস্তবায়ন বা দায়ীদের শাস্তির নজির না থাকায় একই ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী লঞ্চ মালিক কিংবা মাস্টারদের বিরুদ্ধে মামলা হয় নৌআদালতে। বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ (আইএসও-১৯৭৬) অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষ দোষী ব্যক্তিদের পক্ষে শক্ত ব্যবস্থা নিতে পারে না। মামলাগুলো দীর্ঘদিন চলার পর নিষ্পত্তি হলেও দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে এমন নজির নেই। তাছাড়া দুর্ঘটনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সরাসরি নৌআদালতে মামলা করতে পারেন না। তাকে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে মামলা করতে হয়। নানা জটিলতার কারণে দায়ী কেউই শেষ পর্যন্ত শাস্তি পায় না। রো রো ফেরি শাহ আমানত দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করতে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে নৌপরিবহন সচিবের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আমরাও চাই সুষ্ঠু তদন্তে প্রকৃত বিষয় উঠে আসুক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়