সম্প্রীতির জমিনে শকুনের চোখ

আগের সংবাদ

ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান এখন ‘মেটা’

পরের সংবাদ

তিস্তার আকস্মিক বন্যায় ক্ষতি প্রায় ২০০ কোটি টাকা

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামরুল আহসান কল্লোল, নীলফামারী থেকে : ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি আকস্মিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা পাড়ের চর ও নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের ৮টি উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের ৩২ হাজার কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অসময়ে ভয়াবহ বন্যায় তিস্তা পাড়ের কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও অবকাঠামোগত প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করে ক্ষতির পরিমাণ ও তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার রুদ্রেশ্বর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্বাস আলী (৫৫) জানান, ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান ও ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছিলেন তিনি। আকস্মিক বন্যায় সব জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তার ৬০টি মুরগি ও হাঁস পানিতে ভেসে গেছে। ৩ বিঘা জমির পুকুরের সব মাছ পানিতে ভেসে গেছে। চারটি ঘরের একটি ঘর ভেসে গেছে পানিতে।
তিনি আরো বলেন, অসময়ের এই বন্যা ছিল ভয়াবহ। এ রকম বন্যা আমি দেখিনি। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এত বেশি ক্ষতি হয়েছে যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।
নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর প্রস্তুতকৃত ক্ষতির তালিকা থেকে জানা যায়, চার হাজার হেক্টর জমির আমন ধান, ভুট্টা, বাদাম, আলুসহ বিভিন্ন সবজি নষ্ট হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। ১ হাজার ৮০০টি পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি টাকা। ৩০০টি খামারের মুরগিসহ ৩ হাজার পরিবারের হাঁস-মুরগি পানিতে ভেসে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন স্থানে কালভার্ট-সেতু, সড়ক ও অবকাঠামো ভেঙে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৮০ কোটি টাকা এবং ১ হাজারের বেশি পরিবারের ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৪০ কোটি টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ১৯ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে উজানে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। পরদিন বুধবার সকাল থেকে তিস্তা পাড়ের চর, দ্বীপচর ও নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায়। শুক্রবার সকাল থেকে দুর্গত এলাকার পানি নামতে থাকলে ক্ষতির পরিমাণ দৃশ্যমান হয়।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নুর আলম (৫৮) বলেন, দহগ্রামে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। জমির ফসল, ঘরবাড়ি ও গবাদি পশুপাখি হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। ভারত থেকে ঢলের পানি প্রথমে সরাসরি দহগ্রামে এসে আঘাত হানে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো উপায় নেই।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার গতিয়াশ্যাম গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আউয়াল হোসেন (৬৪) জানান, এমনিতে তিস্তা নদীর ভাঙনে তারা নিঃস্ব। তার ওপর আকস্মিক বন্যায় তারা এখন সর্বস্বান্ত। ১০ বিঘা জমির বাদাম ও আলু নষ্ট হওয়ায় তিনি দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, বন্যাদুর্গতদের আপাতত নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতির পরিমাণের তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামিম আশরাফ বলেন, তিস্তা পাড়ের কৃষক পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে কী ধরনের সহয়তা দেবে, তা এখনো জানানো হয়নি।
লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খান জানান, অসময়ের বন্যায় সেতু-কালভার্ট ও সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামত করা হবে।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, বন্যাদুর্গতদের তাৎক্ষণিক খোঁজখবর নিয়ে নগদ অর্থসহ শুকনা খাদ্য, গোখাদ্য ও শিশুর খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। ক্ষতির তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়