পাসপোর্ট জটিলতায় আটকে আছেন অর্ধলাখ প্রবাসী

আগের সংবাদ

পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ বাড়ছে

পরের সংবাদ

২৫ হাজার টাকা মুচলেকায় রফা : হবিগঞ্জের পাঁচ মণ্ডপে হামলায় হয়নি মামলা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ‘আর যদি হিন্দু বাড়িতে হামলার পাশাপাশি মন্দির বা পূজামণ্ডপে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে তাহলে অপরাধীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।’ গ্রাম্য সালিশে এমন দফারফার মাধ্যমে হবিগঞ্জের ৫ পূজামণ্ডপ ভাঙচুরের ঘটনার নিষ্পত্তি হয়েছে। ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে এহেন মোড়লিপনায় ‘সন্তুষ্ট’ পুলিশও। ফলে এই ৫ পূজামণ্ডপ হামলার

ঘটনায় হবিগঞ্জ সদর থানায় কোনো মামলা হয়নি, শুধু একটি জিডিতেই দায় সেরেছে পুলিশ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনার পর অষ্টমীর সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লোকড়া ইউনিয়নের ১নং পূজামণ্ডপ (যুগল রায়ের বাড়ি), ২নং দশভূজা সংঘ (বিশ্বম্বর রায়ের বাড়ি), ৩নং মহামায়া সংঘ (মাস্টার বাড়ি), নিজামপুর ইউনিয়নের এবদারপুরের উদয়ন সংঘ এবং ত্রিনয়নী সংঘের পূজামণ্ডপ ভাঙচুরের শিকার হয়। ওই রাতেই স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর নূর জাহিরের নেতৃত্বে আয়োজিত গ্রাম্যসালিশে ভবিষ্যতে হামলা হলে শাস্তি কী হবে- সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হলেও অষ্টমীর দিনে যে ৫টি পূজামণ্ডপ ভাঙচুর হয়েছিল কার্যত তার কোনো বিচার হয়নি। পরিস্থিতির চাপে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ও এমন দফারফা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে ভাঙচুর হওয়া পূজামণ্ডপের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কথাও বলতে চায়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপে হামলার পর এই প্রথম হবিগঞ্জে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে ঘটনার নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হয়েছে। এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই দিকই রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। পঞ্চায়েত প্রথার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান ইতিবাচক। আর নেতিবাচক হচ্ছে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হওয়া।
জানতে চাইলে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলক কুমার চন্দ ভোরের কাগজকে বলেন, অষ্টমীর রাতে ওই ঘটনার পর সেখানে সালিশ বসে। এতেই ভবিষ্যতে হামলা হলে অপরাধীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে-এমন মুচলেকার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান হয় বলে শুনেছি।
লোকড়া ইউনিয়ন পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল রায় বলেন, ওই সালিশে ভবিষ্যতে যাতে হামলা না হয় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানের ঘটনা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি। কেন হয়নি- সে বিষয়ে তিনি কথা বলতে চাননি।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন ভোরের কাগজকে বলেন, এর কোনো ইতিবাচক দিকই নেই। পুরোটাই নেতিবাচক। এর কারণ ব্যাখা করে তিনি বলেন, সেদিন যাদের ইন্ধনে লোকড়ার পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছিল বলে শুনেছি তারাই ওই সালিশের আয়োজনকারী। এই সালিশ মূলত ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা। হামলাকারীরা যেখানে আইনের শাসনই মানে না, সেখানে তারা কীভাবে মোড়লের শাসন মানবে। ২৫ হাজার টাকা মুচলেকার কথা বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে ঘটনা ঘটলে কে এই মুচলেকার ধার্য করা টাকা তুলবে? এই ঘটনায় পুলিশের উচিত ছিল নিজে থেকেই মামলা করা, কিন্তু পুলিশও নীরব। সবমিলিয়ে এসব ঘটনায় আক্রমণকারীরা আরো প্রশ্রয় পেয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ সদর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসি (মূল ওসি ছুটিতে) নাজমুল হক বলেন, হ্যাঁ ঘটনার পর একটি আপস মীমাংসা হয়েছে। এতে আমরা সন্তুষ্ট। এ কারণে কোনো মামলা হয়নি, শুধু পুলিশ একটি জিডি করেছে। ২৫ হাজার টাকার মুচলেকার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি অন্য প্রসঙ্গে গিয়ে বলেন, সালিশের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। হামলার দিনে আমরা সারারাত জেগে ডিউটি করেছি। কুমিল্লার ঘটনার পর হবিগঞ্জের পূজামণ্ডপে যে হামলা হয়েছে সেটিকে পরিকল্পিত বা বিচ্ছিন্ন না বলে কিছু লোকের উন্মাদনা বলা যায়। পরিস্থিতি এখন পুরো শান্ত বলেও দাবি এই পুলিশ পরিদর্শকের।
এদিকে অষ্টমীর সন্ধ্যায় হামলার পর হবিগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায় এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব কুমার রায় লোকড়ার তিনটি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। গতকাল চেষ্টা করেও শঙ্খ শুভ্র রায়ের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে বিপ্লব কুমার রায় ভোরের কাগজকে বলেন, সেদিন হামলার পরই আমরা মণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ভয়ার্ত চাহনি দেখতে পাই। আমরা নানাভাবে তাদের ভয় দূর করার চেষ্টা করি। এরপরই হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজন জানান, হামলার ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ গ্রামের মোড়লরা সালিশ করেছেন। ভবিষ্যতে হামলা হলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হবে বলা হলেও বর্তমানের ঘটনায় তারা ক্ষমাও চায়নি। তিনি বলেন, সালিশের পর পুলিশও নীরব হয়ে যায়। অথচ সরকারের নির্দেশনা রয়েছে, এমন ঘটনা ঘটলে পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করবে।
জানতে চাইলে লোকড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুর নূর জাহির পূজামণ্ডপ হামলার ঘটনায় সালিশের কথা স্বীকার করে বলেন, ছেলেরা যাতে ভবিষ্যতে কোনো হিন্দুবাড়ি কিংবা মন্দিরে হামলা না করে সেজন্য ২৫ হাজার টাকার মুচলেকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু এবারের পূজায় যে হামলা হলো, সে বিষয়ে কী বিচার হলো- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পূজামণ্ডপ ভাঙেনি, শুধু গেট ভেঙেছে। এমন কাজ যাতে আর না করে সে জন্যই তো সালিশ হলো। সালিশ না হলে পুলিশ তো গ্রামের বহু ছেলেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেত। এতে অশান্তি আরো বাড়ত। সালিশের মাধ্যমে আমরা অশান্তি থামিয়ে দিলাম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়