কাগজ প্রতিবেদক : কুমিল্লাসহ দেশের ছয় জেলায় হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষ, বাসস্থান ও উপাসনালয়ের ওপর হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্ট জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের আগামী ২ মাসের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা দিতে স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। মামলার বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ছয় জেলা হলো- কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, রংপুর ও ফেনী। এ সংক্রান্ত একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
এর আগে গতকাল সকালে রিট আবেদনের ওপর শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, রিট আবেদনে হিন্দু স¤প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় রাষ্ট্রের ব্যর্থতা ও স্থানীয় প্রশাসনকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে। আমরা আবেদন থেকে এই শব্দগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানাই। কারণ হামলার ঘটনায় রাষ্ট্র বসে নেই। কুমিল্লা, রংপুরে অনেক দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ সময় বেঞ্চের জুনিয়র বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা বলেন, হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষ, বাসস্থান ও উপাসনালয়ে হামলার ঘটনায় পুলিশ অ্যাকশন নিয়েছে, মামলা হয়েছে, অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। রাষ্ট্র নিশ্চুপ বসে নেই। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এ অবস্থায় আমরা কি রাষ্ট্রকে দায়ী করতে পারি? পরে আদালত রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়াকে আবেদন সংশোধন করতে বলেন এবং আদেশের জন্য দুপুর আড়াইটায় সময় নির্ধারণ করে দেন।
গত ২৬ অক্টোবর সা¤প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া সব ধরনের উসকানিমূলক পোস্ট ও ভিডিও অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অনুপ কুমার সাহাসহ দুই আইনজীবীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের অন্য আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এ রিট আবেদন দায়ের করেন। রিটে সারাদেশে হিন্দু স¤প্রদায়ের ঘরবাড়ি, উপাসনালয় ও সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ীদের খুঁজে বের করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের আর্জি জানানো হয়। একইসঙ্গে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এতে হিন্দু স¤প্রদায়কে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ দোষী কর্মকর্তাদের আদালতে হাজির করার নির্দেশনাও চাওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, রংপুর, ফেনীর ডিসি-এসপিসহ ১৯ জনকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।