সম্প্রীতির জমিনে শকুনের চোখ

আগের সংবাদ

ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান এখন ‘মেটা’

পরের সংবাদ

ইউপি চেয়ারম্যানকে ভিক্ষুকের উপহার

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, সাভার : সাভারে ষাটোর্ধ্ব এক নারী ভিক্ষুকের ভালোবাসার উপহার পেয়ে বাকরুদ্ধ ও আবেগে আপ্লুত হয়েছেন এক ইউপি চেয়ারম্যান। ভিক্ষুক ওই নারী তার জমানো টাকা দিয়ে ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ তেঁতুলঝোড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমরের জন্য কিনে এনেছেন মুরগি, নারিকেল ও দুধ। হঠাৎ করে ভিক্ষুকের কাছ থেকে এমন উপহার পেয়ে অপ্রস্তুত চেয়ারম্যান উপস্থিত লোকজনকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মানুষের জন্য ভালো কিছু করলে তার প্রতিদান দুনিয়ায়

পাওয়া যায়। আজকের ঘটনা তার প্রমাণ আপনারা সবাই বিপদে মানুষের পাশে থাকুন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর সমর তার হেমায়েতপুরের বাসার সামনে রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিষদের মেম্বার ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। হঠাৎ করেই ষাটোর্ধ্ব এক নারী হাতে একজোড়া মুরগি, একজোড়া নারিকেল ও বড় বোতল ভর্তি ছয় সের গরুর দুধ নিয়ে সেখানে হাজির হন। এলাকায় ভিক্ষুক হিসেবে তার পরিচিতি থাকায় উপস্থিত অনেকেই তাকে চিনতে পারেন। তার হাতে মুরগি, নারিকেল ও দুধ দেখে উপস্থিত লোকজন সেখানে যাওয়ার কারণ জানতে চান। সায়মুনা বেগম (৬৫) নামের ওই নারী তাদের বলেন, ‘চেয়ারম্যান করোনা আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ জানতে পেরে তিনি গ্রাম থেকে তার জন্য এসব কিনে নিয়ে এনেছেন। কাছ থেকে দেখে তাকে দোয়া করতে এসেছেন।’ সায়মুনার কথা শোনার পর সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আবেগ আপ্লুত চেয়ারম্যান চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। সায়মুনার বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়, ভাড়া থাকেন সাভারের হেমায়েতপুর দক্ষিণপাড়ায়।
সায়মুনা বেগম জানান, দুনিয়ায় তার আপন কেউ নেই। হাত পাতলে চেয়ারম্যান তাকে কখনো ফেরান না। তার মতো সব গরিব মানুষেই চেয়ারম্যানের সাহায্য পান। করোনার সময় লকডাউনে বাড়ির বাইরে বের হওয়া নিষেধ ছিল। তখন চেয়ারম্যান ডাল, ডাল, আটা, পেঁয়াজ, মরিচ, আদা, রসুন, মাছ, মাংস, সবজি কিনে মানুষের বাড়ি বাড়ি পাঠান। ঈদের আগে পাঠান সেমাই, দুধ, পোলাওয়ের চাল, শাড়ি, লুঙ্গি, জুতা। তিনি না থাকলে হাজার হাজার গরিব মানুষের অনেক কষ্ট হবে, মানুষের জন্য তাকে বাঁচতে হবে। ভিক্ষা করে জমানো টাকা দিয়ে তিনি তার জন্য এসব কিনে এনেছেন বলে জানান। সায়মুনা বলেন, চেয়ারম্যান বিয়ে করেননি। গরিব মানুষকে ভালোবাসা দিয়েই তার আনন্দ।
এ প্রসঙ্গে তেঁতুলঝোড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর গতকাল শুক্রবার বিকেলে বলেন, অসহায় ভিক্ষুক ওই নারী নিঃসন্তান, স্বামী নেই। বিভিন্ন সময় তিনি সাহায্যের জন্য আসলে সাধ্যমতো চেষ্টা করি। তিনি চেয়ারম্যানকে বাবা বলে সম্বোধন করেন জানিয়ে সময় বলেন, করোনাকালে তিনি সাধ্যমতো মানুষের পাশে ছিলেন। দেড়বছর সর্বস্ব দিয়ে মানুষের পাশে থাকার একপর্যায়ে তিনি নিজে করোনা আক্তান্ত হয়ে ঢাকার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন তার সুস্থতা কামনায় মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় প্রার্থনা হয়েছে। এতিম, অসহায়রাও তার জন্য রোজা রেখে দোয়া করেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে হাজার হাজার মানুষ বাড়িতে এসে আবেগে বিলাপ করেন। বৃদ্ধা সায়মুনা তাদেরই একজন। সমর বলেন, মুরগি, নারিকেল ও দুধ পেয়ে তিনি ওই নারীকে দুই হাজার টাকা দিতে চাইলেও তিনি নেননি, বলেছেন, আমি গ্রাম থেকে আপনার জন্য ভালোবেসে এসব এনেছি। টাকা দিলে আমাকে অপমান করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়