সম্প্রীতির জমিনে শকুনের চোখ

আগের সংবাদ

ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান এখন ‘মেটা’

পরের সংবাদ

অনুদানের সিনেমার কী অবস্থা

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সরকারি অনুদান পেয়েও সিনেমা নির্মাণ না করার অভিযোগ বহু পুরনো। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রথম চেক পাওয়ার ৯ মাসের মধ্যে অনুদানের সিনেমার শুটিংসহ যাবতীয় কাজ শেষ করে জমা দেয়ার কথা বলা থাকলেও অনেক নির্মাতাই নির্ধারিত সময়ে সিনেমার কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি। কেউ কেউ এখনো নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরুই করতে পারেননি। তবে অনুদান নীতিমালায়, চিত্রনাট্যের বিশেষ প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার চাইলে সময় বৃদ্ধি করতে পারে মর্মে উল্লেখ থাকার সুযোগ নিয়ে কোনো কোনো নির্মাতা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন। এদিকে প্রযোজক ও পরিচালকের দ্ব›দ্ব এবং অপেশাদার লোকদের অনুদান দেয়ার কারণে সিনেমা নির্মাণে বিলম্ব হচ্ছে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। আবার ৯ মাস একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণের জন্য যথেষ্ট সময় হতে পারে না বলেও মনে করেন কেউ কেউ।
২০১৯-২০ অর্থবছরে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তিনটি চলচ্চিত্র, শিশুতোষ দুটি চলচ্চিত্র, সাধারণ শাখায় ১১টি চলচ্চিত্রসহ মোট ১৬টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও নয়টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অনুদান ঘোষণা করা হয়। এসব সিনেমার জন্য বরাদ্দ হয় ৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অনুদান নীতিমালা অনুযায়ী, ২০১৯-২০ সালে অনুদান পাওয়া সব ছবির কাজই শেষ করে এরই মধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ার কথা। কিন্তু মন্ত্রণালয় এবং নির্মাতা ও প্রযোজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনুদান পাওয়া ১৬টি সিনেমার একটিও জমা পড়েনি। ‘টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা’ শিরোনামে চলচ্চিত্রের জন্য সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা অনুদান পান নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার। এই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে প্রযোজক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করছেন তিনি। কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেছেন মাসুম রেজা। চলতি অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সিনেমার শুটিং শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ‘কাজলরেখা’ সিনেমা নির্মাণের জন্য অনুদান পেয়েছেন নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম। তিনি সিনেমাটির নির্মাণকাজ এখনো শুরু করেননি। এই নির্মাতা বর্তমানে ‘গুণিন’ নামের একটি ওয়েব চলচ্চিত্রের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই নির্মাতা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘কাজলরেখা অনেক বড় একটা প্রজেক্ট। শুধু অনুদানের টাকায় এই সিনেমাটা করা সম্ভব হবে না। এর জন্য ইনভেস্টর খুঁজছেন তিনি।’
এদিকে প্রযোজকের সঙ্গে পরিচালকের দ্ব›েদ্বর কারণে ‘বিলডাকিনি’ সিনেমার কাজ শুরু করা যায়নি। সিনেমাটির প্রস্তাবিত নির্মাতা মঞ্জুরুল ইসলাম মেঘ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি প্রযোজক কর্তৃক প্রতারিত হওয়ায় সিনেমাটির কাজ আটকে আছে। সিনেমাটিতে প্রযোজক হিসেবে আমার নাম যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা দেননি।’ অন্যদিকে প্রযোজক আবদুল মমিন বলছেন, পরিচালক হিসেবে মেঘ অপেশাদার এবং অনভিজ্ঞ। যার জন্য সিনেমাটির পরিচালক থেকে মেঘকে বাদ দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার কথা ভাবছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ১০টি সিনেমার নির্মাণকাজ চলমান থাকলেও ৬টি সিনেমার শুটিংই শুরু হয়নি এখনো। সাধারণ শাখায় ভালোবাসার প্রীতিলতা, হৃদিতা, গাঙকুমারী, ছায়াবৃক্ষ, আশীর্বাদ, লেখক (নাম বদলে হয়েছে মুখোশ), ফিরে দেখা; মুক্তিযুদ্ধ শাখায় একটি না বলা গল্প এবং শিশুতোষ শাখায় মেঘ রোদ্দুর খেলা, রাসেলের জন্য অপেক্ষা সিনেমাগুলোর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ছায়াবৃক্ষ, আশীর্বাদ, মুখোশ, একটি না বলা গল্প, মেঘ রোদ্দুর খেলা, হৃদিতার প্রায় শতভাগ শুটিং শেষ বলেও জানা গেছে। কেউ কেউ ডাবিং-এর কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু এখনো শুটিংই শুরু হয়নি কাজল রেখা, ফুটবল ৭১, শ্যামাকাব্য, বিলডাকিনি, যোদ্ধা, টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা সিনেমাগুলোর।
পরিচালক এস এ হক অলিক ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মুক্তিযুদ্ধ শাখায় ‘যোদ্ধা’ নামে একটি সিনেমার জন্য অনুদান পেয়েছিলেন। ‘যোদ্ধা’ সিনেমাটির নির্মাণ সম্পন্ন না হলেও পরের বছরই ২০২০-২১ অর্থ বছরে তিনি ‘গলুই’ নামে আরেকটি সিনেমার জন্য অনুদান পান। বর্তমানে শাকিব খান ও পূজা চেরিকে নিয়ে ‘গলুই’ সিনেমার শুটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন এই নির্মাতা। অলিক গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির শীতের সময়টা ‘যোদ্ধা’ সিনেমার গল্পের জন্য দরকার। গত বছর ওই সময়ে করোনা সংক্রমণ থাকায় আমরা শুটিং করতে পারিনি। সবরকম প্রস্তুতি থাকার পর লকডাউনে পিছিয়ে যায় সিনেমার কাজ। এখন শীতের জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। জামালপুরে শাকিব খান ও পূজা চেরিকে নিয়ে এই নির্মাতা ‘গলুই’ সিনেমার শুটিং করছেন তিনি।
অন্যদিকে ‘শ্যামাকাব্য’ সিনেমার নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ করোনার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে শুটিং করতে পারেননি উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে এক বছর সময় বৃদ্ধি করেছেন। শিগগিরই সিনেমাটির শুটিং শুরু করবেন বলে জানা গেছে। শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘মেঘ রোদ্দুর খেলা’র শুটিং সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী ডিসেম্বরে সিনেমাটি মুক্তি পেতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়